ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক সময় চা বিক্রি করতেন এমন কথা প্রচলিত আছে। ভারতের এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিষয়টি আবর নতুন করে সামনে এসেছে।
গুজরাটের মেহসানা জেলায় বডনগর স্টেশনে একটি পুরনো দোকানকে সংরক্ষণ করা হয়েছে সরকারিভাবে। যদিও চা সেখানে মেলে না। একটি ভাঙাচোরা টিনের ‘স্মারক’। তাতে লেখা— ‘নরেন্দ্র মোদির চায়ের দোকান। আপনি সিসিটিভি-র নজরে।’
বছর দুই আগে নরেন্দ্র মোদি গিয়েছিলেন এই স্টেশন চত্বরে। তার আগে ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও রেল মন্ত্রণালয় মিলে ৮ কোটি টাকা খরচ করে গোটা স্টেশনটি নতুন করে সাজায়; কিন্তু ‘মোদি’-র চায়ের দোকানটি রাখা হয়েছে আগের মতোই। সেটি অবিকল পুরনো অবস্থাতেই রাখা হয়েছে।
বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এই স্টেশনে নরেন্দ্র মোদি চা বেচেছেন, এমন কোনও প্রমাণ কি আছে? রেল মন্ত্রণালয়ের উত্তর ছিল— না। মোদি আসলেই চা বিক্রেতা ছিলেন কি না তা নিয়ে বিতর্ক আছে ভারতে।
কয়েক দিন আগে ছত্তিসগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল বলেছেন, ‘বডনগর স্টেশনটি আজও আছে; কিন্তু সেই কেটলি এখনও পর্যন্ত কেউ দেখেননি, মোদি যাতে চা বেচতেন। আজ পর্যন্ত কাউকে পাওয়া যায়নি, যিনি মোদির কেটলি থেকে চা খেয়েছেন!’
সম্পর্ক তিক্ত হওয়ার আগে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রায় চার দশকের ‘বন্ধুত্ব’ ছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রাক্তন নেতা প্রবীণ তোগাড়িয়ার। তিনিও বলেছেন, ‘মোদিকে চা বেচতে কখনও দেখা যায়নি। শুধু জনগনের সহানুভূতি আদায় করতেতে চাওয়ালা ভাবমূর্তি তৈরি করেছেন!’
সত্যিই কি মোদি কখনও চা বিক্রি করেছেন? এই প্রশ্নের জবাব একমাত্র পুরনো লোকেরাই দিতে পারেন; কিন্তু বডনগর স্টেশন চত্বরে তেমন কাউকে পাওয়া যায় না? গোটা স্টেশন এখন লাল পাথরে সাজছে। সেই দোকানটি বাদে অন্য সব দোকান তুলে দেয়া হয়েছে।
কলকাতার বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারের এক রিপোর্টার সম্প্রতি গিয়েছিলেন সেখানে। তিনি তথ্যটি যাচাই করার চেষ্টা করেছেন।
তিনি লিখেছেন, স্টেশনের বাইরে এসে প্রথম যে দোকান পাওয়া গেল, সেটি রমনজি তাখাজির। দুই প্রজন্মের দোকান। রমনজির বয়সও ষাটের উপরে। প্রশ্নটি প্রথম তাকেই করলাম, নরেন্দ্র মোদিকে কখনও চা বেচতে দেখেছেন? জবাব এল— ‘আমি তো কখনও দেখিনি। আগে দামোদরদাসের (মোদির বাবা) চায়ের দোকান ছিল স্টেশনের বাইরে। যেখানে এখন চায়ের দোকান সাজিয়ে রাখা হয়েছে, সেখানে ছিল না ওটা; কিন্তু দেখুন, ওই এক চায়ের দোকান সাজানোর জন্য আশপাশের একশো দোকান উচ্ছেদ করে দিয়েছে। সকলে এখন বেকার।’
সেই দোকানদার বললেন, ‘একটু দূরেই এক বৃদ্ধাশ্রম চালান মোদির বড় ভাই সোমভাই। সেখানে যান, এমন কাউকে পেতে পারেন’।
‘শ্রী সাই ধাম’ বৃদ্ধাশ্রম সেটি। ভিতরে ঢুকতেই আরাম কেদারায় বসা জনা তিনেক বৃদ্ধ স্বাগত জানালেন।
নরেন্দ্র মোদিকে কেউ চা বিক্রি করতে দেখেছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, ‘আমরা তো দেখিনি, ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করুন।’ বৃদ্ধাশ্রমের ম্যানেজার শচীন প্যাটেল। বয়সে নবীন। ঘোর বিজেপি সমর্থক। কর গুনে বলে দিলেন, দুটি ছাড়া গুজরাতের সব আসন যাবে বিজেপির ঝুলিতে।
মোদির ভাই শহরে নেই। শচীনের কাছে উত্তরও নেই; কিন্তু উত্তর কে দিতে পারেন, তা নিয়ে ভাবলেন কিছুক্ষণ। ফোনও করলেন কয়েক জনকে। অবশেষে একটা ঠিকানা দিয়ে বললেন, ‘মোদির স্কুলের সহপাঠীর কাছে যান। জাসুদ খান।’ ঠিকানা ধরে ধরে মসজিদের নীচে এক দোকানে পাওয়া গেল জাসুদ খানকে। মোদির সঙ্গে স্কুলে পড়েছেন দশ বছর। দু’বছর আগে মোদি যখন বডনগরে এসেছিলেন, তখন দেখাও হয়েছে। মোবাইলে সে ছবিও দেখালেন জাসুদ খান। ব্যাঙ্ক থেকে অবসর নিয়ে এখন ছোট দোকান চালান। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো ‘আপনি দেখেছেন নরেন্দ্র মোদীকে চা বানাতে?’
জাসুদ জানালেন মোদিদের একটি দোকান ছিলো সেখানে। তিনি বলেন, ‘চা তো ও বানাত না! তার জন্য কর্মচারী ছিল; কিন্তু স্টেশনের পাশেই আমাদের বি এন হাইস্কুল। মোদি মাঝে মধ্যে ছুটির পরে সময় পেলে বাবা-কাকাকে সাহায্য করতে দোকানে যেত।’
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply