শাওয়াল মাসের ছয়টি নফল রোজা পালন, সারা বছর রোজার সওয়াবপ্রাপ্তির এমনি একটি পরম সুযোগ এনে দেয়। রাসুল (সা.) বলেন, হজরত আবু আইয়ুব আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসুলুলল্গাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসের রোজা রাখল এবং এরপরে শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছর রোজা রাখল।
শাওয়াল শব্দের বিশ্লেষণ :পবিত্র রমজানের পরবর্তী মাস এবং চন্দ্র মাসের দশম মাস হচ্ছে শাওয়াল মাস। শাওয়াল শব্দটি ‘শাওলুন’ থেকে এসেছে; যার অর্থ হচ্ছে, বের হওয়া। যেহেতু এ মাসে আরববাসী আনন্দ-উলল্গাসের জন্য ভ্রমণে বের হয়, এ জন্য শাওয়ালকে শাওয়াল বলা হয় (গিয়াসুলল্গুগাত, ২৮৭)। শাওয়ালের আমল : শাওয়াল মাসে অনেক আমল রয়েছে। এসব আমলের ফজিলতও অনেক বেশি। এ মাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল হচ্ছে শাওয়ালের ‘ছয় রোজা’। রমজানের ফরজ রোজা পালনের পর শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখা মুস্তাহাব। আর এ রোজাকে শাওয়ালের ছয় রোজা বলে। এই রোজার অনেক ফজিলত রয়েছে, যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। রাসুল (সা.) নিজে এ রোজা রাখতেন এবং সাহাবায়ে কেরামদেরও রাখার জন্য নির্দেশ দিতেন।
শাওয়ালের রোজার ফজিলত :এই রোজার ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুলল্গাহ (সা.) হাদিসের মধ্যে ইরশাদ করেন, ‘যারা মাহে রমজানের ফরজ রোজা রাখবে, অতঃপর মাহে শাওয়ালের ছয় রোজা রাখবে, তারা সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব অর্জন করবে (মুসলিম শরিফ :প্রথম খণ্ড, ৩৬৯ পৃ.)।
হজরত মুসলিম কারশী (রা.) থেকে বর্ণিত আছে- তিনি বলেন, একদা আমি রাসুলুলল্গাহকে (সা.) জিজ্ঞেস করলাম সারা বছর রোজা রাখা সম্পর্কে। রাসুলুলল্গাহ (সা.) বললেন, তোমার ওপর তোমার পরিবার-পরিজনের হক রয়েছে। অতএব তুমি রমজান মাস ও এর পরবর্তী মাস রোজা রাখবে এবং প্রত্যেক বুধবার, বৃহস্পতিবার রোজা রাখবে।
আর যখনই এরূপ করলে যেন সারা বছর রোজা রাখলে (আবু দাউদ, তিরমিজি: হাদিস নং-৭৪৮)।
এই হাদিসে বলা হয়েছে, রমজানের রোজা রাখার পর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখলে সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যাবে। এই সওয়াব এভাবে যে, মহান রাব্বুল আলামিন মানবতার মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ আল কোরআন কারিমের সুরায়ে আন-আমের ১৬০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘যে লোক একটি নেক কর্ম আঞ্জাম দেবে সে লোক দশগুণ বেশি সওয়াব পাবে। সে হিসেবে রমজানের ৩০ রোজায় তিনশ’ রোজার সওয়াব হয়। আর মাহে শাওয়ালের ছয় রোজায় ৬০ রোজার সওয়াব হয়। এভাবে রমজানের ৩০ রোজা এবং শাওয়ালের ৬ রোজা মোট ৩৬ রোজা দশ দিয়ে গুণ দিলে ৩৬০ রোজার সমান হয়ে যায় আর ৩৬৫ দিনে এক বছর। সুতরাং ৩৬টি রোজায় সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়।
এ ছাড়া শাওয়ালের ছয় রোজা রাখার আরও ফায়দা হচ্ছে- অবহেলার কারণে অথবা গুনাহর কারণে রমজানের রোজার ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে থাকে, সেটা পুষিয়ে নেওয়া। কিয়ামতের দিন ফরজ আমলের কমতি নফল আমল দিয়ে পূরণ করা হবে।
একটি বর্ণনায় পাওয়া যায়, প্রিয় নবী (সা.) আরও ইরশাদ করেন, আলল্গাহতায়ালা শাওয়াল মাসের ছয় দিনে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি ওই ছয় দিন রোজা রাখবে আলল্গাহতায়ালা প্রত্যেক সৃষ্টি জীবের সংখ্যা হিসাবে তার আমলনামায় নেকি লিখে দেবেন, সমপরিমাণ গুনাহ দূর করে নেবেন এবং পরকালে তার দরজা বুলন্দ করে দেবেন। হজরত সুফিয়ান ছাওরি (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি মক্কায় তিন বছর ছিলাম। মক্কাবাসীর মধ্য থেকে জনৈক ব্যক্তি প্রত্যহ জোহরের সময় মসজিদে হারামে এসে বায়তুলল্গাহ তওয়াফ করে, নামাজ পড়ে, আমাকে সালাম দিয়ে চলে যায়। ফলে তার ও আমার মাঝে হৃদ্যতা ও সম্প্রীতি সৃষ্টি হলো। হঠাৎ সে অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাকে ডাকল এবং বলল, আমি মারা গেলে তুমি আমাকে নিজ হাতে গোসল দেবে, নামাজ পড়বে এবং দাফন দেবে। ওই রাতে তুমি আমাকে কবরে একাকী রেখে চলে আসবে না। তুমি আমার কবরের কাছে রাতযাপন করবে এবং মুনকার-নকিরের সওয়ালের সময় আমাকে সহায়তা করবে। সুতরাং আমি তাকে নিশ্চয়তা দিই। আমি তার আদেশ মোতাবেক তার কবরের কাছে রাতযাপন করি। আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলাম। হঠাৎ ঘোষকের ঘোষণা শুনলাম, হে সুফিয়ান, তোমার রক্ষণাবেক্ষণ ও তালকিনের প্রয়োজন নেই। আমি বললাম, কিসের জন্য? তিনি বললেন, রমজানের রোজা এবং রমজান-পরবর্তী শাওয়ালের ছয়টি রোজার কারণে। আমি ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে কাউকে দেখতে পেলাম না। ওজু করে নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। অতঃপর আমি আবার একই স্বপ্ন দেখলাম। সুতরাং আমি উপলব্ধি করলাম যে, এটা আলল্গাহতায়ালার পক্ষ থেকে, শয়তানের পক্ষ থেকে নয়। সুতরাং আমি চলে গেলাম এবং বলতে লাগলাম, হে আলল্গাহ, আপনি আমাকে রমজানের রোজা এবং শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখার তৌফিক দান করুন।
অতএব, শাওয়ালের ছয়টি রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত উপলব্ধি করে প্রত্যেক মুসলমানের উচিত, এ পুণ্যময় নেক আমলে নিজেকে মশগুল রাখা। মহান আলল্গাহ সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন।
প্রভাষক, আরবি, বাড্ডা ফাজিল মাদ্রাসা
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
খবরটি যদি গুরুত্বপুর্ন মনে হয় তাহলে লাইক, কমেন্টস, শেয়ার করুন
Leave a Reply