বিগত বছর গুলো থেকে এ বছর পর্যন্ত যত গুলো পাবলিক পরীক্ষা হয়েছে তার মধ্যে একটিতেও বাদ যায় নি প্রশ্নফাঁসের ঘটনা। ন্যাক্কার জনক এই ঘটনার ধারাবাহিকতা চলছেই। প্রশ্নফাঁস যেন এক পাগলা ঘোড়া, তাকে আটকানো ই যাচ্ছে না। জাতীর মেরুদন্ড ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন প্রকারের পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও এই ঘটনা থামানো যাচ্ছে।
এবার এসএসসি পরীক্ষার সাথে পাল্লা দিয়ে ফাঁস হয়েছে প্রশ্নপত্র। প্রতিটি বিষয়ের প্রশ্নফাত্র ফাঁস হয়ে চলে গেছে শিক্ষক থেকে অভিভাবক,ছাত্রসহ অনেকের কাছে ই। শিক্ষামন্ত্রীর তুমুল সমালোচনার পরে অবশেষে টনক নড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের।
বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতি তে প্রশ্নপত্র ছাপানো থেকে শুরু করে পরীক্ষা কেন্দ্রে বিতরনের পূর্ব পর্যন্ত হস্তান্তর হয় প্রায় শত জনের। তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোন পদক্ষেপে ই কাজ হচ্ছে না। অবশেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছাপানো প্রশ্নপত্র বাদ দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে। ছাপানো প্রশ্ন পত্রের পরিবর্তে ভেবে দেখা হচ্ছে কোন বিশেষ ডিভাইসের মাধ্যমে সরাসরি প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা যায় কিনা।
আজ মঙ্গলবারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক শেষে শিক্ষা সচিব মো. সোহরবাব হোসেন এমন কথা ই জানিয়েছেন।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রের এই গুরুত্বপূর্ণ আমলা বলেন,” ‘আমি মনে করি, এমন পদ্ধতি তৈরি করা প্রয়োজন যে পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র ছাপানো হবে না, বিতরণও করা হবে না। তাহলেই ফাঁস হওয়ার সুযোগ থাকবে না।’
বিগত বছর গুলোর তুলনায় এই বছর প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে প্রচুর সমালোচনার মুখো পড়তে হয়েছে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের। শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে বার বার পদক্ষেপ নিয়ে কেন প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো যাচ্ছে না সেই প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন,‘আমি যেটা মনে করি, প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়ার যে প্রক্রিয়া এখন আছে, এ পদ্ধতিতে কোনভাবে প্রশ্নফাঁস ঠেকানো সম্ভব হবে না।’
একটি পাবলিক পরীক্ষার সাথে শুধুমাত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয় নয় আরো বেশ কয়েক টি মন্ত্রণালয়ও সংশ্লিষ্ট থাকে। আজ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক নিয়ে এই সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আজ বসেছি সবচেয়ে হাইয়েস্ট লেভেল। যেসব মন্ত্রণালয় পরীক্ষা গ্রহণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, সেসব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা আজকের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। যে পরীক্ষাগুলো বাকি আছে এবং যেগুলো শেষ হয়েছে, সে বিষয়ে একটি পর্যালোচনা হয়েছে।’
আজকে যে হটাৎ করে শিক্ষামন্ত্রণায় কর্তৃক আয়োজিত মিটিং হলো, এই মিটিং এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন,‘আজকের সভার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- বাকি পরীক্ষাগুলো ভালোভাবে শেষ করা এবং বাকি পরীক্ষাগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
কিছুদিন পর থেকে ই শুরু হতে যাচ্ছে এইচএসএসি পরীক্ষা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ এই পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধের বিষয়ে আজকে বৈঠকে কি কথা হয়েছে সে সম্পর্কে মো. সোহরাব হোসেন বলেন,”‘একইসঙ্গে আগামী এইচএসসি পরীক্ষায় নতুন কী ধরনের পদ্ধতি ইমপ্লিমেন্ট (বাস্তবায়ন) করা যায় তা নিয়েও কথা হয়েছে। যেহেতু এইচএসসি পরীক্ষার মাত্র দেড়মাস বাকি রয়েছে, তাই এ বিষয়ে আগাম প্রস্তুতি স্বরূপ কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় তা নিয়ে সভায় কথা হয়েছে।’
সাধারণ পাবলিক পরীক্ষাগুলোর প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে পৌঁছে পরীক্ষার সাথে জড়িত অনেকের মুঠোফোনে। এমন কি পরীক্ষার কেন্দ্রে দায়িত্বরত শিক্ষকের ফোনেও প্রশ্নপত্র পাওয়া যায়। পরীক্ষার কেন্দ্র গুলো তে শিক্ষকদের মোবাইল ব্যবহার সম্পর্কে তিনি বলেছে, ‘আগামীতে যেসব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, সেখানে কোনো কর্মকর্তা, শিক্ষক বা কর্মচারী হাতে মোবাইল নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের ত্রি-সীমানার মধ্যে থাকলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
বর্তমান প্রশ্ন পদ্ধতির পরিবর্তনের কারনে পরীক্ষা পদ্ধতির কোন পরিবর্তন হতে পারে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই কর্মকর্তা বলেন, ‘পরিবর্তন আনা হবে। তবে তা আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষা থেকে বাস্তবায়ন করা হবে। সেই পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ব্যাংক বানানো হবে। আর তা করতে তিন থেকে চার মাস সময় লাগবে। সুতারাং তা করতে গেলে আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষার আগে সম্ভব নয়।’
যারা প্রশ্ন পত্র ফাঁসের সাথে জড়িত তাদের কোন সিন্ডিকেট কেন ধরতে পারছে না এবং যেসব অপরাধীদের ধরা হয় তারা আইন ফাঁক-ফোকর দিয়ে বের হয়ে যায়। কেন তাদের কঠোর শাস্তির বিধান করা হচ্ছে না এবং বর্তমানে যারা আটক হয়েছেন তাদের শাস্তি কতটুকু নিশ্চিত হবে সে বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা সচিব বলেন,‘দেখুন, এ পর্যন্ত ৫২টি মামলা হয়েছে, ১৫২ জনকে আটক করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।’
কয়েক দিন আগে প্রধানমন্ত্রী তার সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে কথা বলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বহু নির্বাচনী প্রশ্ন বাদ দেওয়ার কথা বলেন। এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘এমসিকিউ (বহুনির্বাচনী) বাতিলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন, তা আমাদের জন্য নির্দেশ। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বন্ধ করতে হয়, সেই প্রক্রিয়ায় আমাদের আসতে হবে। এনিয়ে আমি হঠাৎ করে কিছু বলতে পারব না।’
এবার এসএসসি পরীক্ষা শুরুর পূর্বে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যেসব বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হবে সেসব বিষয়ের পরীক্ষা পুনরায় নেওয়া হবে। কিন্তু পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর দেখা যায় প্রায় সবগুলো পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। যেসব বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে সেগুলো আবার পরীক্ষা নেওয়া হবে কিনা সেই প্রশ্নের জবাবে বলেন,এটা নিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। তারা যেভাবে সুপারিশ দেবেন, সেভাবেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এরপূর্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সরকারের তিন মন্ত্রীর উপস্থিতি তে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে একটি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। এই মিটিং এ স্বরাষ্টমন্ত্রী,শিক্ষামন্ত্রী এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য -প্রযুক্তি মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ ও এস
Leave a Reply