ওহীর সূত্রপাতঃ
মহান আল্লাহ তা’আলা বলেছেন-
আমি যেমন নূহ ও তার পরবর্তী নবীদের প্রতি ওহী প্রেরণ করেছিলাম, তেমনি তোমার প্রতি ও তা প্রেরণ করেছি।
(সূরা আন নিসা)
নিয়ত সম্পর্কিত আলোচনাঃ
১. হাদীস: হযরত আলকামা ইবনে ওয়াককাস লাইসী (রাঃ) বলেন, আমি শুনেছি উমার ইবনে খাত্তাব মসজিদের মিম্বারের ওপরে আরোহণ করে বলছিলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (ছঃ)কে বলতে শুনেছি, সকল কাজই নিয়াত অনুসারে হয়। আর সকল ব্যাক্তি যা নিয়াত করে তাই লাভ করে। সুতরাং যার হিজরাত প্রথিবীর ধণ-সম্পদ অর্জনের বা কোনো মেয়েকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে হয়েছে তার হিজরাত সে লক্ষ্যেই হয়েছে।
ওহী অবতীর্ণের পদ্ধতিঃ
২. হাদীস: উম্মুল মুমিনীর হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেন, হারিস ইবনে হিশাম আল্লাহর রাসূল (ছঃ) এর কাছে জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছঃ) আপনার কাছে ওহী কিভাবে আসে? তিনি বললেন, ওহী কোনো সময় ঘন্টার শব্দের মতো আমার কাছে আসে। আর সেটাই আমার জন্য সব থেকে কষ্টদায়ক ওহী। ফেরেশতা যা বলে, তা শেষ হতেই আমি তার কাছ থেকে তা আয়ত্ব করি। আবার কোনো সময় ফেরেশতা মানুষের আকৃতিতে এসে আমাকে যে ওহী বলেন, আমি তা সাথে সাথেই আয়ত্ব করি। আয়িশা বলেন, আমি প্রচন্ড শীতের মৌসুমেও আল্লাহর রাসূল(ছঃ) এর প্রতি প্রথম ধরনের ওহী অবতীর্ণ হবার পর তাঁর ললাট থেকে ঘাম ঝরতে দেখেছি।
সর্বপ্রথম ওহীঃ
৩. হাদীস: উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেন, প্রথমে যে ওহী আল্লাহর রাসূল (ছঃ) এর কাছে আসতো তা হলো ঘুমের জগতে তাঁর সত্য স্বপ্ন। তিনি যে স্বপ্নই দেখতেন তা ভোরের আলোর মতই স্পষ্ট হতো।এরপর তাঁর কাছে নির্জন জীবন যাপন পসন্দনীয় হলো।এ কারনে তিনি ক্রমাগত কয়েকদিন পর্যন্ত নিজ পরিবার-পরিজনের কাছে না গিয়ে হেরা গুহায় নির্জন পরিবেশে আল্লাহর ইবাদাতে ধ্যনস্হ থাকতেন। আর এ লক্ষ্যে তিনি কিছু সাথে নিয়ে যেতেন। পরে তিনি খাদিজার কাছে প্রত্যাবর্তন করে পুনরায় সেভাবে কয়েকদিনের জন্য কিছু খাদ্য সাথে নিয়ে যেতেন।
এভাবে হেরা গুহায় অবস্থানের সময় তাঁর কাছে ওহী অবতীর্ণ হলো। জিবরাঈল ফেরেশতা সেখানে এসে তাঁকে বললেন, পড়ুন। আল্লাহর রাসূল (ছঃ) বলেন, আমি বললাম, আমি তো পড়তে জানিনা। তিনি বলেন, ফেরেশতা তখন আমাকে জড়িয়ে ধরে অধিক শক্তিতে আলিঙ্গন করলেন যে, এতে আমি খুব কষ্ট অনুভব করলাম। তারপর ফেরেশতা আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, পড়ুন। আমি বললাম, আমি পড়তে জানি না। তখন তিনি দ্বিতীয়বার আমাকে জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন করলেন। এতে আমার খুব কষ্ট অনুভব হলো। তারপর আমাকে তিনি ছেড়ে দিয়ে পড়তে বললেন। আমি বললাম, আমি পড়তে জানি না। আল্লাহর রাসূল (ছঃ) বলেন, ফেরেশতা তৃতীয়বার আমাকে জড়িয়ে ধরে কঠিনভাবে আলিঙ্গন করায় আমার অত্যন্ত কষ্ট হলো। এবার তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,
