ভুল এক-দু’বার মেনে নেয়া যায়। তৃতীয়বারের মতো নাহয় ক্ষমা করা গেলো। কিন্তু একই ভুল যখন বার বার হতে থাকে? সেটিকে ঠিক কেমন দৃষ্টিতে দেখা যায়? এবার এসএসসি পরীক্ষায় এমন এক বীভৎস, নগ্ন অভিজ্ঞতাই পেলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়, তথা পুরো দেশ। আবশ্যিক সাতটি বিষয়ের প্রতিটি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়ে চলে গেলো শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে। সর্বশেষ ফাঁস হলো পদার্থ বিজ্ঞানের প্রশ্ন। সেটি পাওয়া গেলো দু-একজনের হাতে নয়- বাস ভর্তি শিক্ষার্থীর হাতে। পরীক্ষার ঘন্টাখানেক আগেই হাতে পাওয়া সেই প্রশ্নে হলো পরীক্ষাও। ঘটনায় ২৪ জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও ৯ জনকে আটক করা হয়েছে।
যদিও প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি খুব নতুন কিছু নয়। বিগত কয়েক বছর ধরেই এমনটা হয়ে আসছে, কিছু বিষয়ের ক্ষেত্রে। কিন্তু এমন লাগামহীন, আগাম ঘোষণা দিয়ে সকল প্রশ্ন ফাঁস হয় নি আগে কখনো। শুধু যে এস এসসি, এইচ এসসি তাই নয়। এখন বিভিন্ন সরকারি চাকরী-বাকরি সহ ভর্তি পরীক্ষায়ও প্রশ্ন ফাঁস হওয়া যেন নিত্ত-নৈমেত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এতকিছুর পরেও কোনো আশার আলো দেখাতে পারছে না সরকার কিংবা শিক্ষামন্ত্রনালয়। বরং তাঁরা হঠাত করে, বিভিন্ন সময়ে হঠকারী-নির্বুদ্ধিতার সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন বার বার। পুলিশ ধরছে কিছু চুনোপুঁটি। মূল হোতারা রয়ে যাচ্ছে ঘটনার অন্তরালেই। অতএব সমাধানের পথ এখনই দেখছেন না অভিভাবক-শিক্ষার্থীরা।
বিগত কয়েক বছর ধরে নেয়া হচ্ছে জেএসসি, পিএসসি পরীক্ষা। বাড়ছে প্রতিযোগিতা। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রশ্ন ফাঁসের একটি প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে ছোট বাচ্চাদের উপর চাপিয়ে দেয়া অস্বাভাবিক এই প্রতিযোগিতা। শিক্ষাক্ষেত্রে জ্ঞানার্জনকে বড় বিষয় হিসেবে দেখছে না সমাজ, অভিভাবক। শুধুমাত্র ফলাফলকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে- সেটা হোক সৎ কিংবা অসৎ যে কোনো উপায়ে। ভালো ফলাফলকে দেখানো হচ্ছে সরকারের বিরাট কৃতিত্ব হিসেবে। উল্লসিত হচ্ছে সমাজ।
অথচ প্রকৃত বীভৎস রূপটা উন্মোচিত হয় ভর্তিযুদ্ধ এলেই। এত কাড়ি কাড়ি জিপিএ ফাইভ পাওয়া শিক্ষার্থীরা পাসই করে উঠতে পারছে না। দিন শেষে লাভবান হয় না কেউ। জোর করে ধরিয়ে দেয়া জিপিএ ফাইভের সার্টিফিকেটে কেউ মেধাবী হয়ে যায় না। মেধাশূন্য হয়ে যায় না, ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা না দিয়ে জিপিএ ফাইভ না পেলেও।
এই ক্ষুদ্র সাধারণ জ্ঞানটুকু শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। অভিভাবকের মাঝেও। শিক্ষার উদ্দেশ্য কেবল মাত্র ভালো ফলাফল নয়। জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে মানুষের মতো চারিত্রিক গুনাবলির অধিকারী হওয়াই শিক্ষার মূল লক্ষ্য। সততা, মানবিক গুনাবলির প্রথম সারিতেই এর অবস্থান।
মূল্যবোধের অভাব পূরণ না হলে ভারী সার্টিফিকেট ধারী ‘মেধাবী’রা কেবলই সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে- এটা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা কবে বুঝবেন?
Leave a Reply