তিন বখাটের নির্মম নির্যাতনের পর নগ্ন ছবি তোলে বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শন, তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি। অতঃপর থানা ও ইউপি চেয়ারম্যানকে নালিশ দিয়ে বিচার না পেয়ে লজ্জায় আর অপমান সইতে না পেয়ে অবশেষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিল শিপ্রা কস্তা (৩০) নামে খ্রীষ্টান পরিবারের এক গৃহবধু।
জীবন দিয়ে বখাটেদের অত্যাচার থেকে মুক্তি আর নিজের সম্ভ্রম রক্ষায় এভাবে আত্ম হননের পথ বেছে নিয়েছে শিপ্রা। এমন ঘটনাটি ঘটেছে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল ইউনিয়নের সরাবাড়িয়া গ্রামে। মঙ্গলবার (০৭ আগষ্ট) দিবাগত রাতে নিজ বসতঘরের আড়ার সাথে গলায় রশি লাগিয়ে শিপ্রা কস্তা আতœহত্যা করেন। শিপ্রা কস্তা ওই গ্রামের ডমিনিক রোজারিও’র স্ত্রী।
বুধবার সকালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শিপ্্রার মরতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নাটোর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেনে। আর ২১দিন আগে থানায় দায়ের করা শিপ্রার অভিযোগপত্রটি তার আত্মহত্যার রাতে নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, দুইটি মেয়েকে নিয়ে শিপ্রা তার স্বামীর বাড়িতে বসবাস করছিলেন। স্বামী ঢাকায় চাকরী করেন।
গত ১৭ জুলাই দিনগত রাতে স্থানীয় শাহ আলম নামে এক মুদি দোকানী পাওনা টাকা চাইতে শিপ্রার বাড়িতে যান। এসময় টের পেয়ে স্থানীয় বখাটে সংগ্রামপুরের রমজান ফকিরের ছেলে আলম ফকির (২৮), সরাবাড়িয়া গ্রামের মান্নান আলীর ছেলে সবুজ সরকার (৩৩), আনার কুলির ছেলে আবু হানিফ (৩৫) লাঠি-সোঠা নিয়ে তাদের বাড়িতে গিয়ে শিপ্রা ও মুুদি দোকানীকে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে অপবাদ দিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবী করেন।
এক পর্যায়ে বখাটেরা শিপ্রার ও মুদি দোকানীর ওপর শারিরীক নির্যাতন চালিয়ে জোরপূর্বক নগ্ন করে আপত্তিকর দৃশ্যের ভিডিওসহ নগ্ন ছবি তোলেন। এসময় তারা দাবীকৃত টাকা তিনদিনের মধ্যে দিতে ব্যর্থ হলে ছবি ও ভিডিও ফেসবুকসহ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেন। একই সাথে শিপ্রার গলায় থাকা একটি স্বর্ণের চেইন, বাড়িতে থাকা নগদ ১০ হাজার টাকা ও মোবাইল সেট ছিনিয়ে নেন।
পরে এ ঘটনার বিচার চেয়ে শিপ্রা কস্তা বড়াইগ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। পাশাপাশি জোনাইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হকের কাছেও নালিশ করেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও কোন বিচার পায়নি শিপ্রা। এ অবস্থায় বখাটেরা বিভিন্ন জায়গায় তার নগ্ন ছবি প্রদর্শন করতে থাকে। এতে লজ্জা আর অপমান সইতে না পেরে অবশেষে আত্নহত্যার পথ বেছে নেয় শিপ্রা।
প্রতিবেশী এবং বোর্ণী ধর্ম পালকীয় সদস্য যোসেফ পালমা জানান, বিষয়টি নিয় স্থানীয় ভাবে মিমাংশা করে দেওয়ার জন্য বলেছিলেন শিপ্রার মা শান্তি পালমা। কিন্তু অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। শ্রিপ্রার মা শান্তি পালমা বলেন, ভেবেছিলাম স্থাণীয়ভাবে বিষয়টি মিমাংশা করলে তারা ভবিষ্যতে বাড়িতে নিরাপদে ভাল থাকতে পারবেন। মামলা করলে জামিনে এসে আরও অত্যাচার করবে।
কিন্তু সবাইকে কাঁদিয়ে অভিমানে গলায় দড়ি দিয়ে আত্নহত্যার করলো শিপ্রা। যাদের জন্য আমার মেয়ে আত্নহত্যার করলো, তাদের কঠিন শাস্তি চাই। ইউপি চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক জানান, পরিবার রহস্যজনক কারণে মামলা করতে রাজী ছিলেন না। ধারণা করা হচ্ছে, মামলা করলে আরও বড় ধরণের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তিনি দোষিদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন।
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলিপ কুমার দাস জানান, শিপ্রা অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু পরক্ষণেই তারা মামলা না করে স্থাণীয় ভাবে মিমাংশার কথা বলেন। তবু তাদের নিকট থেকে শুনে পুলিশ পাঠিয়ে অভিযুক্তদ্বয়কে গ্রেফতারের চেষ্টা করা হয়েছে। তারা পলাতক থানায় গ্রেফতার সম্ভব হয় নাই। গৃহবধূ শিপ্রার আত্নহত্যার পেছনে যারা দায়ী তাদেরকে কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি//আমিরুল ইসলাম//নাটোর প্রতিনিধি
Leave a Reply