অর্থঃ (হে মুহাম্মদ)তুমি পড়, পড়, তোমার মালিকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন, (যিনি) মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাটবাঁধা রক্ত থেকে, তুমি পড় এবং (জেনে রাখো) তোমার মালিক বড়োই মেহেরবান।
আল্লাহর রাসূল (ছঃ) এই আয়াতগুলো আয়ত্ব করে বাড়িতে ফিরে এলেন। তাঁর বুক তখন আতঙ্কে কাঁপছিলো। তিনি খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদের কাছে এসে বললেন, আমাকে চাদর দিয়ে আবৃত করো। আমাকে চাদর দিয়ে আবৃত করো। তিনি তাঁকে চাদর দিয়ে আবৃত করলেন। এরপর তাঁর আতঙ্ক কেটে গেলে তিনি খাদিজার কাছে সকল ঘটনা বর্ণনা করে বললেন, আল্লাহর শপথ!আমি আমার নিজের জীবন সম্পর্কে আশঙ্কা করছি। খাদিজা সান্তনা দিয়ে বললেন, ভয় করবেন না। আল্লাহর শপথ। কখনই তিনি আপনাকে লাঞ্ছিত করবেন না। কারণ আপনি নিজ আত্মীয়-স্বজনের সাথে উত্তম ব্যবহার করেন, অসহায় ও অভাবীদের সেবাযত্ন করেন, বঞ্চিত ও দুঃখীদের দুঃখমোচন করেন, মেহমানদারী করেন এবং হকপথে বিপদগ্রস্তদের সাহায্যে করেন।
খাদিজা তাঁকে সাথে নিয়ে তাঁর চাচাত ভাই ওরাকা ইবনে নওফল ইবনে আসাদ ইবনে আবদুল উযযার কাছে গেলেন। ওরাকা জাহেলী যুগে ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইবরাণী ভাষায় গ্রন্থ লিখতেন। তিনি ইনজিলের অনেক অংশ সুরইয়ানী ভাষা থেকে ইবরাণী ভাষায় অনুবাদ করেন। তিনি বৃদ্ধ ও দৃষ্টি শক্তিহীন হয়ে গিয়েছিলেন। খাদিজা তাঁকে তার ভাতিজা অর্থাৎ আল্লাহর রাসূল (ছঃ) এর কাছ থেকে সব কথা শুনতে বললেন। অরাকা তাঁর ভাতিজার কথা শোনাতে বললেন। রাসূল (ছঃ) তাকে তাঁর সকল ঘটনা শুনালে ওরাকা তাঁকে বললেন, এ সেই জিবরাঈল ফেরেশতা, যাঁকে মূসা (আঃ) এর কাছে আল্লাহর প্রেরণ করেন।
হায়! আমি যদি তোমার নবুয়াতকালে যুবক থাকতাম! আমি যদি সে সময় জীবিত থাকতাম, যখন তোমার জাতি তোমাকে মক্কা থেকে বের করে দিবে? তিনি ওরাকার কাছে জানতে চাইলেন, তারা কি সত্যিই আমাকে বের করে দিবে? ওরাকা বললেন, হ্যাঁ, তুমি প্রথিবীতে যা নিয়ে এসেছো, তেমন কোনো কিছু নিয়ে যে ব্যাক্তিই এসেছে, তার সাথে দুশমনি করা হয়েছে। আমি তোমার যুগে জীবিত থাকলে তোমাকে যথাসাধ্য সাহায্য করবো। তারপর ওরাকা ইন্তেকাল করলেন এবং ওহীর আগমনও তিন বছর পর্যন্ত বন্ধ থাকলো।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply