উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ডাচ শব্দ কোফি(koffie) থেকে কফি(coffee) শব্দটি ইংরেজি ডিকশনারিতে প্রবেশ করে ১৫৮২ সালে। ডাচরা কোফি শব্দটি ধার করেছিল তুর্কি শব্দ কহভি(kahve) থেকে যার উৎপত্তি আরবি শব্দ কোয়াহওয়াহ (quahwah/ قهوة) থেকে।
বর্তমান পৃথিবীতে প্রতিদিন পায় ১৬০ কোটি কাপ কফি পান করা হয়ে থাকে । বিলিয়নের মত মানুষের কাছে কফি পান রীতিমত নিত্যদিনের ব্যাপার । তবে আমরা অনেকেই এই কফি প্রচলনের ইতিহাসটা জানি না।
ঐতিহাসিক দলিল মোতাবেক , ১৪০০ সালের দিকে ইয়েমেনের মুসলিম সমাজে কফি সর্বপ্রথম জনপ্রিয়তা পায় । কিংবদন্তী অনুসারে , ইয়েমেন কিংবা ইথিওপিয়ার এক মুসলিম মেষপালক হঠাৎ লক্ষ্য করে তার মেষগুলো অজানা এক প্রকার গাছের পাতা খেয়ে সতেজ হয়ে উঠছে । এটা দেখে নিজের উপর ব্যাপারটা পরীক্ষা করার ইচ্ছা জাগে তার । মেষপালক সেই পাতা খায় এবং লক্ষ্য করে এর ফলে তার ক্লান্তি দূর হয়ে সতেজ ভাব লাগছে । এ ঘটনার পর থেকে কফির দানা গরম পানিতে দিয়ে পান করার ব্যপারটা ইয়েমেনে প্রচলিত হয়ে পরে । আর এভাবেই উদ্ভব হয় বর্তমান পৃথিবীর খুবই জনপ্রিয় একটি পানীয়, কফি।
এ ব্যাপারটা নিশ্চিত যে কফির প্রচলন হয় ইয়েমেন থেকেই এবং ইয়েমেন হয়ে কফি সমগ্র উসমানী খিলাফতে (অটোমান খিলাফত) ছড়িয়ে পরে । এর পর সমগ্র মুসলিম এলাকার গুরুত্বপূর্ন শহরগুলো, যেমন- ইস্তাম্বুল, বাগদাদ, কায়রো, দামাস্কাসে কফিহাউস তৈরি করা হয় । এরপর মুসলিম সভ্যতা থেকে কফি ইতালীর ভেনিস হয়ে ইউরোপে জনপ্রিয়তা অর্জন করে ।
ইউরোপে কফিকে নিন্দাভরে “মুসলিম ড্রিঙ্ক” নামে ডাকত তখনকার ক্যাথলিক প্রশাসনের কর্মকর্তারা (মুসলিমরা অনেকেই সারারাত জেগে আল্লাহর ইবাদত করতেন । রাত জাগার ক্লান্তি দূর করতে তারা কফি পান করতেন । মূলত এখান থেকেই “মুসলিম ড্রিঙ্ক” নামের উদ্ভব।) । ১৬০০ শতকে ইউরোপের কফি হাউসগুলো বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সরকারের সমালোচনার স্থান হয়ে উঠেছিলো । পরবর্তীতে এ কফিহাউস ভিত্তিক আলোচনাই ইউরোপে অনেক নবজাগরনের পথ সূচনা করেছিলো।
ইয়েমেন কিংবা ইথিওপিয়ার সেই মেষপালকের হাত ধরেই পরবর্তীতে প্রতিদিন প্রায় ১ বিলিয়ন কাপ কফি ইউরোপের জনসাধারনের রাজনৈতিক চিন্তাধারাকে উজ্জীবিত রাখে । সেই সাথে আমরা বলতে পারি , মুসলিমদের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পাওয়া এই পানীয়টি নিঃসন্দেহে মানব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন আবিস্কার।
[লেখাটি লস্ট ইসলামিক হিস্টোরি (Lost Islamic History) সাইটের ‘ফাইভ মুসলিম ইনভেনশনস দ্যাট চ্যান্জ দ্যা ওয়ার্ল্ড’ (5 Muslim Inventions That Change The World) শীর্ষক প্রবন্ধের প্রথম অংশের সহায়তা নিয়ে রচিত।] অথচ আজ আমরা এতটাই গাফিল যে আমরা আমাদের ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞ। আজ মুসলমান ভুলেই গেছে যে, এই সভ্যতা মুসলমানেরই অবদান।
Leave a Reply