মুহাম্মাদ শাহিদ ইমাম:- সায়মা জানালার দিয়ে বাহিরে আকাশের দিকে তাকিয়ে মন খারাপ করে বসে আছে।কারণ আজকে সকালে নাস্তা করার সময় তার মা তাকে বলেছে আজকে নাকি কোন পাত্র পক্ষ তাকে দেখতে আসবে। তাকে আবার পাত্রের সামনে নিজেকে লম্বারুপে উপস্থাপন করতে হবে তাই হীল
(উঁচু জুতা) পড়তে হবে। নিজের মুখের শ্যামলা চামড়াকে ডেকে রেখে সুন্দর চামড়া উপস্থাপনের জন্য একগাধা মেকআপ লাগাতে হবে। তারপর তাদেরকে কত আবল তাবল প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এই পারে কিনা সেই পারে কিনা… খুবই বিরক্তকর। এর জন্য সায়মার মন খারাপ। একদৃষ্টে আকাশের দিকে তাকিয়ে আসে সে। এটাই যে সায়মার জন্য প্রথম এমন টা না। এর আগেও অনেক বার তাকে এইভাবে বাজারের পণ্যের মতো সাজগোজ করে পাত্র পক্ষের
সামনে উপস্থাপন হতে হয়েছে। কিন্তু শাক দিয়ে কি মাছ ঢাকা যায়.?? পাত্র পক্ষ ঠিকই বুঝতে সায়মা যে শ্যামলা, খাটো একটা মেয়ে। তাই তারা পিছপা হয়ে যায়। যে কয়জন সামনে এগিয়ে আসে তারা আবার কিছু না কিছু (যৌতুক) আশা করে। কিন্তু সায়মাদের মধ্যবিত্ত ফ্যমিলির জন্য তো, তা খুবই কষ্টকর।তার বাবার পক্ষে দুই মেয়ে, দুই ছেলে সহ সাত জনের ফ্যামিলি চালাতে অনেক কষ্ট হয়ে যায়।তার উপর যৌতুক তো পাহাড় পরিমাণ বোঝা।যা
সায়মার বাবার পক্ষে বহন করা মোঠেও সম্ভব না। তাই সায়মার বিয়েও হচ্ছে না। – কিরে এখনো রেডি হসনি।তারা তো বাজারের কাছে চলে আসলো। আর কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে তারাতারি রেডি হয়ে নে।(সায়মার মা) মায়ের উচু আওয়াজের শব্দ শুনে সায়মার ধ্যান ভাঙে। সায়মাঃ জি রেডি হচ্ছি। সায়মার মা : কপাল টা ভালো কইরা ওয়ালের লগে ঘইসা লইস। পোড়া কপাল যেন ভালো হয়। এবার যেন তোকে এই বাড়ি থেকে বিদায় দিতে পারি সেই দোয়া কর। কথাগুলো বলে সায়মার মা রান্নাঘরে চলে যায়। সায়মা একটা মুচকি হাসি দেয়। আপনারা ভাবছেন কি ব্যাপার…! সায়মার মা তাকে এত বড়
কথা বলছে। অথচ সে হাসছে..? জী সায়মা হাসছে।কারণ কথাগুলো তাকে প্রতিনিয়ত শুনতে হয়। এসব কথা শুনতে শুনতে সায়মা অভ্যাস্ত হয়ে গেছে। তার বাবা তাকে মুখে না বললেও তার মা তাকে সরাসরি এসব কথা প্রতিদিন ই বলে।কারণ তার জন্য তার ছোট বোন মারিয়া কে (চামড়ার সুন্দরি) বিয়ে দিতে পাচ্ছে না। কত ধনী ধনী ছেলেরা মারিয়া বিয়ের জন্য প্রস্তাব দেয়।কিন্তু যখন শুনে মারিয়ার বড় বোন সায়মার এখনো বিয়ে হয় নি। তখন তারা পিছপা হয়ে যায়।এক সময় এসব কথা শুনে সাময়া প্রচুর কান্না করতো।কিন্তু এখন হয়তো চোখের পানি সব শুকিয়ে গেছে তাই কান্না আর আসে না। তাই তো সে মায়ের এমন কথা শুনেও মুচকি হাসি দেয়। তারপর সায়মা উঠে বাথরুমে গিয়ে হাত মুখ ধৌত করে এসে তোয়ালে দিয়ে পানি মুছে নেয়। তারপর জামা চেঞ্জ করে
অন্য একটি নরমাল জামা গায়ে দেয়।তারপর হালকা ক্রিম মুখে লাগিয়ে নেয়। সায়মার কাছে এখন আর এত এত কসমেটিক্স লাগাতে, শাড়ি পড়তে ভালো লাগেনা। অনেক তো কসমেটিক্স ব্যবহার করলো, শাড়ি পড়লো কি লাভ হলো.? তাই আর তার এগুলো ব্যবহারের ইচ্ছে করে।যা হবার হবে। সায়মার মাঃ কিরে এখনো রেডি হস নি.? পাত্র পক্ষ তো চলে আসলো। সায়মাঃ জী মা..আমি রেডি। সায়মার মাঃ কই রেডি। তোর চেহারা এমন ক্যা..মুখে কিচ্ছু লাগাস নাই। আর শাড়ি পড়স নাই ক্যান। সায়মা: মা…. এগুলো পড়তে আর ভালো লাগেনা। আমি এভাবেই যাবো। সায়মার মাঃ তা ভালো লাগবো কি করতে। তুই
তো চাস তোকে যেন তারা পছন্দ না করে।তোর জন্য আজ মারিয়াকে বিয়ে দিতে পারছি না। দে ধর…অন্তত হীল পড়ে যা নাস্তা নিয়ে যা।আমাকে উদ্ধার কর। সায়মা হীল পড়ে মায়ের হাত থেকে নাস্তার ট্রে হাতে নিয়ে সামনের রুমে যায়। তাদের না দেখে সায়মা সালাম দেয়। তারপর তাদের দিকে তাকাতেই সায়মা হতভম্ব হয়ে যায়। পাত্র পক্ষ থেকে মাত্র দুই জন লোক আসছে।একজন ছেলে আর একজন মেয়ে। মেয়েটি আপাদমস্তক কালো কাপড় (বোরকা) দ্বারা আবৃত। বোরকা আবৃত মহিলাটি সায়মার সালামের জবাব দেয় এবং তাকে সোফায় বসতে বলে। সায়মা টেবিলের উপর নাস্তার ট্রে রেখে সোফায়
বসে।সায়মা খেয়াল করে এখানে তার পক্ষের কোন লোক নাই।এখানে শুধু মাত্র তারা তিনজন।বোরকা আবৃত একটা মহিলা,একটা হুজুর,আর সে..? এই মহিলা কে..? আর এই হুজুর টাই বা কে..? এই মহিলা এই গরমের ভিতর কিভাবে এই কালো বোরকা পড়ে বসে আছে।গরম লাগে না বুঝি..? (সায়মা মনে মনে কথা গুলো ভাবে)। সায়মার কাছে এক অস্বস্তিকর পরিবেশ মনে হচ্ছে। -কেমন আছো মা…? মা…..এমন স্নেহ ভালোবাসার ‘মা’ ডাকটি সায়মা সর্বশেষ কবে শুনেছে।সে নিজেই ভুলে গেছে। তাই সে আবেগ আপ্লুত হয়ে যায়। সায়মা নিজেকে কন্ট্রোল করে জবাব দেয়… – জী।ভালো আছি। – পড়া লিখা কতটুকু
করেছো .? – জী আমি অনার্স শেষ করেছি। মাস্টার্সে ভর্তি হবো। – মা-শা-আল্লাহ। তো মা… নিয়মিত নামাজ পড়া হয় তো..? সায়মা অন্যান্য পাত্র পক্ষদের মিথ্যা বললেও আজ কেন জানি তার মিথ্যা বলতে তার ইচ্ছে করছে না। – ঠিক নিয়মিত নামাজ পড়া হয় না।মাঝে মাঝে মিস হয়। – এ কি মা… এটা কিন্তু ঠিক না। মুসলমান হিসেবে আমাদের সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে নিয়মিত নামাজ পড়া। -হুম। (মাথা নেড়ে) – তোর কিছু বলার বা জানার আছে..? (হুজুরের দিকে তাকিয়ে) – জী মা… উনার সাথে আলাদা ভাবে কিছু বলতে চাই।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
পরের পর্ব জন্য অপেক্ষা করুন এবং লাইক,কমেন্ট,শেয়ার করে এক্টিভ থাকুন..!!!
Leave a Reply