বিভিন্ন আইনি জটিলতা থাকায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতে হাজিরা এখনি চালু হচ্ছে না। এমটাই জানানো হয়েছে আইন দপ্তর থেকে।
নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়, যাতে বিশেষ ক্ষেত্রে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আসামিরা আদালতে হাজিরা দিতে পারে। ‘সাক্ষ্য ও বিচারিক কার্যক্রম (তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার) আইন, ২০১৭’ নামে আইনটির খসড়া চূড়ান্ত হলেও মতামত সংগ্রহের কাজ এখনও শেষ হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনটি পাস করতে আরও সময় প্রয়োজন। আগামী একাদশ সংসদে হয়তো এটি পাস হতে পারে। এরপরই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতে হাজিরা দেওয়া সম্ভব হবে।
২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে গুলি চালিয়ে ও বোমা ফাটিয়ে প্রিজনভ্যান থেকে জেএমবির তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয় তার সঙ্গীরা। এতে পুলিশের একজন সদস্য নিহত ও তিনজন আহত হন। এ ঘটনার পর জঙ্গি ও দুর্ধর্ষ আসামিদের আদালতে সশরীরে হাজির না করে কারাগার থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতে হাজিরার বিষয়টি সামনে আসে।
এ পটভূমিতে প্রাথমিক প্রক্রিয়া শেষ করার পর ‘সাক্ষ্য ও বিচারিক কার্যক্রম (তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার) আইন, ২০১৭’-এর খসড়া তৈরি করে মতামত চাওয়া হয়। বর্তমানে এটি ‘ফিল্ড স্ট্যাডি লেভেল’-এ রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক।
তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল এভিডেন্ট অ্যাক্ট ড্রাফ্ট করে মতামত আহরণ করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় দিয়েছি। এটা ফিল্ড স্ট্যাডি লেভেলে আছে। আমাদের আরও ফিল্ড স্ট্যাডি প্রয়োজন আছে। ফলে আগামী সংসদে হয়তো আইনটি পাস হতে পারে।’
‘সাক্ষ্য ও বিচারিক কার্যক্রম (তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার) আইন, ২০১৭’-এর খসড়ায় বলা হয়েছে, আদালতে সশরীরে হাজির না হয়েও আদালত কক্ষের বাইরে থেকে কোনও পক্ষ, সাক্ষী, অভিযুক্ত ব্যক্তি বা আইনজীবী অডিও-ভিজ্যুয়াল সংযোগের মাধ্যমে বিচারকাজে অংশ নিতে পারবেন।
ভিডিও কনফারেন্স ও টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে এজলাস থেকে দূরে অবস্থান করেও তারা বিচার কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন। বিচারক বিশেষ ক্ষেত্রে এ পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট পক্ষ ও আইনজীবীদের উপস্থিতি ও সাক্ষ্য নিতে পারবেন। তবে এ পদ্ধতিতে সাক্ষ্য দিতে চাইলে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে সব পক্ষের টেলিফোন নম্বর, ই-মেইল ঠিকানা এবং তাদের শনাক্ত করতে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বিস্তারিত তথ্য জানাতে হবে। কারাগারে থাকা অভিযুক্ত বা সাক্ষী এ পদ্ধতিতে বিচারকাজে অংশ নিতে চাইলে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।
বিশেষ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি নিয়ে তাদের পাসপোর্ট, জন্মনিবন্ধন সনদ, ড্রাইভিং লাইসেন্স অথবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দেওয়া প্রত্যয়নপত্র সংযুক্ত করেও আবেদন করতে পারবেন। অডিও-ভিডিও সংযোগের মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা সাক্ষীর উপস্থিতি বা সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আবেদনের সময় সরকার নির্ধারিত কোর্ট ফি জমা দিতে হবে।
আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হক জানান, আইনটি পাস হলে বেশকিছু সুবিধা পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, ‘এই আইন হলে যেসব হাই প্রোফাইল ক্রিমানাল রয়েছে তাদের কোর্টে আনার প্রয়োজন হবে না। জেলখানায় বসে সাক্ষ্য শুনতে পারবেন বিচারক। তাকে আর কোর্টে আনার প্রয়োজন হবে না। এক আসামির তিন-চার জায়গায় মামলা থাকে, সেক্ষেত্রে তাকে তিন-চার জায়গায় নিতে হবে না। জেলে বসেই একাধিক আদালতে হাজির করা যাবে।’
সাবেক এই প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এই সুবিধার আওতায় শুধু আসামিদের আনা হবে তা নয়, মামলার সাক্ষী হিসেবে ডাক্তাররা অনেক সময় ব্যস্ততার কারণে আদালতে আসতে পারেন না, তারাও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হাজির হতে পারবেন। সাব রেজিস্ট্রার অফিস থেকে মামলার প্রয়োজনে দলিলপত্র আদালতে আনতে হয়, সেটা করতে হবে না। রেজিস্ট্রার অফিসে বসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কাগজগুলো আদালতের সামনে উপস্থাপন করা সম্ভব হবে। বিদেশে এটা হয়। আমাদের দেশে চালু হলে মামলার জট কমা থেকে শুরু করে অনেক ব্যাপারে সুবিধা পাওয়া যাবে।’
২০১৬ সালের ২৯ জুলাই জঙ্গি ও দুর্ধর্ষ আসামিদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতে হাজিরা দেওয়ার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে বলে জানান কারা মহাপরিদর্শক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন। তিনি তখন বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। আসামিদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতে হাজিরা দেওয়ার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে।
শিগগিরিই এই প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হবে। বন্দিদের কারাগারে রেখেই হাজিরা নিশ্চিতের জন্য এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে।
পুরো প্রক্রিয়ার বিষয়ে কারা অধিদপ্তরের এআইজি (প্রশাসন) আব্দুল আল মামুন বলেন, ‘এটার অগ্রগতি হলো প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এভিডেন্ট অ্যাক্ট এখন পাস হয়নি। আইন মন্ত্রণালয়ে সেটা রয়েছে। আইনটা পাস হলেই আমরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দুর্ধর্ষ আসামিদের আদালতে হাজির করতে কোনও বাধা থাকবে না। তবে এ সরকারের সময় শেষ দিকে থাকায়, হয়তো একাদশ সংসদে আইনটি পাস হতে পারে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply