রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বাংলা বিভাগের ‘অপহৃত’ ছাত্রীকে অক্ষত উদ্ধারসহ সাত দফা দাবিতে ক্যাম্পাসে ব্যাপক বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। ‘অপহৃত’ ছাত্রীকে আজ শনিবার দুপুর ২টার মধ্যে উদ্ধারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আল্টিমেটাম দিয়েছেন তারা।
দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিং থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।,
এ সময় শিক্ষার্থীরা সাত দফা দাবিনামা তুলে ধরেন। এর মধ্যে মধ্যে রয়েছে-অপহৃত ছাত্রীকে অক্ষত ফেরত, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ছাত্রী হলের সামনে চেকপোস্ট, হল গেট ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশ পথে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, সান্ধ্য আইন বাতিল, সব হলে অভিভাবক প্রবেশ করতে অনুমতি গ্রহণ এবং বিভাগগুলোতে শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করা।
ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, শুক্রবার তাপসী রাবেয়া হলের ওই ছাত্রীকে অপহরণ করার ঘটনার পর থেকে বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন হলটির ছাত্রীরা। এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার সকাল ১০টার দিকে তাপসী রাবেয়া হল থেকে বেরিয়ে বিক্ষোভের চেষ্টা করেন ছাত্রীরা।
কিন্তু হলের ফটকেই তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় হলটি সামনে ছুটে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা। তিনি বলেন, ওই ছাত্রীর অবস্থান জানা গেছে। খুব তাড়াতাড়ি তাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
এর কিছুক্ষণ পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান তাপসী রাবেয়া হলে প্রবেশ করেন। তিনি অপহৃত ওই ছাত্রীকে দ্রুত ফেরাত আনার আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেন।
এক পর্যায়ে বেলা পৌনে ১১টার দিকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুরু নেতৃত্বে ৫০-৬০ জন নেতাকর্মী ওই হলের সামনে আসেন। তারা হলের গেটে ধাক্কাধাক্কি ও স্লোগান দিতে থাকলে ছাত্রীদের বের হতে দেন প্রক্টর। সেখান প্রায় দুইশত ছাত্রী বের হয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এসে মানববন্ধনে মিলিত হন।
মানববন্ধন শেষে প্রেস বিফিং-এ শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সকালে আমাদের বলেছে, ওই ছাত্রীর সন্ধান পাওয়া গেছে। কিন্তু আমরা ওই ছাত্রীর পরিবারে সঙ্গে কথা বলেছি, তারা সন্ধান পায়নি বলে আমাদের জানিয়েছেন। তাই আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি।
কিন্তু দুপুর ২টার মধ্যে তাকে অক্ষত ফেরত না পেলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়া হবে। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল তাদের দাবির বিষয়ে জানাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে যান।
অন্যদিকে, আন্দোলনরত বাকি শিক্ষার্থীরা গ্রন্থাগারের সামনে অবস্থান নিয়ে আছেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মতিহার থানার ওসি মেহেদী হাসান বলেন, ওই ছাত্রীর সন্ধানে একটি টিম কাজ করছে। ওই টিম এখনো ফিরে আসেনি। উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের সামনে থেকে মাইক্রোবাসে করে বাংলা বিভাগের চূড়ান্ত বর্ষের ওই ছাত্রীকে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি তাপসী রাবেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তার বাড়ি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার মাতাজি এলাকার।
পরে ওই ছাত্রীর সন্ধান চেয়ে শুক্রবার বিকাল ৪টা থেকে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তা স্থগিত করা হয়।
এদিকে সন্ধ্যায় নগরীর মতিহার থানায় ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলায় ওই ছাত্রীর সাবেক স্বামী সোহেল রানাসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হয়। পরে রাতে ওই ছাত্রীর শ্বশুর জয়নার আবেদীনকে নওগাঁর পত্নীতলা থেকে আটক করা হয়।
Leave a Reply