হৃদরোগ বর্তমানে এক আতংকের নাম। দেশ সহ সমগ্র বিশ্বেই বিপুল সংখ্যক মানুষ মারা যাচ্ছে হৃদরোগের কবলে। তবে জীবন যাপনের নিয়ম নীতি পরিবর্তনের মাধ্যমে অবস্থা থেকে মুক্তি সম্ভব।
হেলথ রাইটস মুভমেন্ট এর ন্যাশনাল কমিটির প্রেসিডেন্ট ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, ‘দেশে খেলার মাঠের অভাব। নদী-পুকুরে সাঁতার কাটার সুযোগ কম। কায়িক পরিশ্রম কমে যাওয়া। পরিবেশের বিপর্যয়। হাঁটার সুযোগ না থাকার কারণে হৃদরোগের মতো অসংক্রামক রোগ বাড়ছে। এগুলো প্রতিরোধের জন্য বিশেষ কোনও উদ্যোগও সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। তবে, নিজেদের বাঁচাতে প্রতিরোধে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এর ডিভিশন অব হার্ট ফেলিউর-এর প্রধান অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি মানুষ হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়। প্লাক ফর্মেশন বা ব্লকেজের কারণেই মানুষ মারা যায়। হৃদরোগের ক্ষেত্রে প্রথমে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়, এরপর ব্লকেজ হয়। হৃদপিণ্ডের চারপাশের রক্তনালী, ব্রেনের রক্তনালী এবং হাতে-পায়ের রক্তনালীতে এই ব্লকেজ হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যদি আমরা চার-পাঁচটা নিয়ম ঠিকমতো মানি, তাহলে এই প্রতিবন্ধকতা দূর হতে পারে। রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল ঠিক রাখতে হবে। পাতে লবণ খাওয়া যাবে না। মুড়ি, পাউরুটি এগুলোতে লবণ বেশি থাকে, সেগুলো বাদ দিতে হবে। উচ্চরক্তচাপ, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ, ডায়াবেটিস এই সহরোগগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।’
খাদ্যাভাসের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক বলেন, ‘ডায়াবেটিক ডায়েট বলে পৃথিবীতে আসলে কিছু নেই। ডায়াবেটিক রোগী, যারা নিয়মিত খান তারা দীর্ঘজীবী হতে পারেন। তাদের কমপ্লিকেশনও কম হয়। কিন্তু যদি ইচ্ছেমতো খান, তাহলে অনেক সমস্যা হতে পারে। কার্বো হাইড্রেট কম খেতে হবে। খাবারের মধ্যে শর্করা কম থাকতে হবে। আধা কেজি শাক-সব্জি ও ফলমূল খেতে হবে। পাঁচ ধরনের খাবার একসঙ্গে ১০০ গ্রাম করে খেলে সবচেয়ে ভালো হয়। এরমধ্যে মৌসুমী দেশি ফলগুলো এই তালিকায় রাখতে হবে। ফাইবারযুক্ত খাদ্য খেতে হবে যেমন- ভেজিটেবল। এগুলো শরীরের কোলেস্টেরল সীমিত করে। এগুলো হৃদরোগের পাশাপাশি মলদ্বারের ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায়।’
নিয়ম মেনে প্রতিদিন ৪০-৪৫ মিনিট হাঁটতে হবে উল্লেখ করে অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক বলেন, হাঁটলে ন্যাচারাল বাইপাস হয়। আমাদের রক্তনালীর আশেপাশে কোটি কোটি রক্তনালী ঘুমিয়ে থাকে। এগুলো যদি চালু করতে পারি, তাহলে রক্তের সংবহন ঠিক থাকে। রক্ত সংবহনতন্ত্রকে সঞ্চালিত রাখার জন্য হাঁটতে হবে। রাত ১২টার পর থেকে পরদিন সকাল ১১টা পর্যন্ত রক্তের মধ্যে কিছু উপাদান আছে, এগুলো তৈরি হয়। যদি এগুলো জমাট বাঁধে তাহলে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। তাই সকালে হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। বিকালে বা সন্ধ্যায় হাঁটতে হবে।
হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পরপরই ২৭ ভাগ মানুষের মৃত্যু হয়। এই অবস্থা প্রতিরোধে অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক বলেন, ‘রোগীর হার্ট অ্যাটাক হলে তাৎক্ষণিক মুখের মাধ্যমে অক্সিজেন দিলে আটভাগ রোগীর হার্ট অ্যাটাক বন্ধ করা সম্ভব। টেলিমেডিসিনের মাধ্যমেও হৃদরোগের চিকিৎসা করা সম্ভব।’
নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের মাধ্যমে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ভয় নয়, একে প্রতিরোধ করতে ব্যবস্থা নিতে হবে নিজেদেরই।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ মোঃ মোস্তফা কামাল
Leave a Reply