মাতৃভাষা বাংলার জন্য বুকের তাজা রক্ত দিয়েছে এ দেশের রফিক-জব্বার-বরকত। বাংলা ভাষার সম্মান রক্ষা করার জন্য, বাংলায় কথা বলার জন্য বাঙালিরা যেটা করেছে সেটা বিশ্বের আর কোন দেশ বা জাতি করে দেখাতো পারে নাই।
বাংলা ভাষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। বাংলা ভাষার প্রচলন শতভাগ নিশ্চিত করার জন্য অনেক আগেই সরকারি অফিসের নথিপত্র,বিভিন্ন সরকারি দাপ্তরিক চিঠিপত্রের ভাষা এখন মোটামুটি শতভাগ বাংলা। কিন্তু সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বিচার বিভাগে বাংলা ভাষার প্রচলন নিশ্চিত করা যায় নি।
বিচার বিভাগের রায় গুলো এখনও ইংরেজিতে দেওয়া হয়। স্বাধীনতার এত বছর পরেও সে ধারার পরিবর্তন হয় নি। নিম্ন আদালতে বর্তমানে বাংলা ভাষায় রায়গুলো দিলেও উচ্চ আদালতের রায়ের ভাষার কোন পরিবর্তন হয় নাই।
উচ্চ আদালতের রায়গুলো এখনও ইংরেজিতেই দেওয়া হয়। বিশেষ করে হাইকোর্টের রায় গুলো ইংরেজিতে দেওয়া হয়। রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান এই প্রতিষ্ঠানে বাংলার প্রচলন কেন সম্ভব হচ্ছে সে বিষয়ে বিগত কয়েক বছর ধরে ই প্রশ্ন উঠছে।
এ বিষয়ে হাইকোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বলেন,উচ্চতর আদালতেও বাংলাতে রায় দেওয়া শুরু হয়েছে। কয়েক জন বিচারপতি বাংলা তে রায় লেখা শুরু করেছেন।
উচ্চতর আদালতে বাংলা তে রায় না দেওয়ার বিষয়ে বেশ কয়েক টি কারন তুলে ধরেন। কারন গুলোর মধ্যে রয়েছে,
১. উচ্চ আদালতে বিভিন্ন দেশের আইন ও বিচার সমূহ নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা হয়,যে কারনে বিচারকেরা বাংলাতে রায় দিতে পারেন না।
২. উচ্চ আদালতের বিচার কার্যে যখন যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করা হয় তখন আইনজীবীরা বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন উদাহরণ টেনে নিয়ে আসেন। যে সকল দেশের উদাহরণ এবং রায় তারা উপস্থাপন করেন সে সকল রায় ইংরেজি তে লেখা থাকে। আইনজীবিরা যখন এ সকল উদাহরণ বিচারপতি কে দেখান তখন বিচারপতিরা সেভাবেই নোট করে রাখেন।
সে কারনে বিচারককে যখন রায় লিখতে হয় তখন বিচারককে এ সকল উদাহরণ ইংরেজিতী ব্যাখ্যা করতে হয়। অনেক সময় বাংলাতে অনুবাদ করে দেন তবে সেটা খুব কম,অনুবাদ করে দিলেও সেটার রেফারেন্স লিখে দেন।
৩. কোন বিচারক যদি অনুবাদ করে রায় লিখতে যান সেক্ষেত্রে একটা সমস্যা দেখা দেয়, একটি ইংরেজি শব্দের অনেক গুলো বাংলা অর্থ থাকে। কোন শব্দের কারনে রায় পাল্টে যাওয়ার ভীতি থেকে বিচারকেরা বাংলাতে রায় লিখতে চাইলেও সম্ভব হয় না।
৪. আরেক টি বিষয় হচ্ছে বিচারকেরা ভালো রায়ের প্রতি গুরুত্ব দেন, তাই তারা ভাষার কথা ভেবে দেখেন না।
৫. আমাদের দেশে আইনগুলো বাংলা করা হলেও যখন এগুলো বাইরের আইনের সাথে তুলনা করার প্রয়োজন হয় তখন সেগুলো আবার ইংরেজি ভাষার সাথে তুলনা করতে হয়। ফলে পুনরায় নজর ইংরেজি তে চলে যায়।
এই সকল কারনে বিচার বিভাগে বাংলা ভাষার প্রচলন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম মনে করেন।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ ও এস
Leave a Reply