আইসল্যান্ডে খৎনা নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে আইসল্যান্ডের পার্লামেন্টে একটি বিল আনার পর সম্মিলিত ভাবে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে মুসলিম-ইহুদী-খ্রিস্টান ধর্মীয় নেতারা। তারা এটিকে ধর্ম পালনের স্বাধীনতার উপর নগ্ন হামলা বলে মনে করেন।
আইসল্যান্ডের সরকার চাচ্ছে শুধুমাত্র চিকিৎসার প্রয়োজন অন্য কোন কারনে বাচ্চাদের খৎনা করা যাবে না। এই বিষয়ে পার্লামেন্টে একটি বিল উত্থাপন করা হয়েছে। এই খৎনা করানোর দায়ে ছয় বছর পর্যন্ত কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। বিলে খৎনা কে বলা হয়েছে শিশু অধিকার লঙ্ঘন।
কিন্তু আইসল্যান্ডের মুসলিম ও ইহুদী ধর্মীয় সংগঠন গুলো এই বিলের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা বলছেন, এই বিলের মাধ্যমে তাদের ধর্মীয় অধিকার খর্ব হবে।
পার্লামেন্টে এই বিল টি উত্থাপন করেছেন আইসল্যান্ডের প্রগ্রেসিভ পার্টির এমপি সিলজা ডগ গানারটির। তিনি মনে করেন যে,খৎনা কারও ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে না বরং এই বিষয় টি শিশু অধিকারের মধ্যে পড়ে।
তিনি আরও বলেন, “প্রত্যেকেরই অধিকার আছে তিনি কি বিশ্বাস করবেন বা করবেন না। কিন্তু শিশুদের অধিকারকে সবার ওপরে স্থান দিতে হবে।”
আইসল্যান্ডের পার্লামেন্টে ২০০৫ সালে এফজিএম বা ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন নামে একটি আইন পাস হয়। এই আইনের দ্বারা নারীদের গোপনাঙ্গে ফুটো করা নিষিদ্ধ করা হয়।
কিন্তু বর্তমানে আনা এই বিলটি একই সাথে মুসলিম, ইহুদী ও খ্রিস্টান ধর্মের মানুষদের ধর্মীয় বিশ্বাস বা ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর আঘাত বলে মনে করছেন অনেকে।
আইষল্যান্ডে ইহুদীদের সংগঠন নরডিক ইহুদী কমিউনিটিজ এই বিলের নিন্দা করে বলছে যে,ইহুদী ধর্মের যে বিশ্বাসের স্থান সেখানে আঘাত করেছে এই বিলটি। যা তাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।
মিলাহ ইউকে নামক এক ইহুদী সংগঠন বলছে, ছেলেদের খৎনার সাথে মেয়েদের এফজিএম তুলনা করাটা বোকামি কারনে খৎনা করলে দীর্ঘমেয়াদি কোন প্রভাব পড়ে না।
অপর দিকে, আইসল্যান্ডের ইসলামিক কালচারাল এর ইমাম আহমেদ সিদ্দিকী এই বিলের সমালোচনা করে বলেছেন,” এটা আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের অংশ। এখানে হাত দেওয়া মানে আমাদের ধর্মে হাত দেওয়ার সামিল।আমি মনে করি এটা ধর্মীয় স্বাধীনতা ভঙ্গ করার একটি আইন।”আইসল্যান্ডের রাজধানী তে অবস্থিত এক চার্চের আর্চ বিশপ মনে করছেন এই বিল টি যুক্তিযুক্ত নয়। এই আইন টি পাস হলে ইহুদী ও খ্রিস্টান ধর্ম পালন অপধারের শামিল হবে মনো করেন।
বর্তমানে আইসল্যান্ডে প্রায় দেড় হাজার মুসলিম ও মাত্র আড়াইশো ইহুদী রয়েছে। এই বিলটিতে বলা হয়েছে, খৎনা করা টা নিরাপদ নয়।
কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই সময়ে খৎনা করানো একটি মামুলি ব্যাপার মাত্র এবং পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত নয়।কোন বালক বা পুরুষের গোপনাঙ্গের সামনের দিকে চামড়া যদি বেশী আঁটোসাঁটো থাকে, একে বলা হয় ফিমোসিস অথবা কারও লিঙ্গের চামড়ায় যদি বার বার সংক্রমণ দেখা দেয় তখন খৎনা করানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসরা।
তবে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়ে খৎনা করানো ব্যক্তির চেয়ে যে ব্যক্তি খৎনা করান নি তাদের মধ্যে এইচআইভি তে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে। যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে যেসব রোগ ছড়ায় সেসব রোগ খৎনা করানোর মাধ্যমে অনেক অংশে দূরা করা যায় অর্থ্যাৎ যারা খৎনা করিয়েছেন যৌন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম।
তবে খৎনার মূল ঝুঁকি টা হচ্ছে রক্তপাত ও ইনফেকশন। তবে আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রে এটা তেমন ঝুঁকি নয়।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ ও এস
Leave a Reply