আজ ৯ ডিসেম্বর শনিবার একইসঙ্গে বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুদিন। তাই তাঁর সম্মানে ডুডল প্রকাশ করেছে সার্চ ইঞ্জিন গুগল। গুগলের ডুডলে আজকের দিনটি উৎসর্গ করা হয়েছে বাঙালি নারী জাগরণের এই অগ্রদূতকে।বিশেষ দিন স্মরণে ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গুগল তাদের হোমপেজে মানানসই লোগো তৈরি করে থাকে। এটাকেই বলে ডুডল।
গুগলের হোমপেজে ঢুকলে দেখা যাচ্ছে যে, সাদা পোশাকে চশমা পরা এক নারী বই হাতে হেঁটে যাচ্ছেন। আর তার পেছনে পেতে রাখা এক সোফায় একটি বই খোলা অবস্থায় পড়ে আছে। ছবিটার ওপরে ক্লিক করতেই দেখা গেল ঊনবিংশ শতাব্দীর খ্যাতিমান সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন সম্পর্কে নানা রকম তথ্য।
১৮৮০ সালের এই দিনে রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার প্রকৃত নাম ‘রোকেয়া খাতুন’ এবং বৈবাহিক সূত্রে নাম ‘রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’। তার বাবা জহীরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের সম্ভ্রান্ত জমিদার ছিলেন। তার মা রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানী।
রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও রোকেয়া নারী জাগরণের অগ্রদূতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। উনবিংশ শতাব্দীর একজন খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক তিনি। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
যে সময় এ উপমহাদেশে নারীদের শিক্ষা অর্জনের কথা ভাবাই যেত না, সে সময় বেগম রোকেয়া পরিবার ও সমাজের সমস্ত প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে শিক্ষার্জনে ব্রতী হন। তার সেই সাধনার পথ ধরেই রচিত হয় নারী শিক্ষার পথ। তারপর দিনে দিনে প্রশস্ত হয় সেই পথ। তারই ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশেও আজ শিক্ষা ও সব ধরনের কর্মক্ষেত্রে নারীদের সদম্ভ পদচারণা আমাদের দেশের উন্নয়নকে তরান্বিত করছে।
তৎকালীন মুসলিম সমাজব্যবস্থা অনুসারে বেগম রোকেয়া ও তার বোনদের বাইরে পড়াশোনা করতে পাঠানো হয়নি। তাদের ঘরে আরবি ও উর্দু শেখানো হয়। তবে রোকেয়ার বড় ভাই ইব্রাহীম সাবের আধুনিকমনস্ক ছিলেন। তিনি তার দুই বোন রোকেয়া ও করিমুন্নেসাকে ঘরেই গোপনে বাংলা ও ইংরেজি শেখান।
১৮৯৮ সালে বেগম রোকেয়ার বিয়ে হয় খান বাহাদূর সাখাওয়াত হোসেনের সাথে। তিনি ছিলেন উর্দুভাষী। তা সত্ত্বেও তিনি রোকেয়াকে শিক্ষা এবং সাহিত্য সাধনায় অনুপ্রেরণা দিতেন। ১৯০২ সালে রোকেয়া লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ‘পিপাসা’ রচনার মধ্য দিয়ে।
১৯০৯ সালে সাখাওয়াত হোসেন মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পাঁচ মাসের মাথায় বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ‘আঞ্জুমানে খাওয়াতিন’ নামে একটি ইসলামি নারী সংগঠনেরও প্রতিষ্ঠাতা।
বেগম রোকেয়ার উল্লেখিত রচনাসমূহ হলো ‘পিপাসা (১৯০২)’, ‘মতিচূর (১৯০৪)’, ‘সুলতানার স্বপ্ন (১৯০৮)’, ‘সওগাত (১৯১৮)’, ‘পদ্মরাগ (১৯২৪)’ ও ‘অবরোধবাসিনী (১৯৩১)’।বেগম রোকেয়ার জন্মলগ্নে মুসলমান সমাজ ছিল নানাবিধ কুসংস্কারে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ।
এ উপলক্ষে বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘বৈষম্যহীন সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে বেগম রোকেয়ার জীবনাদর্শ ও কর্ম আমাদের নারী সমাজের অগ্রযাত্রায় প্রেরণা জোগাবে।’
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বেগম রোকেয়ার আদর্শ, সাহস, কর্মময় জীবন নারী সমাজের এক অন্তহীন প্রেরণার উৎস।
আরেক বাণীতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘সংসার, সমাজ ও অর্থনীতি জীবনের এই তিনটি ক্ষেত্রে নারীকে স্বায়ত্তশাসিত ও আত্মমর্যাদাশীল হতে তিনি (রোকেয়া) গভীরভাবে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।’
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় রোকেয়া দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রোকেয়া পদক-২০১৭ প্রদান ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি থাকবেন।
দিবসটি পালন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আগামীকাল রোববার বিকেল ৪টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা প্রদান করবেন অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক পারভীন হাসান।বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ঢাকায় ও শাখাগুলোতে আলোচনা সভা, সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে।
যাঁরা পেলেন রোকেয়া পদক
এ বছর রোকেয়া পদক পেয়েছেন চিত্রশিল্পী সুরাইয়া রহমান, লেখক শোভা রানী ত্রিপুরা, সাংবাদিক মাহফুজা খাতুন বেবী মওদুদ (মরণোত্তর), সংগঠক মাজেদা শওকত আলী, সমাজকর্মী মাসুদা ফারুক রত্না। আজ তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
এছাড়া বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান রংপুরের পায়রাবন্দে দিবসটি পালন উপলক্ষে বেগম রোকেয়া ফোরাম দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডিঃ /- সাদিয়া শারমিন।
Leave a Reply