সারাদেশ ডিজিটাল হলেও তিনি হাজী সাহেব এনালগেই বিশ্বাসী । কারণ ,ডিজিটাল মেশিনে পেট্রোল বা ডিজেলে ভেজাল বা মাপে কারচুপি করা যায় না । মান্দাত্বা আমলের মেশিনে অনায়াসেই পরিমাণে কম দেয়া যায় ।সেকেলে যুগে কেরোসিন, পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল বিক্রি করা হত পোয়া বা সের মেপে। যুগের বিবর্তনে এসে এখন আর পোয়া বা সের মাপা তেল বিক্রির দিন নেই। এরপরে আসে এনালগ পেট্রোল পাম্প। বর্তমানের ডিজিটাল পেট্রোল পাম্পের ব্যবহার। কিন্তু হাজী রফিকুল ইসলাম বলছেন , ,ডিজিটালের চাইতে এনালগই ভালো ।
নাটোর শহরের প্রাণকেন্দ্র মাদ্রাসা মোড়ে প্রশাসনের নাকের ডগায় র্দীঘদিন ধরে রহমান ফিলিং সেন্টার পেট্রোল পাম্পের বিরুদ্ধে এনালগ পদ্ধতি ব্যবহার করে অভিনব পদ্ধতিতে ভোক্তাদের সাথে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে । সরজমিনে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে । রবিবার (২৬) মে একজন শিক্ষক তার মটরবাইকের জন্য পেট্রোল নিতে গিয়ে এধরণের প্রতারণার শিকার হয়ে বিষয়টি গণমাধ্যমের নিকট তুলে ধরেন।মোঃ শামসুল ইসলাম নামের এই শিক্ষকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে শহরের মাদ্রাসা মোড়ে গিয়ে এই প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ে। এখানে যে মেশিন থেকে ভোক্তাদেরকে পেট্রোল দেয়া হয় তা মান্দাত্বা আমলের সেটা স্বাভাবিক ভাবে কাজ করেনা। এটিকে ইচ্ছাকৃতভাবে টেপার্ড’ করা হয়েছে।
কিন্তু তেল সেই পরিমানে বের হয় না।পুরো নাটোর জেলায় যখন প্রতিটি পেট্রোল পাম্প ডিজিটাইলড মেশিন বসানো হয়েছে । তখন রহমান ফিলিং সেন্টার এনালগ মেশিনে পেট্রোল ও ডিজেল বিক্রয় করা হচ্ছে । কারণ, এনালগ পদ্ধতিতে চুরি করা সহজ । এ ব্যাপারে শামসুল ইসলাম জানান, শনিবার আমি গিয়ে ২ শত টাকার পেট্রোল ভরার জন্য বলি। কাউন্টারম্যান আমাকে তেল দিলে আমার কাছে কেমন সন্দেহ হয়। আমি ওদের পা¤েপর এনালগ মেশিনটির কাছে গিয়ে খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করি। তখন দেখতে পাই ওখানের ডিসপ্লেতে যে সংখ্যা দেখায় সেটা সঠিক না। আমাকে সর্বোচ্চ ১শত ৭০ টাকার পেট্রোল আমার বাইকের দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ সময় আমি আমার ক্রয়কৃত পেট্রোলের ডিজিট উল্লেখ করে রশিদ চাইলে কাউন্টারম্যান না দেবার জন্য বিভিন্ন তালবাহানা করে এবং বলে ১০০/২০০ টাকার পেট্রোলের আমরা রশিদ প্রদান করিনা ।
আমি ডিজিটাল মেশিন কেন ব্যবহার করা হয় না এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন মালিক জানে । আমরা জানি না । ব্যাংক কর্মকর্তা নাজমুল আহসান শাওন অভিযোগ করে বলেন, আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম এর মালিকানাধীন রহমান ফিলিং সেন্টার থেকে নিয়মিত পেট্রোল কিনতাম । ভেজাল পেট্রোলের কারণে আমার বাইকের কারবোরেটর নষ্ট হয়ে যায় । শুধু শাওন ই নয় ব্যবসায়ী মজিদুর রহমান, রিপ্রেজেন্টিভ কায়সার মাহমুদ,ঠিকাদার মইন আহম্মেদ,যুবলীগ কর্মী নাসির হোসেন জানান ,তাদের বাইকেই রহমান ফিলিং সেন্টার থেকে পেট্রোল কিনে ক্ষতি হয়েছে । কারণ, ময়লা মিশ্রিত পেট্রোলের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে । তাছাড়া পেট্রোল পাম্প প্রতিষ্ঠার পর থেকে একই তেলের ট্যাংকার তারা ব্যবহার করছে ।
পেট্রোলের গাদ জমে থাকা তেলের কারণে বাইকের ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । শহরের মাদ্রাসা মোড় , ভবানীগঞ্জ মোড় ,চকরামপুর এলাকার বেশ কয়েকজন বাইকার জানান, ভেজাল পেট্রোল বিক্রির জন্য আমরা রহমান ফিলিং সেন্টার থেকে তেল কিনিনা । বাসার কাছের ফিলিং ষ্টেশন থাকার পরও হরিশপুর , ষ্টেশন , তেবাড়িয়া ও দিঘাপতিয়া থেকে পেট্রোল কিনে নিয়ে আসি । জানা গেছে, প্রতি লিটারে ৫০ থেকে ১০০ মিলিলিটার পেট্রোল, ডিজেল কম দেয়। সেকেলে পোয়া বা সের মাপার জন্য একটু আধটু কম দেয়ার বা চুরি করার অভিযোগ ছিল এবং দিতো । এখন সেসব ঝামেলা থেকে রেহাই পাওয়ার কথা কারণ এখন ডিজিটাল সময়ের ডিজিটাল পেট্রোল পা¤প। কিন্তু ডিজিটাল সময়ে এনালগ মেশিনে তেল চুরির ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে রফিকুল ইসলাম । তাই এনালগ মেশিন পরিবর্তন করতে তারা চায় না । মহিউদ্দিন শেখ নামে এক ট্রাক চালক জানালেন সেই এনালগ চুরির কথা। তিনি জানান, পেট্রোল পাম্প থেকে শনিবার দুপুর ১২ টায় ২২ শত টাকায় সাড়ে ৩২ লিটার ডিজেল নিয়েছি।
লিটারে কতটুকু পাই তা পরীক্ষার জন্য ১ লিটার মাপের বোতলে নিয়ে দেখতে চাইলে তারা আমাকে দেখায়নি। তাছাড়াও পেট্রোল পাম্পটি প্রতি লিটারে ১২০মিলিলিটার কম দেয় বলে জানা গেছে। প্রতি লিটারে যদি ১২০ মিলিলিটার পেট্রোল, ডিজেল কম দেয়া হয় তাহলে পাম্পটি প্রতিদিন গড়ে কত হাজার লিটার তেল বিক্রি করে। তাহলে কত লিটার তেল সে চুরি করলো। কত জনকে ঠকানো হলো। এ ভাবনাতো কখনো কেহ ভাবেনি। সরজমিনে শনিবার গিয়ে ১ লিটারের বোতলে তেল নিয়ে মোটর সাইকেলে দেবার কথা বললে কর্মচারীরা অপারগতা প্রকাশ করেন। আমরা এখান থেকে বোতলে তেল দেই না। কেন দেন না জানতে চাইলে তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেন, কি কারণে দেইনা সেটা আপনাদের কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে? পেট্রল পাম্পে গিয়ে বললেন আপনার বাইকের ট্যাঙ্ক ফুল করে দিতে। পাম্পে কর্মী হাসিমুখে এসে আপনার নির্দেশমত কাজ করল।
কিন্তু বিল হাতে নিয়ে দেখলেন, আপনার বাইকের ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি পরিমাণ তেলের দাম লেখা আছে কাগজে! এমন ঘটনা মোটেও কাল্পনিক নয়; খোদ নাটোর শহরের এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন আশিক মাসুদ নামের এক বাইক ব্যবহারকারী। ‘আজ শহরের হরিশপুর থেকে ‘হোন্ডা লিভো’ বাইকটি নিলাম। শোরুম থেকে যখন বাইকটি নেই, ফুয়েল খুবই সামান্য ।