বাংলাদেশে ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক রাইড শেয়ারিং সেবা উবারসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রাজধানীতে সেবা কার্যক্রম শুরু করে। নতুন এবং কিছুটা ভিন্নধর্মী হওয়ায় অল্প কদিনেই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে এই ধরনের সেবা প্রতিষ্ঠান। তবে কিছুদিন যেতে না যেতেই অভিযোগ আসতে থাকে অনেকের বিরুদ্ধেই।
আইরিন আহমেদ গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে গ্রিন রোড থেকে কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড যাওয়ার জন্য উবার ডাকেন। অ্যাপে রাজন নামের একজন চালকের ছবিসহ পরিচয় আসে। কিন্তু উবারের গাড়িটি এলে আইরিন দেখেন সেখানে সবুজ নামের আরেক চালক। আইরিন বলেন, ‘প্রথমে গিয়ে দেখি চালক আরেকজন। এরপর গাড়িতে চড়ার পর ওই চালক অ্যাপ বন্ধ করে দেন। চালুর জন্য বললে চালক বলেন ভাড়া যেটা এসেছে সেটাই দিয়ে দিতে। তিনি অ্যাপ চালু করেননি। উল্টো তর্ক করেছেন। ভাড়ার পুরোটাই চালকের পকেটে যায়। উবারকে তাঁর দিতে হয়নি।’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, তাঁদের নামিয়ে দেওয়ার পর যাঁর নামে উবারে গাড়িটি রেজিস্ট্রেশন করা ছিল, সেই রাজন আইরিনকে ফোন করে নিজেকে উবারের লোক বলে পরিচয় দিয়ে দেখা করতে চান।
আইরিন সেদিন সঙ্গে সঙ্গে উবারের কাছে অ্যাপের মাধ্যমে লিখিত অভিযোগ জানান। তিন দিন পরে উবার থেকে তাঁকে ফোন করে পুনরায় অ্যাপে গিয়ে অভিযোগ জানাতে বলা হয়। চালকের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা জানানো হবে বললেও এখনো জানানো হয়নি। তিনি বলেন, ‘এই চালক বেশ কয়েকটি অপরাধ করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আরও অনেকে ভুক্তভোগী হবেন। এ ছাড়া সবাই হয়তো জানেও না দেশে অভিযোগ জানানোর কোনো সরাসরি হেল্পলাইন নেই। নিজেদের উবারের লোক পরিচয় দিয়ে ফোন করে দেখা করে অনেকেই বিপদে পড়তে পারেন। আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে হেল্পলাইন অবশ্যই থাকা উচিত।’
মাসখানেক আগে আতাউর রহমান রাতের বেলা উবার ডাকেন। তিনিও দেখেন, অ্যাপে ওঠা চালক ও তাঁকে নিতে আসা চালক এক ব্যক্তি নন। তখন তিনি জানতে চাইলে নিতে আসা চালক জানান, একজন রাতে চালান অন্যজন দিনে। আতাউর বলেন, ‘রাতের বেলা ঝুঁকি নিয়েই আমাকে যেতে হয়েছে। ওই চালকের পরিচয় তো আর জানি না।’ তিনি উবারের অ্যাপে অভিযোগ করলে উবার থেকে ফোন করে অভিযোগ শুনে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা জানাবেন বলে জানান। কিন্তু এখনো তাঁকে জানানো হয়নি। এ ছাড়া বলেন, উবারের সঙ্গেও যোগাযোগের কোনো উপায় নেই।
রাইড শেয়ারিং সেবা যখন চালু হয়, তখন এ–সংক্রান্ত কোনো নীতিমালা ছিল না। চালুর কয়েক দিনের মধ্যে সরকার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে উবারকে অবৈধ ঘোষণা করে। অবশ্য চাহিদার কথা চিন্তা করে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সরকার নীতিমালা করা উদ্যোগ নেয়। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ‘রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা-২০১৭’ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। সেখানে অনুচ্ছেদ চ–এর ৮ নম্বরে বলা হয়েছে, রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কলসেন্টার সপ্তাহে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকতে হবে। কিন্তু উবারের কোনো কলসেন্টারই নেই এ দেশে।
এ ব্যাপারে উবারের কাছে জানতে চাইলে লিখিত বক্তব্যে উবার জানায়, কলসেন্টারের ব্যাপারে তারা কোনো মন্তব্য করবে না।
বাকি অভিযোগগুলোর বিষয়ে উবার বলে, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তাদের কাছে অ্যাপের মাধ্যমে লিখিত অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দেন। এ ছাড়া উবার জানায়, যাত্রী প্রয়োজনে বাংলাদেশ সরকারের জরুরি সেবা ৯৯৯–এর কল করে সাহায্য নিতে পারেন।
সিএনজি এর বেশি ভাড়ার দৌরাত্মে অনেকে ভরসা খুজেছিলেন উবার, পাঠাও এর মতো সার্ভিস গুলোতে। তবে কিছু দিন যেতে না যেতেই ভরসাস্থল হয়ে গেছে ঠুনকো। শীঘ্রই পদক্ষেপ নেয়া না হলে অন্যান্য অনেক সার্ভিসের মতো ফলশূন্য হয়ে পড়বে উবার।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ মোঃ মোস্তফা কামাল
Leave a Reply