মোঃ মোতালেব হোসেন, বড়াইগ্রাম প্রতিনিধিঃ শীত আসছে। শীতের সঙ্গে সমাগত আরও একটি চিরায়ত দৃশ্য। সেটি হলো আনাচকানাচে, উড়ালসেতুর নিচে, ফুটপাতের ওপর অসংখ্য অসহায় মানুষ পরস্পরের উত্তাপ নিয়ে জড়াজড়ি করে নিশিযাপন করবে। শীতের কামড় থেকে এই ভাগ্যহত ‘মনুষ্যশরীরগুলোকে’ রক্ষা করার জন্য গরম কাপড় ও নৈশ আশ্রয়ের ব্যবস্থা থাকা উচিত ছিল। সরকারিভাবে সেই ব্যবস্থা যেহেতু নেই, সেহেতু অনিবার্যভাবে খোলা আকাশকে চাঁদোয়া বানিয়ে গরিব মানুষ রাত্রিযাপন করবে। এ অবস্থার মধ্য দিয়ে অনিবার্যভাবে আরও একটি পৌষ সংক্রান্তিমুখী হবে।
প্রতিবছর এ অবস্থা চলতেই থাকবে—এটি সমাজের বেশির ভাগ মানুষ মেনে নিলেও কিছু মহৎ লোক তা মানতে পারেন না। তাঁরা নিজেদের অবস্থান থেকে সাধ্যমতো এগিয়ে আসার চেষ্টা করেন। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় তরুণদের মধ্যে এ রকম একটি মহৎ উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তরুণেরা ‘মানবতার দেয়াল’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রম শুরু করেছেন। তাঁরা একটি দেয়াল নির্ধারণ করছেন। দেয়ালের এক পাশে বিত্তবানেরা তাঁদের অপ্রয়োজনীয় জিনিস রেখে যেতে পারবেন। অন্য পাশ থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে যেতে পারবেন সুবিধাবঞ্চিতরা। আসন্ন শীতের কথা মাথায় রেখে তাঁরা এটি শুরু করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে এই মহৎ উদ্যোগটি দ্রুত বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে।
অপ্রয়োজনীয় কাপড় রেখে যান,প্রয়োজনীয় কাপড় নিয়ে যান” এ স্লোগান কে সামনে রেখে নাটোরের বড়াইগ্রামের আহমেদপুর বাজারে “মানবতার দেয়াল” চালু করা হয়। আজ দুপুর ২ টা ৩০ মিনিটে এটি উদ্বোধন করা হয়। । স্কুল ফর ড্রিমারস এর কর্ণধার শাহেলা সুমি’র পরিকল্পনায়,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ,১ নং জোয়াড়ী ইউনিয়ন এর ৩ নং ওয়ার্ড এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ শরিফুল ইসলামের সহযোগিতায় মানবতার দেয়াল উদ্বোধন করেন আহমেদপুর এম.এইচ উচ্চ বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক মোঃ আকবর আলী।
আরো উপস্থিত ছিলেন আহমেদপুর এম.এইচ উচ্চ বিদ্যালয় এর সাবেক প্রধান শিক্ষক শ্রী সুধাংশু কুমার সরকার। উদ্বোধনকালে স্থানীয় জনগণ ও স্কুল ফর ড্রিমারস এর সকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শীতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুসহ নারী-পুরুষেরা কষ্ট পান। তাঁদের কষ্ট লাঘবে এই ক্ষুদ্র চেষ্টা। আশার কথা হলো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। সারা দেশের পাড়া–মহল্লায় যদি তরুণেরা একটি করে ‘মানবতার দেয়াল’ গড়ে তোলেন, তাহলে আসন্ন শীতে গরিব লোকজনকে ততটা কষ্টে পড়তে হবে না।
দেশে হাজার ধরনের সমস্যা আছে। শুধু রাষ্ট্র তথা সরকার সেই সমস্যার সমাধান করবে, এমনটা প্রত্যাশা করা যৌক্তিক নয়। যেকোনো জাতীয় সমস্যা মোকাবিলায় ব্যক্তির অংশগ্রহণ জরুরি। ব্যক্তি যখন সংগঠিত হয় তখন বড় বড় সমস্যা সহজেই উতরে যাওয়া সম্ভব হয়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে তরুণসমাজ। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বড় কোনো সংকট মোকাবিলায় তাঁরা যদি সংঘবদ্ধ হন, তাহলে সেটি জাতির মনোবল অনেক বাড়িয়ে দেয়।
‘মানবতার দেয়াল’ শীর্ষক এই কার্যক্রমের মধ্যে তারুণ্যের যে ঐকতান শুরু হয়েছে, সেটি আশাবহ। এই কার্যক্রম শুধু সুবিধাবঞ্চিত মানুষের হাতে শীতবস্ত্র বা সাধারণ পোশাক পৌঁছে দেওয়া নয়, বরং জনগুরুত্বসম্পন্ন আরও অনেক বিষয় এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে।
Leave a Reply