সিনেমার গানে ‘কুইন’ বলা হয় রুমানা মোর্শেদ ওরফে কনক চাঁপাকে। প্লে-ব্যাকের বাইরে আধুনিক গান, নজরুল সংগীত, লোকগীতি সহ প্রায় সবধরনের গানে তিনি সমান পারদর্শী। ৩২ বছর ধরে গানের ভুবনে সমান তালে কাজ করে যাচ্ছেন কনক চাঁপা। এ পর্যন্ত তিনি কয়েক হাজার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। গানের বাইরে কনক চাঁপা নিজেকে রাজনীতিতে জড়াচ্ছেন। সেজন্য আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে নমিনেশন ফরমও কিনেছেন। তার আসন সিরাজগঞ্জ-১।
দেশে ও দেশের বাইরে যারা কনক চাঁপার গান শোনেন, তাদের মনে প্রশ্ন; কেন কনক চাঁপা সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন! আর কেউই বা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বাসনা এলো রে তার মনে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত এই শিল্পী তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি সবকিছুর পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
কনক চাঁপা লিখেছেন, ছোটবেলা থেকেই তিনি তার মাকে সমাজ সেবায় নিয়োজিত থাকতে দেখেছেন। তার মায়ের মানবসেবা দেখে দেখে বড় হয়েছেন। দুই মুঠ ভাত থেকেও যে আরেকজনকে সহায়তা করা যায় নীরবে তা দেখে বিস্মিত হয়েছেন। মানুষের প্রতি ভালবাসা, পশুর প্রতি ভালবাসা, অসহায়ের পক্ষে কথা বলা এগুলো কনক চাঁপার মায়ের বাড়াবাড়ি রকমের অভ্যাস ছিল। তাঁর আদর্শেই বড় হবেন খুব স্বাভাবিক।
জনপ্রিয় এই সংগীত তারকা আরও লিখেছেন, ‘বড় হয়ে যখন পেশাদার শিল্পী হয়ে রুটিরুজি শুরু করেছি তখন থেকেই আমি অসহায়ের পাশে আছি। সমাজের সব অসংগতির বিরুদ্ধে আমার কঠোর অবস্থান। একজন সফল শিল্পী হয়েও আমি কখনোই আমার বিত্তকে মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তে পরিবর্তন করিনি। একথা আমার সাথে যারা চলাফেরা করেন তারা সবাই একবাক্যে বলবেন।’
আমার মানসিক শক্তি, শারীরিক শক্তি সবই বর্তমান। আমি একজন সাহসী মানুষ বটে। আর মানুষের পাশে বৃহৎ আকারে দাঁড়াতে বড় একটা প্ল্যাটফর্ম দরকার। আমার অর্থনৈতিক শক্তি দরকার কিন্তু সে অর্থ আমার জন্য না। দুই মুঠ ডালভাত খাওয়ার জন্য বাকী সারাজীবনের অর্থ কড়ি আলহামদুলিল্লাহ আমার আছে এবং আমাকে যারা অপছন্দ করে তারাও জানে কনকচাঁপা আর যাই হোক টিন আর গম চুরি করবো না ইনশাআল্লাহ। আমি একজন সৎ মানুষও বটে। এ আমার অহংকার নয়। অহংকার একমাত্র আল্লাহর পোশাক। আমার সততা আমার গর্ব।
কনক চাঁপা তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, আমার প্রিয় বাক্য “ভালবাসি প্রাণ ভালবাসি পৃথিবী”। এই বাক্য আমার প্রাণে অনুরণিত হয় প্রতিনিয়ত। আমি বিশ্বাস করি ভালবাসার শক্তি বন্দুকের গুলির চাইতেও শক্তিশালী। আর আমি ভালবাসার আধার বটে। একটা শুঁয়োপোকাকেও ভালবাসা দিতে আমার বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই। ভালবাসা দিয়েই আমি পথ সাজাবো ইনশাআল্লাহ।
”আমি আমার গ্রাম কাজীপুর এর মানুষের পাশে গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়াতে চাই। তারা অনেক দিন ধরে নির্যাতিত একথা সবাই জানে। সেখানে আমার আরাম আয়েশের জীবন ছেড়ে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোনো পথ আমার ছিল কি? আমি একজন পঞ্চাশের ঘরের মানুষ। এই বয়সেই গানের জগতের সব পুরস্কার সব ভালবাসা সব আশীর্বাদ পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। নাতিনাতনি, মেয়ে জামাই, ছেলের বৌ দিয়ে সাজানো বেহেস্তের বাগানের মত আমার সংসার।”
মঙ্গলবার রাতে ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’, ‘তোমায় দেখলে মনে হয়’, ‘অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন’-এর জনপ্রিয় সব গানের এই শিল্পী তার স্ট্যাটাসে এও উল্লেখ করেন, আরামদায়ক এই তুলতুলে ফুলফুলে জীবন ছেড়ে যুদ্ধে নামলাম মানুষকে ভালবেসে কারণ তাদের অপার ভালবাসার বিনিময়ে তাদের অনেক বেশী ভালবাসা উপহার দিতে চাই। আমার যে আসন (সিরাজগঞ্জ ১) তাতে যে যুদ্ধ হবে তাতে আমি অপঘাতে মরেও যেতে পারি সে আশংকা ও আমার আছে। থাকুক, আমি সে সব পরোয়া করিনা।
সবশেষে কনক চাঁপা উল্লেখ করেছেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করিনি সেই আফসোস থেকেই আমি দেশের জন্য আমার জীবন উৎসর্গ করতে চাই। নিজের শিক্ষার শেকড়ের উপর দাঁড়িয়েই আমি দিন-বদলের খেলা খেলতে চাই। দেশের মানুষের ভালবাসা, পরিবারের সমর্থন আমার আছে আলহামদুলিল্লাহ। আমি যুদ্ধে নামলাম হারার জন্য নয় কিন্তু হেরে গেলেও লজ্জিত হবো না কারণ আমি নিজের কাছে নিজে পরিষ্কার, আল্লাহ ভরসা।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/ আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply