রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বলেছেন, পতিত সামরিক স্বৈরাচারী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের চিকিৎসার জন্য কোনও টাকা নেই এ কথা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। কেন-না এরশাদ অঢেল টাকার মালিক। তিনি যে কত টাকার মালিক তার কোনও হিসেব নেই।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) জাতীয় সংসদে এরশাদের আর্থিক অবস্থা নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব সংসদ সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গার দেয়া বক্তব্যের প্রেক্ষিতে দৈনিক জাগরণকে ড. মেহবাহ কামাল এ মন্তব্য করেন।
ড. মেসবাহ কামাল বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালে এরশাদের বড় বড় আর্থিক দুর্নীতির কথা সবাই জানে। সেই সব দুর্নীতির বিচার এখনও হয় নাই। কয়েকদিন আগে এরশাদ ৬০ কোটি ঢাকার সম্পদ স্ট্রাস্টে দান করেছেন। তার আত্মীয়-স্বজন এবং দলের নেতারা দুর্নীতির মাধ্যেমে অনেক টাকা-পয়সার মালিক হয়েছেন। তারা যে কেউ ইচ্ছে করলে এরশাদের চিকিৎসার খরচ চালাতে পারেন। কিন্তু তা না করে তারা এখন আর্থিক অভাব-অনটনের কথা বলে ‘সাধু’ সাজবার চেষ্টা করছেন। এটা একটা রাজনৈতিক প্রহসন।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ‘ছেড়া গেঞ্জি ও ভাঙা স্যুটকেস’ এর কথা বলে তাকে ‘সাধু’ বানাবার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু শাক দিয়ে মাছ ঢেকে রাখা যায়নি। এখন এরশাদকে দুর্নীতির দায় থেকে মুক্ত করার জন্য ‘প্রহসন’ নাটক উপস্থাপন করা হচ্ছে। এটা সবাই বোঝে-জানে। এসব কথা বলে জনগণকে ধোঁকা দেয়া যাবে না।
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের অবস্থা ‘জমে-মানুষে’ টানাটানি উল্লেখ জাতীয় পার্টির মহাসচিব সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গা সংসদে বলেছেন, ‘আজকে উনি (এরশাদ) মৃত্যুশয্যায় কিন্তু উনার চিকিৎসার জন্য যে টাকার প্রয়োজন সেটার সংস্থান এখন পর্যন্ত আমরা করতে পারি নাই। আমরা উনাকে যে চিকিৎসার জন্য বাইরে নিয়ে যাবে সেই অবস্থাও উনার তো নাই।’
গত এপ্রিলে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিজের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি ট্রাস্ট গঠন করে দান করেছেন। এরশাদের স্থাবর-অস্থাবর সহায় সম্পতির মধ্যে রয়েছে- রংপুরের বাড়ি, রংপুরের কোল্ড স্টোরেজ, প্রেসিডেন্ট পার্কের ফ্ল্যাট, গুলশানের দুটি ফ্ল্যাট, প্রায় ১০ কোটি টাকার এফডিআরসহ প্রায় ৬০ কোটি টাকার সম্পত্তি। এরশাদ এখনও ইউনিয়ন ব্যাংকে একজন পরিচালক।
গত সাধারণ নির্বাচনে হলফনামায় এরশাদ তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ১ কোটি ৭ লাখ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার ৩৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬ টাকা জমা রয়েছে। বিভিন্ন শেয়ারে তার বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৪ কোটি ১০ হাজার টাকা। তার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ও এফডিআর ৯ কোটি ২০ লাখ টাকা; ডিপিএস ৯ লাখ টাকা।
এরশাদ হলফনামায় উল্লেখ করেছেন- গুলশান ও বারিধারায় তার দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার দাম এক কোটি ২৪ লাখ টাকার কিছু বেশি। এর বাইরে ৭৭ লাখ টাকা দামের একটি দোকান রয়েছে তার।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ থেকে সুস্থতা নিয়ে লড়াই করতে হচ্ছে ৯০ বছর বয়সী সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধান এরশাদকে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বপ্লতার সমস্যা ছাড়াও লিভারসহ আরও নানা জটিলতাও ভুগছেন তিনি। নির্বাচনের আগে সিঙ্গাপুরে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আসার পর থেকে বাসায় থাকছিলেন তিনি। দলীয় কর্মসূচিতেও যাচ্ছিলেন না।
বুধবার (২৬ জুন) আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে শুক্রবার (২৮ জুন) সকালে জানিয়েছেন তার সহোদর, জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য জি এম কাদের।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply