বেসরকারি হাসপাতাল ও ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসকের পরামর্শ ফি আদায়ে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই সরকারের। ফলে যে যার মতো করে ফি আদায় করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮২ সালে এ বিষয় নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। দ্য মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২ নামে একটি অধ্যাদেশও জারি হয়েছিল। ওই অধ্যাদেশে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সমমর্যাদার চিকিৎসকদের পরামর্শ ফি প্রথম দফায় কত, দ্বিতীয় ও পরের প্রতিটি সাক্ষাতে কত হবে সে সম্পর্কে উল্লেখ ছিল। সে সময় প্রথম সাক্ষাতে চিকিৎসকের পরামর্শ ফি নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪০ টাকা। এ ছাড়া সহকারী অধ্যাপক, সিভিল সার্জন ও সমমর্যাদার চিকিৎসকের পরামর্শ ফি ও নিবন্ধিত চিকিৎসকদের ফি কত হবে সে সম্পর্কেও নির্দেশনা ছিল। নির্দেশনা আরও ছিল বড়, মাঝারি ও ছোটো অস্ত্রোপচারের ব্যয় কত হবে, সে সম্পর্কেও। তবে চিকিৎসকদের বিরোধিতায় কখনই অধ্যাদেশটিকে আইন করা যায়নি, এমনকি বাস্তবায়নও করা যায়নি।
কেরাণীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মীর মোবারক হোসেন জাগরণকে বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতি অনুযায়ী- এই পরামর্শ ফি চিকিৎসকই নির্ধারণ করবেন এবং হচ্ছেও তাই। একই পড়াশোনা, ডিগ্রি থাকা সত্বেও চিকিৎসক চিকিৎসকে পার্থক্য থাকে। অনেকের দক্ষতা ভাল থাকে। এ অবস্থায় দক্ষ চিকিৎসকদের ফি তো অদক্ষদের চেয়ে একটু বেশি হবে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগি অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ জাগরণকে বলেন, যদি ফি বেঁধে দিতেই হয়, তাহলে সব পরিষেবা পরিবেশকদের ফি-ও বেধে দেয়া প্রয়োজন। কেন শুধু চিকিৎসক? আইনজীবী, স্টুডেন্ট কনসাল্টিং ফার্ম ইত্যাদিও আছে।
রাজধানীর বিভিন্ন স্তরের হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একই পড়াশোনা করা চিকিৎসকদের পরামর্শক ফি’র মধ্যে পাঁচগুণ পর্যন্ত কম-বেশি আছে। অনেক স্বনামধন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেয়ে তাদের ছাত্রদের পরামর্শ ফি বেশি। হাসপাতাল ভেদে একই চিকিৎসকদের পরামর্শ ফি-ও আলাদা।
কেরাণীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মীর মোবারক হোসেন জাগরণকে বলেন, স্বাস্থ্যখাতকে যদি বাণিজ্যিক খাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে মুক্তবাজার অর্থনীতি অনুযায়ী- ফি নির্ধারণ করা যুক্তিযুক্ত নয়। যদি সেবাখাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে সরকার ফি নির্ধারণ করে দিতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের মতন আরও যারা অন্য বিষয়ে সেবা দিচ্ছেন, তাদেরও ফি বেধে দেয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বহু আগে বিএমডিসি যে ফি বেধে দিয়েছিল, সেটাকে যদি স্ট্যান্ডার্ড ধরা হয় এবং এর সাথে যদি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা মিলানো হয়, তাহলে দেখা যাবে, বর্তমানে চিকিৎসকরা যে ফি নিচ্ছেন, তা কমই। তাছাড়া বর্তমানে চিকিৎসকরা যে ফি নিচ্ছেন, তা বেশ কয়েক বছর ধরে একই অংকে থেমে আছে।
সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ জাগরণকে বলেন, চিকিৎসককে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি), আইনজীবীদের ব্যক্তিগত চেম্বার করার অনুমতি দিয়েছে বার অ্যাসোসিয়েশন। বার অ্যাসোসিয়েশন যেমন আইনজীবীদের ফি নির্ধারণ করেনি, তেমনি বিএমডিসিও চিকিৎসকদের ফি নির্ধারণ করেনি। এজন্য চিকিৎসকরা নিজেদের মতন ফি নির্ধারণ করছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, কয়েক বছর আগে অধ্যাপকদের পরামর্শ ফি ৬০০ টাকা এবং সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপকদের পরামর্শ ফি ৫০০ টাকা মধ্যে নির্ধারণের সুপারিশ করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে এই নির্দেশনা কেউ-ই মানেননি।
তবে স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যাপক রশীদ-ই-মাহবুব জাগরণকে বলেন, পৃথিবীর কোথায় চিকিৎসকের পরামর্শ ফি বেধে দেয়া আছে? এর বেশি তিনি আর কিছু বলেননি।
মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ ও বিএমডিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক সহিদুল্লাহকে পাওয়া যায়নি।
যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বিএমডিসির কিছু ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, পাশ হবার অপেক্ষায় থাকা বেসরকারি চিকিৎসা সেবা আইনে এ সম্পর্কে বলা আছে। এটি পাশ হলেই সবঠিক হবে।
Leave a Reply