মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম। সরকারি চাকুরে বাবা। কাজ করতেন ব্যাংকে। অর্থকষ্ট ছিল না, তবে হিসেবি মানুষ, বিলাসিতা করেননি কখনো। জন্ম ময়মনসিংহে, বেড়ে উঠা কিশোরগঞ্জ আর নেত্রকোণায়। প্রাথমিকে ভর্তি প্রথমে কিশোরগঞ্জ, পরে নেত্রকোণা আর পরে আবার কিশোরগঞ্জ।
তখনই মফস্বলে একটি দুটি করে কিন্ডারগার্টেন স্কুল গড়ে উঠেছে। তবে সেখানে ভর্তির চল তেমন ছিল না।
এটা ৮০র দশকের মাঝামাঝি সময়ের কথা। ৯০ দশক পেরিয়ে বিংশ শতকে পদার্পনের পর মফস্বলের জেলা সদর, উপজেলা শহর এমনকি গ্রাম পর্যায়েও গড়ে উঠছে কিন্ডারগার্টেন স্কুল। মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত বা ব্যবসা বাণিজ্য বা অন্য পন্থায় ভালো পয়সা কড়ি করেছে, এমন পরিবারের সন্তানদের এখন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো হচ্ছে কমই।
রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম বা এই ধরনের বড় শহরে আর্থিক দিক দিয়ে স্বচ্ছল পরিবারের কেউ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে, এই বিষয়টি একেবারেই ব্যতিক্রম। আসলে শহরের সরকারি স্কুলগুলোই কেমন যেন মৃয়মান হয়ে পড়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো এখন যেমন নাক সিঁটকানো শুরু করেছে।
বিষয়টা এমন দাঁড়িয়েছে, নিম্নবিত্তের সন্তানরা পড়বে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, কিছুটা সম্পদশালীরা কিন্ডারগার্টেন আর তার চেয়ে বেশি যাদের অর্থ তারা ইংলিশ মিডিয়ামে।
ভাবছি, যদি শিক্ষা জীবনের শুরু থেকে এভাবে শিশুরা আলাদাভাবে দল বেঁধে থাকে, তাহলে উচ্চবিত্ত আর নিম্নবিত্ত-দুই শ্রেণি পরস্পরের বিষয়ে কী করে জানবে? আমরা যখন পড়াশোনা করেছি, তখন স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে একেবারে নিম্ন আয়ের পরিবার থেকে উঠে আসা বন্ধু যেমন ছিল, তেমনি মধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্তের সন্তানরাও ছিল আমাদের বন্ধু। এতে পরস্পরের প্রতি এক ধরনের আত্মিক টান সব সময় ছিল। এখনো আমার স্কুল জীবনের বহু বন্ধু আছে যারা খুব ভালো চাকরি করে না। আবার এমন বন্ধু আছে যারা ভীষণ ভালো করেছে ক্যারিয়ার বা অর্থকড়ির দিক দিয়ে। যারা ভালো করেছে, তারা কেউ যারা ভালো করেনি, তাদেরকে ছোট করে দেখে না।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ জয় রহমান
Leave a Reply