আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একই সঙ্গে হার্ট অ্যাটাক এবং কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার হওয়ায় তার জীবন অনেকটাই ঝুঁকির মুখে।সময় মতো উচ্চমানের চিকিৎসার আওতায় থাকায় ঝুঁকির মাত্রা কিছুটা কমলেও নিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হওয়া জরুরি।না হলে বড় ধরণের বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী মেশকাত আহমেদ শনিবার (৯ মার্চ) বিকালে দৈনিক জাগরণকে বলেন, একই সঙ্গে হার্ট অ্যাটাক এবং কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার হলে রোগী অনেক ঝুঁকির মুখে থাকেন। সিঙ্গাপুরে ওবায়দুল কাদেরকে তো বাইপাস করবে শুনেছি। এটা করলে তার জীবন ঝুঁকি কমে যাবে। কিন্তু একটু নিয়ম মেনে জীবন-যাপন করতে হবে।
৩ মার্চ ওবায়দুল কাদেরকে শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে আনা হয়। এরপর সকাল ৮টা ১০ মিনিটে হার্ট অ্যাটাক করেন, এর অতি অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে (হৃদপিণ্ডের স্পন্দন সাময়িকভাবে বন্ধ) আক্রান্ত হন। এ সময় দ্রুত বৈদ্যুতিক শক ও ম্যাসেজ করার ৫ মিনিট পর হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন ফিরে আসে। আনুমানিক ৮টা ১৫ মিনিটে তার হৃৎপিণ্ড সচল হয়।
বিএসএমএমইউ’র হৃদরোগ বিভাগের মেডিকেল অফিসার একেএম ফয়সাল দৈনিক জাগরণকে বলেন, একইসঙ্গে হার্ট অ্যাটাক ও কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার হওয়া সত্যিই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে একদম সময় মতো হৃদপিণ্ডে রক্ত পরিসঞ্চালন ব্যবস্থা প্রতিস্থাপন করা গেলে মৃত্যুঝুঁকি অনেক কমে আসে। তবে অবশ্যই রোগীকে নিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপন করতে হবে। হৃদপিণ্ডের জন্য ক্ষতিকারক খাদ্যদ্রব্য, ধূমপান পরিহার জরুরি। নাহলে মৃত্যুঝুঁকি দূর করা মুশকিল।
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, হৃদপিণ্ডে রক্ত পরিসঞ্চালন ব্যবস্থা প্রতিস্থাপন করার প্রথম ধাপ স্ট্যান্টিং (রিং পরানো)। এতে কাজ না হলে, বাইপাস সার্জারি করতে হয়। সফল বাইপাস সার্জারি সম্পন্ন হলে রোগীর সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন-যাপনের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। তবে নিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপন বাদ দেয়া যাবে না।
৩ মার্চ ওবায়দুল কাদেরের এনজিওগ্রাম করেন বিএসএমএমইউ’র হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা। এসময় তার হৃদপিণ্ডের প্রধান শিরায় একটি ও একটি উপশিরায় দুটি ব্লক ধরা পড়ে। প্রধান শিরার ব্লক জটিল হওয়ায় এতে স্ট্যান্টিং করেন চিকিৎসকরা। তারপরও শঙ্কা দূর না হওয়ায় পাঠানো হয় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে।
ওবায়দুল কাদেরের কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের নল খুলে ফেলা হয় মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে।তার রক্তচাপ স্বাভাবিক, হৃদযন্ত্র ও কিডনি কার্যক্ষম রয়েছে। ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এছাড়া নিওরোলজিক্যাল কোনও সমস্যাও নেই। শরীরের দুর্বলতা কেটে গেলে দু-একদিনের মধ্যে তাকে আইসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হবে।
শনিবার সকালে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক সিবাস্টিন কাদেরের চিকিৎসার সর্বশেষ অগ্রগতি নিয়ে ব্রিফিং এ এসব তথ্য জানান।
বিএসএমএমইউতে আনার পর দেখা যায়, ওবায়দুল কাদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিকস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে মাত্রাতিরিক্ত কোলেস্টরেল, শ্বাসতন্ত্রে জটিল সংক্রমণ (সিওপিডি) ছাড়াও কিডনির জটিল সমস্যায় (সিকেডি) আক্রান্ত।
বিএসএমএমইউ’র হৃদরোগ বিভাগের একজন মেডিকেল অফিসার দৈনিক জাগরণকে বলেন, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার হওয়া মানে সাময়িকভাবে মস্তিস্কে রক্ত ও বায়ূ প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হওয়া। এটা অনেক আশঙ্কার। এতে রোগীর বড় ধরণের বিপদ ঘটার আশঙ্কা থাকে, যদি উচ্চমানের চিকিৎসা ও চিকিৎসা পরবর্তী পরিচর্যা, জীবন-যাপন না করা হয়।
আশঙ্কা বলতে এই চিকিৎসক বুঝিয়েছেন, পঞ্চইন্দ্রিয় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া, কোনো না কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অচল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply