নাটোরের নারদ নদের বেড়িবাঁধের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করে দিয়েছেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। পাশাপাশি বেড়িবাঁধের ওপর থাকা বিপুল পরিমাণ গাছ ও বাঁশও কেটে বিক্রি করেছেন তিনি। এতে আগামী বর্ষায় বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রাম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেড়িবাঁধে বসতি গড়া নদীভাঙনকবলিত মানুষরাই নামমাত্র মূল্যে মাটি বিক্রি করে দিয়েছেন। বিষয়টি জানার পর জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার মাটিকোপা এবং সিংড়া উপজেলার গুনাইখাড়া মৌজার বগুড়াপাড়া এলাকার নারদ নদের অন্তত এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মাটি কাটা হয়েছে। ১০-১২ ফুট উচ্চতার বেড়িবাঁধ কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। এরই মধ্যে অনেকে সেখানে ভুট্টা আবাদ করেছেন। বেড়িবাঁধের পাশে টিকে থাকা কয়েকটি গাছ ও বাঁশ এখনো সামাজিক বনের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। মাটি কাটার এক্সক্যাভেটর মেশিনটিও সেখানে পড়ে আছে।
স্থানীয়রা জানান, আশির দশকে নারদ খনন করার সময়ই ব্যক্তিমালিকানার জমি অধিগ্রহণ করে বেড়িবাঁধটি নির্মাণ করে পাউবো। এরপর ভূমিহীন বা নদীভাঙনের বসতি হারানো মানুষ সেই বেড়িবাঁধে ঘর তোলে। বেশ কয়েকটি পাকা ও টিনশেড ঘর রয়েছে।
আমেনা বেগম নামে এক বাসিন্দা বলেন, নিজেদের সুবিধার জন্যই তারা আব্দুর রাজ্জাকের কাছে মাটি বিক্রি করেছেন। গাড়িপ্রতি মাত্র ৮০ টাকা পেয়েছেন। সরকারি জায়গার মাটি বিক্রি করলেন কীভাবে—এমন প্রশ্নে আমেনা বেগম বলেন, দেখাদেখি সবাই করেছে। তবে হাসিনা বেগম নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, না বুঝেই আমরা মাটি বিক্রি করে দিয়েছি। আব্দুর রাজ্জাক নামের ওই লোক গাছগুলোও নিয়ে গেছে।
মাটিকোপা গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, এক মাস ধরে মাটি কেটে নিয়ে গেছেন আব্দুর রাজ্জাক। কিন্তু কেউ বাধা দেয়নি। আব্দুর রাজ্জাক নিজেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের পিএস আকরামুল ইসলামের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচয় দেন।
এ ব্যাপারে আকরামুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানান।
সদর উপজেলার হালসা ইউনিয়নের মাটিকোপা গ্রামের কাউছার আলী জানান, বেড়িবাঁধের মাটি বহনের ট্রাক্টরের চাপায় স্থানীয় এক ব্যক্তির মৃত্যু হলে এলাকাবাসী তিনটি ট্রাক্টর পুড়িয়ে দেয়। এর পরই বেআইনিভাবে বেড়িবাঁধের মাটি কাটার বিষয়টি প্রকাশ পায়। পরে সদর থানা পুলিশ এসে মাটি কাটা বন্ধ করে দেয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী জালাল উদ্দিন বলেন, মাটি কাটা বন্ধ করে এক্সক্যাভেটরের ব্যাটারি জব্দ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বেড়িবাঁধের ওপর বাসবাসকারীরা তাদের নিজেদের সুবিধার জন্যই মাটি বিক্রি করেছে। তারা এসব জায়গা নিজেদের দাবি করেই আমার কাছে মাটি বিক্রি করেছে।
অভিযোগ পেয়ে এরই মধ্যে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন নেয়া হয়েছে জানিয়েছে সিংড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতো ও সদর উপজেলার ইউএনও জেসমিন আক্তার বানু। বিষয় এখন তারা পাউবোর হাতে ছেড়ে দিয়েছেন।
নাটোর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি জানার পর সরেজমিনে পরিদর্শন করা হবে। নদীর তীর বা বেড়িবাঁধের মাটি কাটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি প্রদক্ষেপ নেয়া হবে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply