এইডস আক্রান্ত মানুষের অকাল মৃত্যুর তালিকা যখন লম্বা হতে শুরু করেছে। জীবনঘাতি এইডস সারা বিশ্বের মানুষকে যখন আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে তখন ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ঘাতক ব্যধি এইডস- এর ভয়াবহতা সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সাধারণ অধিবেশনের এ আলোচনাকে গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৮৮-এর ১ ডিসেম্বরকে বিশ্ব এইডস দিবস ঘোষনা করে এবং ৪৩-১৫ সিদ্ধান্তে এই দিবসটি পালনের জন্য বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে।
সুত্রমতে বর্তমান বিশ্বে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ এইচআইভি ও এইডস রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসায় এ রোগ আরোগ্য হয়না আবার এই রোগের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। তাই এ রোগের ধারা অব্যাহত থাকলে মানব সভ্যতা বিপন্ন হবে। এ কারনেই এইডস শব্দটি বিশ্ববাসীকে করেছে আতঙ্কগ্রস্ত। এ রোগ কিভাবে ছড়ায়,রোগটি প্রতিরোধে কি করণীয় এ সম্পর্কে সতর্ক হওয়া আবশ্যক হয়ে উঠেছে। পৃথিবীর সব মানুষকে জানান দেওয়া, জাগিয়ে তোলা,এইডস প্রতিরোধে জনমত তৈরী করা,সাবধান হওয়া এবং এইডস-এর বিরুদ্ধে গণজাগরণ সৃষ্টিতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা-এসব লক্ষ্য নিয়ে প্রতিবছর ১ ডিসেম্বর পালিত হয় বিশ্ব এইডস দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়।
এক হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিদিন গড়ে ৮,৫০০ মানুষ এইডস ভাইরাস(এইচআইভি বা হিউম্যানইমিউনো ডেপিসিয়েন্সি ভাইরাস) এ আক্রান্ত হচ্ছে এবং এর মধ্যে ১০০০ জন শিশু। আক্রান্ত মায়ের প্রতি ৩ জন শিশুর মধ্যে একজন এইডস রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে ধারণা করেছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।জাতীয় এইডস কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এইডস বিরোধী কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল প্রোগ্রাম অন এইডস (এঅচ)-এর সহায়তায় দেশে এইডস রুগী সনাক্ত করার জন্য ৫টি গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এইডস ছড়াতে পারে এর নির্ধারিত উপায়গুলো হচ্ছেঃ-
১। এইডস আক্রান্ত পুরুষ অথবা নারীর সাথে অরক্ষিত যৌন মিলনের মাধ্যমে।
২। এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত শরীরে গ্রহনের মাধ্যমে।
৩। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত সুচ বা সিরিঞ্জ জীবানুমুক্ত না করে পুনরায় ব্যবহার করলে।
৪। আক্রান্ত ব্যক্তির রেজার, ব্লেড,খুর জীবানুমুক্ত না করে ব্যবহার করলে।
৫। আক্রান্ত মা প্রসবকালে ও বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর শরীরে প্রবেশ করলে।
এইডস প্রতিরোধে করনীয়ঃ-
১। ধর্মীয় অনুশাসন ও সামাজিক রীতিনীতি মেনে চলা।
২। যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস থাকা।
৩। বহুগামিতা বা পতিতালয়ে যাতায়াত পরিহার করা- যদি সম্ভব না হয় তবে যৌন মিলনের পূর্বে কন্ডম ব্যবহার করা।
৪। রক্ত, রক্তজাত দ্রব্য বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গ্রহনের পূর্বে এইচআইভি এইডস পরিক্ষা করা।
৫। ব্লেড, সিরিঞ্জ নতুন ব্যবহার করা না হলে পুরোনো ব্লেড, সিরিঞ্জ জীবানুমুক্ত করে ব্যবহার করা।
৬। এইডস আক্রান্ত মায়ের গর্ভধারণ থেকে বিরত থাকা।
বাংলাদেশে এইডস এর প্রকোপ কম। কিন্তু প্রতিবেশি দেশ থেকে ডিফিউশন পদ্ধতির মত বাংলাদেশেও এইডস-এর মহামারি ছড়িয়ে পড়তে পারে। বর্তমানে দেশে মিয়ানমার থেকে আগত শরনার্থী রহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকেই এইডস আক্রান্ত। এদের দ্বারা অন্য কেউ নতুন করে যেন আক্রান্ত না হয় সেবিষয়ে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। সরকার এবং অনেক এনজিও এইডস রোগ সম্পর্কে সচেতন করার জন্য বহু বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। তারপরও প্রতিবছর এইডস দিবসে একটি করে প্রতিপাদ্য বিষয় থাকে দিবসটি উপলক্ষ্যে মানুষকে সচেতন করার জন্য। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় “গেটিং টু জিরো” অর্থাৎ নতুন এইচআইভি সংক্রমন ও এইডস রুগীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ এবং এইডস সংক্রান্ত মৃত্যু এই তিনটি বিষয় শুন্যে নামিয়ে আনা। আর যেন কোনো মানুষ এইডস আক্রান্ত হয়ে না মরে, এবারের বিশ্ব এইডস দিবসে এই হোক আমাদের প্রত্যাশা। আসুন সবাই মিলে এইডস মুক্ত পৃথিবী গড়ি।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডিঃ / কাউসার।
Leave a Reply