যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানদের মধ্যে শান্তি আলোচনা চলছে। সহিংসতা থেকে শান্তিতে ফেরার এই উদ্যোগে আফগানিস্তানের তরুণ প্রজন্মের খুশি হওয়ারই তো কথা। তারা অখুশি নয়, তবে আতঙ্কিত। এই ভয় তাদের অস্তিত্ব নিয়ে। তরুণ প্রজন্মের অনেকেই ব্যস্ত গানবাজনা, মডেলিং, প্রযুক্তির ব্যবহারে। আফগানরা এসে সব বন্ধ করে দেবে না তো। নারীরাও কি আর আগের মতো বাইরে যেতে পারবে? স্বাধীন জীবনের স্বাদ পাবে? এমনই নানা প্রশ্ন তাদের মনে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন, শান্তি আলোচনা অনেকটাই ফলপ্রসূ। কথা নয়, কাজেও প্রমাণ দিয়েছেন তিনি। আফগানিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে চলেছেন তিনি। ২০১০ সালের শুরুতে মার্কিন সেনা ছিল এক লাখ। আর এখন তা কমে এসে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজারে।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানে তালেবানদের ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। সে সময় যারা শিশু ছিল, তারা এখন তরুণ। তালেবানের পতনের পর নতুন প্রজন্ম স্বাধীনতা পেয়েছে। গানবাজনা, মডেলিং ও প্রযুক্তির ব্যবহার করে আধুনিক জীবনযাপনে তারা অভ্যস্ত। তারা ইচ্ছেমতো বাইরে যেতে পারে। হালের পোশাক পরতে পারে। চুল কাটতে পারে। তালেবান শাসনামলের সময় নারীরা ঘরের বাইরে যেতে পারত না, গানবাজনা তো দূরের কথা। তারুণ্যের ভয়, সেখানে আবার ফিরতে হবে না তো?
রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে আফগান কয়েকজন তরুণ-তরুণীর কথা শোনা যাক।কাবুলের গানের স্কুলের পিয়ানোবাদক ১৬ বছরের মরিয়ম আতিয়া বলে, ‘এটা ভালো যে মার্কিন সরকার ও তালেবানদের মধ্যে শান্তি আলোচনা চলছে। তালেবানরা ফিরে এলে নারী অধিকারের বিষয়টিও নিশ্চিত করা দরকার। তালেবানরা ফিরে এলে যদি আমি আর গানবাজনা না করতে পারি।’
কাবুলে চুল সাজানোর কাজ করেন ১৯ বছরের হুসেন। আফগানিস্তানে যুদ্ধের পর ইরানে শরণার্থী হিসেবে ছিলেন হুসেন। সেখানেই বেড়ে ওঠেন তিনি। হুসেন বলেন, ‘শান্তি আলোচনায় তালেবানরা যোগ দেওয়ায় আমি আশাবাদী। এটি আমার দেশের সহিংসতা দূর করবে। আমি চাই, তালেবানরা তাদের মনোভাব বদলাক।’
জাতিসংঘের জনসংখ্যাবিষয়ক সংস্থার হিসাবে, আফগানিস্তানে সাড়ে তিন কোটি মানুষ বাস করে। তার মধ্যে ৬০ ভাগের বেশি জনগোষ্ঠী তরুণ। তাদের বয়স ২৫ বছরের নিচে। অন্য যেকোনো দেশের তরুণদের মতো আফগানিস্তানের তরুণ প্রজন্মও প্রযুক্তির প্রসার চায়। আফগানিস্তানের দুর্বল অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণে বেকারত্ব রয়েছে। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে অনেকেই পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে। অভিবাসী হিসেবে থাকছে বিভিন্ন দেশে। ২০১৪ সালের পর থেকে হাজার হাজার তরুণ অভিবাসী হিসেবে বাইরের দেশে পাড়ি দিয়েছে।
যারা আফগানিস্তানে রয়েছে, তারাও চায় বিদেশে গিয়ে কর্মসংস্থান করতে। কাবুলের একটি দোকানে কাজ করেন ১৯ বছরের ওমর। তুরস্ক থেকে আমদানি করা কাপড় বিক্রি করেন তিনি। ছয় বছর বয়স থেকে মন দিয়ে ইংরেজি শিখেছেন তিনি। কারণ, ওমর চান বিদেশে যেতে। তাজমহল, আইফেল টাওয়ার, নিউইয়র্ক সিটি তাঁর পছন্দ। তবে সহিংসতা না থাকলে আফগানিস্তানেই থাকতে চান ওমর। তিনি জানেন, আফগানিস্তানেও অনেক ধনী ব্যক্তি রয়েছেন। তাঁরা সহিংসতার কারণে বিনিয়োগে ভয় পান। মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে সায় নেই ওমরের। বললেন, তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা প্রয়োজন।
এই পরিস্থিতির উত্তরণে তালেবানদের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। তা নাহলে হুমকির মুখে পড়বে আফগান জনজীবন এবং যুবসমাজ।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ মোঃ মোস্তফা কামাল
Leave a Reply