বন্যায় ভাসছে দেশ, বাড়ছে ত্রাণের জন্য হাহাকার। বন্যায় এ পর্যন্ত নানাভাবে মারা গেছেন ১১৪ জন। অবস্থার দ্রুত উন্নতি না হলে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। চলতি বছরের প্রথমে ১০ জেলা উপদ্রুত হলেও বর্তমানে ছাড়িয়েছে অনেক জেলায়। দেশের বড় একটি অংশ পানিবন্দি। কোথাও কোথাও প্লাবিত হচ্ছে নতুন এলাকা। বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত গরিব মানুষ। ফসল হারিয়ে কৃষক ও শ্রমজীবীরা সর্বস্বান্ত। ধ্বংস হচ্ছে রাস্তাঘাটসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। গতকাল শনিবার দেশের কোথাও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, আবার কোথাও অবনতি হয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতি শুধু বাংলাদেশেই নয়, দেশের বাইরেও রয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও মিয়ানমারে এবার অন্তত ৬০০ লোকের মৃত্যু হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, আড়াই কোটি মানুষ বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেসের উপ-মুখপাত্র ফারহান হক গতকাল জানান, এদের মধ্যে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। বন্যা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঘটনায় মারা গেছে ৬০০ লোক। এ সংখ্যা বাংলাদেশে ১১৪।
জাতিসংঘের ত্রাণকর্মীদের বরাত দিয়ে ফারহান হক বলেন, আমার ত্রাণের সহকর্মীরা জানিয়েছেন, প্রবল বৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও মিয়ানমার দুই কোটি ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ বন্যাক্রান্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে পাঁচ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
ভারতের আসাম, বিহার, উত্তরপ্রদেশের কিছু অংশ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে এক কোটিরও বেশি মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৪৩ লাখই শিশু।
বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দুর্গত মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলছে। এসব রাজ্যের মধ্যে আসামেই প্রায় দুই হাজার স্কুল বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ৪০ লাখেরও বেশি লোক বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। মিয়ানমারের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। বন্যা আক্রান্ত লোকজন ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে দেশটিতে ৪০ হাজারেরও বেশি লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। নেপালে প্রায় ৬৮ হাজার ৬৬৬ জন সাময়িক বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। বন্যায় দেশটিতে ৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৪৭ জনই শিশু। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় এ চারটি দেশেই জাতিসংঘ কাজ করছে বলে জানান ফারহান হক।
গতকাল সরেজমিন জামালপুরে দেখা যায়, এ জেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। কমতে শুরু করেছে বিভিন্ন নদনদীর পানি। গত দুদিন পানি বৃদ্ধি পেলেও গতকাল সকালে যমুনা নদীর পানি কমে বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বইছে বিপদসীমার নিচ দিয়ে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যতদিন দুর্যোগ থাকবে ততদিন ত্রাণ বিতরণ করা হবে।
এদিকে পানি কমতে শুরু করায় বের হয়ে আসছে বন্যার ক্ষতচিহ্ন। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ।
উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে বন্যাকবলিত এলাকার অধিবাসীরা এতদিন অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন উঁচু স্থানে। কেউ ছিলেন খোলা আকাশের নিচে। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানির অপ্রচুলতা সেই সঙ্গে বন্যার পানি কিছুটা কমতে শুরু করায় এসব মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা ধরনের রোগব্যাধি।
উত্তরবঙ্গের নীলফামারী ও সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা থানায় দেখা গেছে কোথাও উন্নতি ও অবনতির চিত্র।
চলমান বন্যায় এ পর্যন্ত দেশের ১৭ জেলায় ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ৫১৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের পাঁচ লাখ ৩১ হাজার ৯৪৯টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সরকারি তথ্যে বন্যায় সারা দেশে এক লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমির ফসল এবং পাঁচ হাজার ২১৪ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বন্যার ক্ষয়ক্ষতির তথ্য থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। পরে মধ্যাঞ্চলেও বন্যার বিস্তৃতি ঘটে। উন্নতির দিকে যাওয়ার পর অতিবৃষ্টির কারণে উত্তরাঞ্চলে ফের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, ধরলা এবং তিস্তা নদ-নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গঙ্গা-পদ্মা এবং সুরমা-কুশিয়ারা নদীতে কমছে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply