বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যতো অশ্রু ঝরেছে, যতো মানুষের হৃদয় শূন্য হয়েছে, দগ্ধ হয়েছে প্রিয় মানুষ হারাবার বেদনায়, সেসবে শত-সহস্র গল্প-উপন্যাস তৈরী হয়ে যাবে অনায়াসে। এর প্রতিটি মানুষকে কাঁদাবে, অঝোরে। প্রতিটি বই হয়ে যাবে স্বপ্নভঙ্গের বেদনাবিধুর ইতিহাস।
প্রখ্যাত সাহিত্যিক, কলাম ও প্রবন্ধ লেখক আনিসুল হক এর উপন্যাস ‘মা’ এটিরই নজির রাখলো।
বাংলা সাহিত্যে কালজয়ী হিসেবে আসন পেয়েছে তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ‘মা’ উপন্যাস। শহীদ আজাদ ও তার অসীম সাহসী মায়ের মর্মস্পর্শী কাহিনী নিয়ে লেখা ‘মা’ দেশে-বিদেশে অনূদিত হয়েছে একাধিক ভাষায়।
সোমবার উপন্যাসটির ৭৫তম মুদ্রণ এলো সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের হাতে ধরে।
এটাই প্রথম কোনো জীবিত লেখকের বাংলাদেশি বইয়ের ক্ষেত্রে পাঠ্যপুস্তক ব্যাতিরেকে ৭৫তম মুদ্রণ। এর মাধ্যমে এক অনন্য রেকর্ড গড়ল ‘মা’ বইটি।
সময় প্রকাশনী ও আনিসুল হককে অভিনন্দন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘মা বইটি পড়লে অশ্রুসংবরণ করা যায় না। মুক্তিযুদ্ধ ও ভালো বইয়ের প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ হলো মায়ের ৭৫তম মুদ্রণ।’
শহীদ আজাদের মা মারা গেছেন ১৯৮৫ সালের ৩১ আগস্ট। পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে আজাদের ধরা পড়ার ঠিক ১৪ বছরের মাথায়, একই দিনে। তার দাফনের দিন ছিল আলোকোজ্জ্বল শারদীয় এক দুপুর। আকাশ ছিল ঘন নীল।
এরপরে আজাদের মা বেঁচে থাকেন আরো ১৪ বছর, ১৯৮৫ সালের সেই ৩০ আগস্ট পর্যন্ত। এই ১৪ বছরে তিনি কোনোদিন মুখে ভাত দেননি। একবেলা রুটি খেয়েছেন, কখনো কখনো পাউরুটি খেয়েছেন পানি দিয়ে ভিজিয়ে। মাঝেমধ্যে আটার মধ্যে পেঁয়াজ-মরিচ মিশিয়ে বিশেষ ধরনের রুটি বা চাপড়ি বানিয়েও হয়তো খেয়েছেন। কিন্তু ভাত নয়। এই ১৪ বছর তিনি কোনো দিন বিছানায় শোননি।’ মেঝেতে পাটি বিছিয়ে শুয়েছেন।
মা’ উপন্যাসটি তাই বাংলাদেশের গেরিলা মুক্তিযুদ্ধের অনন্য এক দলিল। বইটি কলকাতা থেকে বাংলায়, ভুবনেশ্বর থেকে উড়িয়া ভাষায়, ফ্রিডম’স মাদার নামে দিল্লি থেকে, পেরু থেকে স্প্যানিশে প্রকাশিত হয়েছে। অনলাইনেও ডাউনলোড হয়েছে অসংখ্যবার। খুশির খবর হচ্ছে বইটি সুইডিশ ভাষায় বেরুবে এ বছরই। উর্দুতে অনুবাদের কাজ চলছে।
বইটি প্রসঙ্গে সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছেন, মা বাংলাদেশের মর্মবাণী।
সরদার ফজলুল করিম বলেছিলেন, দুই মা, ম্যাক্সিম গোর্কির মা আর আনিসুল হকের মা। আনিসুল হকের মা যেন হয়ে উঠেছে আমাদের সবার ‘মা’। যে মা অসীম সাহসী আর মমতাময়ী।
এমন সাহসী মায়েরা বার বার ফিরে আসুন। তাঁদের বড় প্রয়োজন। মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকুন লেখনীর মাধ্যমে, শত-সহস্র বছর।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply