মরে যাওয়া মানে তো হেরে যাওয়া। আমি মরবো না, আমি বাঁচবো। আমি তাকে শাস্তি দেবো। যে আমায় কষ্ট দিয়েছে। আমি তাকে এমন শাস্তি দেবো যে তাকে দেখে অন্যরা শিক্ষা নিবে। আমি তাকে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দেবো। ইনশাআল্লাহ।’
না, বাঁচানো গেলো না নুসরাত জাহান রাফিকে। অধ্যক্ষের যৌন হয়রানির শিকার হয়ে বান্ধবীদের উদ্দেশ্যে এমন চিঠি লিখে গেলেও শেষ পর্যন্ত কথা রাখতে পারেনি নুসরাত। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে বুধবার (১১ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে না ফেরার দেশে চলে গেছেন তিনি।
মুখোশধারী দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়ে কয়েকদিন লড়াইয়ের পর মৃত্যুর কাছে হার মেনে যাওয়া নুসরাতের মরদেহ তার ফেনীর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে নুসরাতের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বিকেল ৫টার দিকে জেলার সোনাগাজী পৌর এলাকার উত্তর চর চান্দিয়া এলাকায় মেজো মৌলভীর বাড়িতে পৌঁছায়। অ্যাম্বুলেন্সে ছিলেন নুসরাতের মা-বাবা ও ভাইয়েরা।
চলমান আলিম পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এ শিক্ষার্থীর নিথর দেহ বয়ে অ্যাম্বুলেন্স তার বাড়িতে পৌঁছাতেই স্বজন-শুভানুধ্যায়ী-সতীর্থদের কান্নার রোল পড়ে যায়। পুরো বাড়িতে তৈরি হয় শোকাবহ পরিবেশ। এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠরাও মুষড়ে পড়েন শোকে।
আজ বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বাদ আসর নুসরাতের জানাজার নামাজে সোনাগাজী মো. ছাবের সরকারি পাইলট হাইস্কুল মাঠ পরিণত হয় জনসমুদ্রে। শুধু তার গ্রামই না, আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ ছুটে আসে তার জানাজার নামাজে শরিক হতে।
এদিকে এরই মধ্যে কবর খোঁড়া কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাদির কবরের পাশে রাফিকে সমাহিত করা হবে। রাফির চাচাতো ভাই মোহাম্মদ উল্লাহ ফরহাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ঢামেক হাসপাতাল মর্গে নুসরাতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে মরদেহ তার পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, বড় আকারে দগ্ধ হওয়ার কারণেই নুসরাতের মৃত্যু হয়েছে।
গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রে গেলে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে পালিয়ে যায় মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা। এর আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা যৌন হয়রানির মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে চাপ দেয় তারা।
পরে আগুনে ঝলসে যাওয়া নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার চিকিৎসায় গঠিত হয় ৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উন্নত চিকিৎসার জন্য নুসরাতকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোরও পরামর্শ দেন তিনি। কিন্তু সবার প্রার্থনা-চেষ্টাকে বিফল করে বুধবার (১০ এপ্রিল) রাতে মারা যায় ‘প্রতিবাদী’ নুসরাত।
এ ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, ২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা তার কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। তারই জেরে মামলা করায় নুসরাতকে আগুনে পোড়ানো হয়। শ্লীলতাহানির ওই মামলার পর সিরাজ উদ-দৌলাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আগুনে পোড়ানোর ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাকে সাত দিনের এবং ওই মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আবছার উদ্দিন, নুসরাতের সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নুর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন ও শাহিদুল ইসলামকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে পাঠান আদালত। বৃহস্পতিবার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি এবং এজহারনামীয় মাদ্রাসাছাত্র জোবায়ের আহমেদকেও পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ জয় রহমান
Leave a Reply