ইচ্ছা ছিল, ষ্টেশনের ফ্রেন্ডস পেট্রোলিয়াম এজেন্সি পাম্প থেকে তেল নেওয়ার; কিন্তু অতদুর এই সামান্য তেলে যেতে পারব কিনা সন্দেহ ছিল। আবার কানাইখালীতে শিউলী অটোজে গিয়ে আনুষাঙ্গিক জিনিস গুলা কেনার জন্য আসতে হবে সব ভেবে বন্ধু বলল, সামনে মাদ্রাসা মোড়ে একটা পাম্প আছে ঐখান থেকে তেল ভরে নেই। গিয়ে দেখলাম, পেট্রল পাম্পের নাম ‘ রহমান ফিলিং সেন্টার”। লোকটাকে বললাম ট্যাঙ্ক ফুল করে দিতে। যখন ফুল করে দিল তখন দেখি ১০.৫ লিটার বিল এসেছে। অথচ ‘হোন্ডা লিভো’র এর ফুয়েল ধারণক্ষমতা ৮.৫ লিটার! হোন্ডা শোরুমে ফোন করে ক্রস চেক করে নিলাম। তারাও বলল, রিজার্ভ সহ লিভোর সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ৮.৫ লিটার।
মানে ৮.৫ লিটার তেলে ২ লিটার তেলের ঘাপলা! এত পুকুরচুরি না, একদম সাগরচুরি। আমি বললাম, এত হল কেন? আপনারা কী করেন? এইভাবে চুরি করেন আপনাদের কেউ কিছু বলে না সেখানে উপস্থিত অন্য একজন বাইকার ভাই বলল, তার বাইকের ধারণ ক্ষমতা ১৩-১৪ লিটার (ঠিক মনে পড়ছে না) তার ফুল করতে ১৬ লিটারের বেশি লাগে! কথা শুনে পাম্পের কর্মচারীরা হাসে। বলে, ‘এভাবেই সবাই নেয়।’ বুঝলাম এদের বলে কিছু হবে না। এদের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারব না জানি, কিন্তু ‘লেখার মাধ্যমে বাইকার বন্ধুদের সতর্ক করতে পারি। নিঃসন্দেহে বলা যায় এদের মিটার টেম্পারিং করা এবং পরিমাণে অনেক কম তেল দেয়। এইটা একটা তেল চোর পাম্প। ভেজাল ও ওজনে কারচুপি করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম । দিনে দুপুরে পুকুর চুরি করছে । শত শত মানুষের অভিযোগ এই রহমান ফিলিং সেন্টারের বিরুদ্ধে ।
অদ্যবদি সেখানে কোন ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হয় নাই। এ কারণে বেপরোয়া পেট্রোল পাম্প মালিক হাজী রফিকুল ইসলাম । ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে পেট্রোল পাম্পটির তেল মেপে দেখা উচিত বলে মনে করেন সাধারণ গ্রাহকেরা। গ্রাহকদের পক্ষ থেকে অতি সত্বর ভ্রাম্যমাণ আদালত কার্যক্রম পরিচালনা করার অনুরোধ জানান । এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে শহরের সচেতন মহল । এব্যাপারে সেন্টারের সত্বাধিকারী আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন ,ফিলিং স্টেশনে সরাসরি এসে আলাপ করার কথা বলেন। আগামীকাল নিজে এসে পেট্রোল মেপে দেখে দেখে যেতে বলেন । ভোক্তাদের পেট্রোল কম দেওয়া বা ভেজাল তেল বিক্রির অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন । তিনি বলেন ,মেঘনা কোম্পানী থেকে পেট্রোল নেয় । মাঝে মাঝে তেল নিয়ে অভিযোগ আসে । আমি নিজেই ব্যবহার করি সমস্যা হয়না । এখানে উল্লেখ্য যে , মেঘনা পেট্রোলিয়াম এজেন্সি থেকে নাটোরের আরোও অনেকে পাম্প পেট্রোল নিলেও কারো তেল নিয়ে কোন অভিযোগ নেই ।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
খবরটি যদি গুরুত্বপুর্ন মনে হয় তাহলে লাইক, কমেন্টস, শেয়ার করুন
Leave a Reply