ঈমানের চিহ্নঃ
হাদীসঃ হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সাঃ) বলেন, মদীনা শরীফের আনসার সাহাবীদের ভালবাসা ঈমানের চিহ্ন এবং তাদের সাথে শক্রতা পোষণ করা মোনাফেকীর চিহ্ন।
কবীরা গুনাহসমূহঃ
হাদীসঃ হযরত উবাদাহ বিন সামেত (রা) বলেন-একবার একদল সাহাবী রাসূলেপাক (সাঃ) কে ঘিরে বসা ছিলেন, এমন সময় তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা আমার এ কথার উপর অঙ্গীকার বা বায়আত গ্রহণ কর যে, তোমরা আ্ল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না। চুরি করবে না, ব্যভিচার বা যিনা করবে না, তোমাদের সন্তান-সন্ততিদেরকে হত্যা করবে না। কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেবে না এবং কোন ভাল কাজে নাফরমানি করবে না। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ সকল অঙ্গীকার পূর্ণ করবে, তার জন্য আল্লাহ পাক উত্তম পুরস্কার রেখেছেন।অপরপক্ষে যে ব্যক্তি এসকল অপরাধের কোন একটি করবে অথবা ভুলবশত অপরাধ হয়ে গেলে তার জন্য দুনিয়াতে যদি তাকে কোন একটি শাস্তি প্রদান করা হয় তা হলে উক্ত শাস্তি তার জন্য কাফফারা হিসাবে গণ্য হবে। আথেরাতে তার কোন শাস্তি হবে না। আর যদি কোন ব্যক্তি এ সকল গুনাহর মধ্যে কোন একটি করে ফেলে, দুনিয়াতে আল্লাহ পাক তার থেকে তা গোপন রাখে, তবে তা আ্ল্লাহর মর্জির উপর নির্ভর করে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করতে পারেন অন্যথায় তাকে শাস্তিও দিতে পারেন অন্যথায় তাকে শাস্তি ও দিতে পারেন। হযরত উবাদাহ (রা) বলেন, আমরা এ সকল কথার উপর তাঁর হাতে বায়আত গ্রহণ করলাম।
ঈমানের হেফাযতঃ
হাদীসঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ঐ সময় অতি নিকটবর্তী যে সময় মুসলমানগণ ফিতরা ফ্যাসাদ থেকে বাঁচার জন্য নিজের উত্তম সম্পদ ও বকরীগুলো নিয়ে পাহাড়ের চূড়া অথবা আরো ঊর্ধ্বে গিয়ে আত্মগোপন করবে। অর্থাৎ নিজেকে সকল ফেতনা ফ্যাসাদ থেকে দূরে রাখাই ঈমানের নির্দশন।
সরিষা পরিমান ঈমানের ফলঃ
হাদীসঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে পাক (সাঃ) বলেন, জান্নাতবাসীগণ জান্নাতে এবং জাহান্নামবাসীরা জাহান্নামে প্রবেশ করার পর আল্লাহ তা’য়ালা ফেরেশতাদেরকে বলবেন, “জাহান্নাম হতে বের করে আন তাদেরকে যাদের অন্তরের মধ্যে সরিষা বীজ পরিমাণ ঈমান আছে।” অতঃপর ফেরেশতাগণ তাদেরকে এমন অবস্থায় জাহান্নাম হতে বের করে আনবে যে, তারা দোযখের আগুনে জ্বলে-পুড়ে কয়লার ন্যায় কার হয়ে গেছে। এরপর তাদেরকে “নহরে হায়াত” অর্থাৎ সঞ্জীবনী শক্তির নদীতে বা বৃষ্টির পানিতে ফেলা হবে। সেখানে হতে তারা নতুন জীবন লাভ করে, অতি সুন্দর আকৃতি বা রূপ ধারণ করে উঠবে।
ওমর (রা)-এর ঈমানঃ
হাদীসঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, আমি একদিন ঘুমে ছিলাম, স্বপ্নে দেখি লোকদেরকে আমার সামনে উপস্থিত করা হচ্ছে এ অবস্থায় যে, তারা সকলেই জামা পরিহিত, তাদের মধ্যে কারো জামা বুক পর্যন্ত, কারো জামা বুকের নীচে এরপর আমার সামনে ওমর ইবনে খাত্তাবকে উপস্থিত করা হয়েছে, তার গায়ে পরিহিত জামা জমীন পর্যন্ত নীচু। সাহাবাগণ (রা) জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি এর কি ব্যাখ্যা করেছেন। উত্তরে রাসূলেপাক (সাঃ) বললেন যে, এর দ্বারা দ্বীনকে বুঝানো হয়েছে।
লজ্জা ঈমানের অংশঃ
হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একবার এক আনসারী সাহাবীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যখন তিনি তার ভাইকে লজ্জা্র ব্যাপারে, নসিহত করছিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আনসারী ব্যক্তি বললেন, “তাকে ছেড়ে দাও। লজ্জা ঈমানের অঙ্গ।
জান ও মালের নিরাপত্তাঃ
হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, আমি মানুষের সাথে জেহাদ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি, যতক্ষণ না সে “আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল এ কথার সাক্ষ্য দিবে, নামাজ কায়েম করবে ও যাকাত প্রদান করবে।” যখন তারা এরূপ করবে, আমার পক্ষে হতে তাদের জান মাল নিরাপদ থাকবে। কিন্তু যদি কেউ ইসলামের বিধান অনুযায়ী শাস্তি পাওয়ার উপযোগী কোন অপরাধ করে, তবে তার জান মালেও ক্ষতি হবে এবং তার বিচারের দায়িত্ব আল্লাহর উপর ন্যস্ত রইল।
সবচেয়ে ভাল আমলঃ
হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন কাজটি সবচেয়ে ভাল? তিনি উত্তর দিলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনা। পুনরায় প্রশ্ন করা হয়েছিল। তারপর কোন কাজটি উত্তম? তিনি উত্তর দিলেন, তারপর ভাল কাজ হচ্ছে আল্লাহর পথে জিহাদ করা। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো তারপর কোন কাজটি উত্তম। উত্তরে বলা হলো তারপর মাকবুল হজ্জ।
ব্যতীক্রমধর্মী দানঃ
হাদীসঃ হযরত সা’দ ইবনে মা’আয (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কতিপয় লোকদেরকে কিছু দান করলেন। সা’দ ইবনে মা’আয ও ঐ স্থানে বসা ছিলেন, হযরত সা’দ বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদের মধ্য হতে এমন এক ব্যক্তিকে কিছু দিলেন না যে ব্যক্তি তাদের মধ্যে আমার কাছে বেশী পছন্দনীয় ছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ঐ লোকটি সম্পর্কে আপনার কি অভিমত? আ্ল্লাহর কসম! আমি তো তাকে মো’মিন মনে করে থাকি। রাসূলেপাক (সাঃ) বললেন, মু’মিন না মুসলমান? কিছুক্ষণ আমি চুপ থাকি, এরপর ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে আমার যা জানা ছিল সে ধারণা আরো প্রবল হওয়ার কারণে আমি দ্বিতীয় বার আবার ও জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর কসম আমি তো তাকে মু’মিন মনে করে থাকি। রাসূলেপাক (সাঃ) পুনরায় বললেন, মু’মিন না মুসলমান? আমি আবার কিছুক্ষণ চুপ থাকি, এরপর ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে আমার যা জানা ছিল সে ধারনায় প্রবলতায় আমি পুনরায় তাঁকে ঐ কথাই জিজ্ঞেস করলাম। হুজুর (সাঃ) আবার ও তার ঐ বাক্যটির পুনরাবৃত্তি করলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, হে সা’দ! এক ব্যক্তি আমার কাছে বেশী প্রিয় হওয়া সত্ত্বেও আমি অপর ব্যক্তিকে এ জন্য দান করি যে, সে দরিদ্রতার কারণে হয়তো ইসলাম ত্যাগ করবে। আর আল্লাহ তা’য়ালা তাকে আগুনে উপর করে ফেলে দেবেন অর্থাৎ জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।
মহিলাদের কু-স্বভাবঃ
হাদীসঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন নবী করীম (সাঃ) বলেন, “আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়েছে। তখন আমি দেখতে পেলাম দোযখের অধিকাংশই মহিলা। কারণ তারা কুফরী (অকৃতজ্ঞতা) বেশী করে থাকে। হুজুর (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলো তারা কি আল্লাহর সাথী কুফরী করে? তিনি বলেন, না তারা স্বামীর সাথে কুফরী করে অর্থাৎ অকৃতজ্ঞতা করে এবং স্বামীর অনুগ্রহ উপকার স্বীকার করে না। মহিলাদের অভ্যাস, যদি তুমি আজীবনও কোন মহিলার উপর দয়া করতে থাক আর এরপর তোমার পক্ষ হতে কোন অবাঞ্ছিত ব্যবহার হয়ে যায় তখন মহিলা তোমার আজীবনের উপকার ভুলে যাবে এবং বলবে, আমি তো তোমার পক্ষ থেকে কখনো কোন ভাল ব্যবহার পাইনি।
মুনাফেকির আলামতঃ
হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সাঃ) বলেন, মোনাফিকের আলামত তিনটি ১। যখন সে কথা বলে তখন মিথ্যা বলে। ২। যখন কারো সাথে কোন অঙ্গিকার বা ওয়াদা করে, তখন তা ভঙ্গ করে। ৩। যখন তার কাছে কোন কিছু আমানত রাখা হয় তখন সে তা খেয়ানত করে।
মুনাফিকের চিহ্নঃ
হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সাঃ) বলেন, যার মদ্যে চারটি স্বভাব থাকবে সে পাক্কা মুনাফিক এবং যার মধ্যে তার একটি স্বভাব থাকবে, তার মধ্যে মুনাফিকের চিহ্ন বিদ্যমান থাকবে, যে পর্যন্ত না সে তা পরিহার করে। ১। যখন তার নিকট কিছু আমানত রাখা হয় তাতে সে খেয়ানত করে। ২। যখন কথা বলে মিথ্যা বলে। ৩। যখন কারো সাথে ওয়াদা করে তখন তা ভঙ্গ করে। ৪। যখন কারো সাথে ঝগড়া করে তখন অশ্লীল বাক্য ব্যবহার করে।
হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়ই জাহান্নামীঃ
হাদীসঃ হযরত আহনাফ ইবনে কায়েস (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একসময় আমি হযরত আলী (রা) এর সাহায্যের জন্য রওয়ানা হলাম। পথের মধ্যে হযরত আবু বকর (রা) এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো, তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোথায় যাচ্ছ? উত্তরে আমি বললাম, হযরত আলীর সাহায্যের জন্য সিফফিনের যুদ্ধে শরীক হওয়ার জন্য রওয়ানা হয়েছি। তা শুনে তিনি আমাকে বললেন, তুমি বাড়ী ফিরে যাও। আমি রাসূলেপাক (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, যখন দু’জন মুসলমান পরস্পর যুদ্ধের উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়, তখন তাদের হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়ই জাহান্নামী হয়ে থাকে। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! হত্যাকারী তো নিজের অপরাধের কারণে জাহান্নামী হবেন। তবে নিহত ব্যক্তির অপরাধ কি? উত্তরে রাসূলেপাক (সাঃ) বললেন, নিহত ব্যক্তি ও তো হত্যাকারীকে নিহত করার জন্য চেষ্টা করেছিল।
লাইলাতুল কদরের ফযিলতঃ
হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্যে শবে কদরে কিয়াম করবে অর্থাৎ নামাজ পড়বে, তার পর্ববর্তী যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।
জেহাদের পরিচয়ঃ
হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জেহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়, আল্লাহ তা‘য়ালা তার জিম্মাদার হয়ে গেছেন। মহান আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন, “তার যুদ্ধে বের হওয়া একমাত্র আমার উপর ঈমান আনা এবং রাসূল পাক (সাঃ) কে বিশ্বাস করার কারণেই হয়ে থাকে। আমি এ জিম্মাদার হয়তো তাকে সওয়াব ও গনীমতের মালের সাথে প্রত্যাবর্তন করাবো অথবা শহীদ হওয়ার পর জান্নাতে প্রবেশ করাবো। রাসূলেপাক (সাঃ) আরো বলেন, যদি আমার উম্মতের জন্য জেহাদ কষ্ট দায়ক মনে না করতাম, তা হলে আমি কখনো মুজাহিদের সাথে যুদ্ধে যাওয়া হতে ফিরে থাকতাম না। আমার ইচ্ছে আমি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হই, আবার পুনরায় জীবিত হই। এরপর পুনরায় আবার শহীদ হই।
Leave a Reply