জাহেদুল ইসলাম মিরাজ, চট্রগ্রাম প্রতিনিধিঃচট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা ইউনিয়নের পূর্ব বড়ঘোনা গ্রামের মাদরাসা পড়ুয়া ছাত্রীর লাশ দাফনের ২ মাস ২২দিন পরে কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। গত ৯ এপ্রিল রুমা আক্তার (১৬) এর লাশ দাফনের পর সোমবার ১ জুলাই সকাল ১০ টায় নিহতের পিতা বাদি নুরুল আমিনের আবেদনের প্রেক্ষিতে কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আল বশিরুল ইসলাম, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সি.আইডি উপ-পরিদর্শক মো: আনিছুর রহমান, ইউপি সদস্য আলী হোসেন ও আনোয়ারুল ইসলাম বাদশা, বাঁশখালী থানার এস.আই রুবেল আফরাদ এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ও মামলার বাদি সহ কয়েকশ স্থানীয় জনগণ।
লাশ উত্তোলনের পর লাশের ময়না তদন্ত ও ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার সূত্রে জানা যায়, গন্ডামারা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের পূর্ব বড়ঘোনা গ্রামের নুরুল আমিনের কন্যা রুমা আক্তারের সাথে একই এলাকার ১নং আসামি তৌহিদুল ইসলাম বিবাহ করার প্রলোভনে অবৈধভাবে মেলামেশা করে। এতে রুমা আকতার অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। মৃত্যুর ৩ দিন পূর্বে ৮ এপ্রিল রাত ১০ টা থেকে ৯ এপ্রিল ভোর সকাল পর্যন্ত রুমা আক্তারকে বিভিন্ন কৌশলে ঘর থেকে বের করে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পাশ্ববর্তী বাড়ির পুকুর পাড়ে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখে। লাশটি জ্বীনে মেরেছে প্রচার করে আসামিপক্ষের লোকজন দাফনের জন্য উৎসাহিত করে থাকে।
কয়েকদিন পর মূল ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে আইনের আশ্রয় নেয়ার জন্য পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে আদালতে নালিশী দরখাস্ত করেন নিহতের পিতা নুরুল আমিন। আদালতের আদেশ পেয়ে সিআইডি তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মো. আনিছুর রহমান বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের পূর্ব বড়ঘোনা গ্রামের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে বাদি ও বিবাদি উভয় পক্ষের লোকজনের সাথে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে রুমা আক্তারের লাশ কবর থেকে উত্তোলন পূর্বক ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাঁশখালী আদালতে গত ১৬ জুন আবেদন করেন।
আদালত নালিশী দরখাস্তটি আমলে নিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে বিজ্ঞ আদালত বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে রুমা আক্তারের লাশ কবর থেকে উত্তোলন পূর্বক ময়না তদন্ত এবং ফরেনসিক পরীক্ষা করার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাকে অনুমতি দেন। চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাশহুদুল কবীর ২৩ জুন সাক্ষরিত এক আদেশ বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আদেশমতে সি.আর ২০৭/১৯ (বাঁশখালী) নং মামলার ভিকটিম রুমা আক্তারের দাফনকৃত লাশ পূর্ব বড়ঘোনা কবরস্থান হতে উত্তোলন পূর্বক সুরত হাল রিপোর্ট (ফৌজদারী কার্যবিধি ১৭৪ ও১৭৬ ধারা অনুযায়ী) প্রস্তুত করার সময় উপস্থিত থাকার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেন। উল্লেখ্য, মামলার বাদি নুরুল আমিন বাঁশখালী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৩০২/৩৪ দন্ডবিধিতে নালিশী দরখাস্তে তৌহিদুল ইসলাম (৩০), আক্তার হোসেন (৪৫), নজরুল ইসলাম (৩২), ফৌজুল কবির (৩৮), রুজিনা আক্তার (২৮), ইয়াছমিন আক্তর (৩৩), খতিজা বেগম (৪২) এর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো আছে আসামি দেখিয়ে ৬ জন সাক্ষীর নাম উল্লেখ করে আদালতে মামলা দায়ের করে।
বাদির আবেদনের প্রেক্ষিতে বাঁশখালী বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাইনুল ইসলাম আদালত মামলাটি সি.আইডি কে তদন্তের নির্দেশ দেয়। বাঁশখালী থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তদন্ত কামাল উদ্দিন বলেন, গন্ডামারার পূর্ব বড়ঘোনা থেকে রুমা আক্তারের লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বাঁশখালী থানা পুলিশ এ সময় সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। আদালতের নির্দেশে এই লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। ফরেনসিক পরিক্ষায় মৃত্যুর মূল রহস্য উদঘাটিত হবে বলে আশা করছি। এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহীনির সহায়তায় কবর থেকে লাশ উদ্ধার করা হলে এলাকায় চাঞ্চল্যেরর সৃষ্টি হয়।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ জয় রহমান
Leave a Reply