দিল্লি দখলের লড়াই শুরু হচ্ছে আজ। ভারতে ১৭তম লোকসভা নির্বাচনে প্রথম দফায় দেশটির ১৮টি রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত দুটি অঞ্চলের ৯১টি আসনে নাগরিকরা ভোট দেবেন। সাত দফায় ৯০ কোটি ভোটার আগামী ১৯ মে পর্যন্ত নতুন নেতৃত্ব বেছে নিতে ভোট দেবেন। ফলাফল জানা যাবে ২৩ মে।
এদিকে ভোট শুরুর মাত্র এক দিন আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক ফার্স্ট বোলার ইমরান খানের বক্তব্যে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে ভারতজুড়ে। নরেন্দ্র মোদি সরকারকে ফের ক্ষমতায় দেখতে চান বলে মন্তব্য করেন ইমরান। তার এই মন্তব্যকে মোক্ষম রিভার্স সুইং বলে বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকরা। কেননা, বিজেপি শিবিরের নির্বাচনী প্রচারণায় গত কয়েক মাস ধরে হিন্দুত্ববাদ ও উগ্র জাতীয়তাবাদী আবেগ সেখানে তুরুপের তাস ছিল পাকিস্তান। পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলা, বালাকোটে বিমান হামলা, পাল্টাপাল্টি মিগ-২১ ও এফ-১৬ বিমান ধ্বংস- একেবারে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে যুদ্ধ উন্মাদনার পরিস্থিতি। কিন্তু ভোটের আগে ইমরান বললেন, শান্তির স্বার্থে তিনি চান মোদিই যেন ফের ক্ষমতায় আসে।
গতকাল বুধবার ইসলামাবাদে বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, ‘নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী মোদির দল জিতলে কাশ্মীর ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে ফের শান্তি আলোচনা শুরুর সম্ভাবনা আর তা ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’ এইটুকু বলেই থামলেন না। উল্টোটা হলে কী হতে পারে, তাও জানালেন। ইমরানের কথায়, ‘ভোটে জিতে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে কাশ্মীর সমস্যা যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই থাকবে। কারণ, ডানপন্থীরা হইচই বাধাবেন এই ভয়ে কাশ্মীর সমস্যা মেটাতে কংগ্রেস ততটা এগোবে না। যেটা একমাত্র সম্ভব, যদি বিজেপির মতো কোনো ডানপন্থী দল ক্ষমতায় আসে।’
ভারতে মুসলিম ও অ-হিন্দুদের ওপর লাগাতার হামলার ঘটনা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে ইমরান বলেন, ভারতে এখন যা সব হচ্ছে, কখনোই তা দেখতে হবে বলে ভাবিনি। মুসলিম মতাদর্শের ওপর হামলা হচ্ছে। চিনি, জানি এমন বহু ভারতীয় মুসলিম আমাকে বলেছেন আগে তারা অনেক ভালো ছিলেন। কিন্তু এখন উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থানে তারা উদ্বিগ্ন।’
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভয়ভীতি ও জাতীয়তাবাদের অনুভূতির ওপর ভিত্তি করে নির্বাচনের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
ইমরানের মন্তব্যে মোদিকে তোপ বিরোধীদের
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিস্ফোরক মন্তব্যের পর কটাক্ষ, বিদ্রুপ আর সমালোচনার তোপে গেরুয়া শিবিরকে বিদ্ধ করতে নেমেছে কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, ন্যাশনাল কনফারেন্স ও পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি)-সহ বিরোধী শিবির। বলা চলে তোলপাড়ই সৃষ্টি হয়েছে ভারতের রাজনীতিতে। কেননা, বালাকোটে বিমান হামলার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে প্রশ্ন করলেই মোদি শিবির বিরোধী রাজনৈতিকদের দেশদ্রোহীর তকমা লাগিয়ে দিচ্ছিল। বিরোধিতা করলেই দেশদ্রোহী বিজেপির উগ্র এ নীতি মেনে নিতে পারছিলেন না দলটির প্রতিষ্ঠাতা লালকৃষ্ণ আদভানীও। এমন পরিস্থিতি ইমরান খানের মোদি প্রীতিতে অক্সিজেন পেয়েছে বিরোধিরা।
বিরোধীদের ধরাশায়ী করার বিজেপীয় অস্ত্র পাল্টা হানতে শুরু করেছেন তারা। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার এক টুইটে বলেছেন, ‘পাকিস্তান সরকারিভাবে মোদির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। মোদিকে ভোট দেওয়া মানে পাকিস্তানকে ভোট দেওয়া।’ একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘মোদিজি, প্রথমে নওয়াজ শরিফ আপনার বন্ধু ছিলেন। এখন ইমরানও আপনার বন্ধু। ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে গিয়েছে।’
জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি গেরুয়া শিবিরের দিকে তীব্র কটাক্ষ হেনে টুইট করেন, ‘ইমরান খানের এই মন্তব্যের পর মাথা চুলকোচ্ছেন মোদি ভক্তরা। ওরা বুঝতে পারছেন না, ইমরানকে সমর্থন করবেন কিনা।’
জম্মু ও কাশ্মীরের আরেক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহ টুইটে লিখেছেন, ‘রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান সমর্থন করলে কী হতো, একবার ভেবে দেখুন। এত দিন শুনতাম, পাকিস্তান ও তার সমর্থকরা চায়, বিজেপি এই নির্বাচনে হেরে যাক। এবার তা হলে কী হবে?’
আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল তোপ দেগেছেন একেবারে মোক্ষম।
তিনি বলেছেন, ‘মোদিকে জেতাতে কেন উৎসাহী পাকিস্তান? দেশ জানতে চায়, আপনার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক কতটা গভীর। দেশ জানতে চায়, মোদি জিতলে কি পাকিস্তানে বাজি পোড়ানো হবে?’
৯১ আসনে ভোট আজ
প্রথম দফায় ১৮টি রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত দুটি অঞ্চলের ৯১টি আসনে আজ ভোট। এসব আসনে ১ হাজার ২৮৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে ভারতের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের দুটি আসন ছাড়াও অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, সিকিম এবং অরুণাচলে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply