নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আইসিসির অনুরোধ অনুযায়ী রোহিঙ্গা নির্যাতনের তদন্তের এখতিয়ার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ গোপনে আইসিসিতে মত পাঠাচ্ছে। গত ৭ মে আইসিসির প্রাক্-বিচারিক শুনানিতে তিন সদস্যের আদালত বাংলাদেশের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়। আদালত ১১ জুনের মধ্যে প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে এ বিষয়ে বাংলাদেশকে পর্যবেক্ষণ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল।
রোহিঙ্গাদের জোর করে রাখাইন থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) এই পর্যবেক্ষণ পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ। ১১ জুনের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই বাংলাদেশ এই পর্যবেক্ষণ জমা দিচ্ছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র গত বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম গতকাল বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা আইসিসির অনুরোধে সাড়া দিয়েছি। তারা যেসব তথ্য চেয়েছে, সেগুলো দিয়েছি এবং অভিজ্ঞতা থেকে আমরা যা জানি, তা-ও জানিয়েছি।’
সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়ে তদন্তের এখতিয়ার নিয়ে আইসিসি ২০ জুন রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসবে। বৈঠকে তদন্ত শুরুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে আইসিসিতে বাংলাদেশের পর্যবেক্ষণ পাঠানোর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।
এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে গত বুধ ও গতকাল বৃহস্পতিবার কথা বলে জানা গেছে, রাখাইন থেকে ২৫ আগস্টের পর রোহিঙ্গাদের জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ায় জাতি নির্মূলের অভিযান হয়েছে। হত্যা-ধর্ষণ, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ রয়েছে। রাখাইনে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে নৃশংসতা চালানোর অভিযোগে মিয়ানমারের অভিযুক্ত পক্ষকে যে জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত, সেটি বাংলাদেশ আইসিসির কাছে তুলে ধরছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গা নির্যাতনের তদন্তের এখতিয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ আপাতত শুধু মতামত পাঠাচ্ছে। তদন্ত শুরুর পর আইসিসি তথ্য-উপাত্ত চাইলে তা আদালতকে দেওয়া হবে।
ঢাকার কূটনীতিকেরা বলছেন, রোহিঙ্গা নিপীড়নের অভিযোগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে বিচারের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে আদালতে মত পাঠানো নৈতিক দায়িত্ববোধের পাশাপাশি রোম সনদ সইকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য দায়িত্বও বটে।
আইসিসির ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, আদালতের প্রধান কৌঁসুলি ফাতাও বেনসুদা ৯ এপ্রিল আদালতে রোম সনদের উল্লেখ করে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে তদন্তের জন্য আবেদন জানান। ১১ এপ্রিল প্রাক্ শুনানি আদালতের সভাপতি তিন সদস্যের আদালতকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেন। কারণ ফাতাও বেনসুদা তদন্তের আবেদন জানালেও এ নিয়ে আইনি জটিলতা রয়েছে। বাংলাদেশ রোম সনদে সই করলেও মিয়ানমার এখনো তা করেনি। ফলে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি তদন্তের এখতিয়ার আইসিসির আছে কি না, সে প্রশ্ন রয়েছে।
তবে মিয়ানমারের এই জাতিগত নির্মূল চেষ্টার অভিযোগে মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা উচিৎ।
বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতেও তাঁরা কার্যত কোনো সহায়তা করছে না। যেটি তাদের অবস্থানকে আরো প্রশ্ন বিদ্ধ করে তুলেছে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply