মুহাম্মাদ শাহিদ ইমামঃ-আল্লাহ তাআলা মানুষকে দুই ভাগে সৃষ্টি করেছেন। পুরুষ আর নারী। এভাবে সৃষ্টি করা আল্লাহ তাআলার হিকমত ও কল্যাণ-জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। তবে আল্লাহ তাআলা কাউকে শুধু কন্যা সন্তানই দান করেন। আবার কাউকে পুত্র সন্তান। কাউকে আবার পুত্র ও কন্যা উভয়ই দান
করেন। কাউকে কাউকে আবার কোনো সন্তানই দান করেন না। এ বণ্টনও আল্লাহ তাআলার বিশেষ হিকমত ও কল্যাণ-জ্ঞানের ভিত্তিতেই হয়। এদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- يَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ الذُّكُورَأَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَإِنَاثًا وَيَجْعَلُ مَنْ يَشَاءُ عَقِيمًا. তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান
করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা করে দেন বন্ধ্যা। -সূরা শুরা (৪২) : ৪৯-৫০ অর্থাৎ তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা
আরো পড়ুনঃ বাবুগঞ্জে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে চান শেরে বাংলা পদক প্রাপ্ত শহিদুল ইসলাম মল্লিক।
তাকে করে দেন বন্ধ্যা। তার না পুত্র সন্তান জন্ম হয়, না কন্যা সন্তান। শত চেষ্টা-তদবির করলেও তার সন্তান হয় না। এ সবই আল্লাহ তাআলার বিশেষ হিকমত ও কল্যাণ-জ্ঞানের ভিত্তিতেই হয়ে থাকে। যার জন্য তিনি যা উপযোগী মনে করেন তাকে তা দান করেন। কন্যা সন্তানও আল্লাহ তাআলার নিআমত। পুত্র সন্তানও আল্লাহ তাআলার নিআমত। কন্যা সন্তানেরও প্রয়োজন আছে, পুত্র সন্তানেরও প্রয়োজন আছে। পুরুষ মহিলার মুখাপেক্ষী, মহিলা পুরুষের
মুখাপেক্ষী। আল্লাহ তাআলা স্বীয় বিশেষ হিকমতে পৃথিবীতে এমন এক জীবনব্যবস্থা দান করেছেন যেখানে উভয়েরই প্রয়োজন রয়েছে। উভয়েই একে অপরের মুখাপেক্ষী। উভয়ের সৃষ্টি ও জন্মগ্রহণ আল্লাহ তাআলার বিশেষ হিকমত ও কল্যাণ-জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। যখন আমরা নিজেদের অবস্থার পর্যালোচনা করি, তখন কিছু মুসলমানকে দেখতে পাই, যখন পুত্র সন্তান জন্মলাভ করে খুব আনন্দ প্রকাশ করেন। উৎসাহের সাথে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও প্রিয়
মানুষদেরকে ‘ছেলে হওয়ার’ খবর জানান। খুশিতে মিষ্টি বিতরণ করেন। খুব গুরুত্ব ও জাকজমকের সাথে আকীকার আয়োজন করেন। সব জায়গায় ‘ছেলে হওয়ার’ আলোচনা করেন এবং তার লালনপালনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। ছেলে সামান্য অসুস্থ হলেই দৌড়ে কখনো ডাক্তারের কাছে যান। কখনো হাসপাতালে কখনো কবিরাজের কাছে। কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণে অসন্তুষ্ট হওয়া অনেক মানুষই কন্যা সন্তান জন্ম নিলে কোনো খুশি প্রকাশ করে না। কারো সাথে ‘মেয়ে হওয়ার’ কথা আলোচনা করা হয় না। আর যদি কেউ জিজ্ঞাসাও করে বসে, তবে কোনো উত্তর দেওয়া হয় না। আর যদি বলেও তবে খুবই নিচু
আওয়াজে, একেবারে অসহায় হয়ে বলে- ‘আমার মেয়ে হয়েছে’। অনেক সময় কন্যা সন্তান হওয়ার কারণে স্বামী তার স্ত্রীর উপর অসন্তুষ্ট হয়। স্ত্রীর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু মানুষের তো এটুকু বুঝ থাকা দরকার যে, এ মহিলার ইচ্ছাধীন কী আছে? না পুত্র সন্তান ভূমিষ্ট করা তার ইচ্ছাধীন, না কন্যা সন্তান। তার ইচ্ছাধীন তো কিছুই নেই। বরং এসব তো আল্লাহ তাআলার হিকমত ও কল্যাণ-জ্ঞানের বিষয়। আর তিনিই তো ¯্রষ্টা। তিনি ছেলে দান করতে চেয়েছেন, ছেলে হয়েছে, মেয়ে দান করতে চেয়েছেন, মেয়ে হয়েছে। সুতরাং স্ত্রীর উপর অসন্তুষ্ট হওয়া এবং তার সাথে কথা বন্ধ করে দেওয়া কতটা
বাড়াবাড়ি! অনেক মানুষ এমন আছেন, তাদের যদি কন্যা সন্তান হয়, তারা বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজন থেকে লুকিয়ে চলাফেরা করে, যেন কারো সাথে সাক্ষাৎ হলে তারা আবার এ প্রশ্ন না করে বসে তোমার ঘরে কী হয়েছে? আর এ উত্তর দিতে হয়, আমার ঘরে কন্যা সন্তান হয়েছে। কন্যা সন্তান হলে তালাকের ধমকি এ ধরনের ঘটনাও শুনেছি, কারো এক-দুটি কন্যা সন্তান হওয়ার পর স্বামী তার স্ত্রীকে এ কথা বলে দিয়েছে, যদি এবারও তোমার মেয়ে হয় তাহলে
তোমাকে তালাক দিয়ে দিব। নাউযুবিল্লাহ কেমন ধৃষ্টতা ও বাড়াবাড়ি! যেন কন্যা সন্তানের স্রষ্টা এই নারী নিজে!! পুত্র বা কন্যা হওয়া যেন তার ইচ্ছাধীন!!! মোটকথা, মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও কিছু মানুষ এমন আছে, যারা মেয়ে সন্তান হওয়ার কারণে অসন্তুষ্ট হয়। একে নিজের জন্য কলঙ্ক মনে করে। অপমানের কারণ মনে করে। আর ছেলেকে সম্মান ও গৌরবের কারণ মনে করে। ছেলে হলে খুশি হয়, আনন্দ প্রকাশ করে, আর মেয়ে হলে করে না। কোনো মুমিনের জন্য এ
ধরনের কাজ সম্পূর্ণ নাজায়েয ও গোনাহের কাজ। এমনকি আল্লাহ তাআলার হিকমত ও কল্যাণ-জ্ঞানের উপর আপত্তি করার নামান্তর। এটি জাহেলী যুগের কাফিরদের কর্মপন্থা কুরআনে কারীমে এ কাজকে কাফিরদের কাজ বলে উল্লেখ করেছে। ইসলামপূর্ব জাহেলী আরবে নিয়ম ছিল, যদি তাদের কন্যা জন্মলাভ করত, তাহলে তারা কন্যা হওয়াকে নিজের জন্য অমঙ্গল ও অপমানের কারণ মনে করত। সন্তান জন্মের কিছুদিন পূর্ব থেকেই তারা মানুষের আড়াল হয়ে যেত, মানুষের কাছ থেকে লুকিয়ে বেড়াতো যে, জানা নেই আমার ঘরে কী সন্তান জন্মলাভ করবে। পরে যদি ছেলে সন্তান হতো এটাকে তার জন্য সম্মানের
বিষয় মনে করত। আর যদি মেয়ে সন্তান হত তাহলে তারা সেটাকে অমঙ্গল ও অপমানের কারণ মনে করত। আল্লাহ তাআলা সূরায়ে নাহলে তাদের বর্ণনা এভাবে দিয়েছেন- وَ اِذَا بُشِّرَ اَحَدُهُمْ بِالْاُنْثٰی ظَلَّ وَجْهُهٗ مُسْوَدًّا وَّ هُوَ كَظِیْمٌ یَتَوَارٰی مِنَ الْقَوْمِ مِنْ سُوْٓءِ مَا بُشِّرَ بِهٖ اَیُمْسِكُهٗ عَلٰی هُوْنٍ اَمْ یَدُسُّهٗ فِی التُّرَابؕ اَلَا سَآءَ مَا یَحْكُمُوْنَ তাদের কাউকে যখন কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তার মুখম-ল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনোস্তাপে ক্লিষ্ট হয়। তাকে যে সুসংবাদ দেয়া
হয়, তার গ্লানী হেতু সে নিজ সম্প্রদায় হতে আত্মগোপন করে; সে চিন্তা করে যে, হীনতা সত্ত্বেও সে তাকে রেখে দিবে, না মাটিতে পুঁতে দিবে। লক্ষ্য কর, সে কত নিকৃষ্ট সিদ্ধান্ত স্থির করেছিল। -সূরা নাহল (১৬) : ৫৮-৫৯ কন্যা সন্তান ‘সুসংবাদ’ লক্ষ্য করুন, আয়াতে কন্যা সন্তানের জন্মের সংবাদকে ‘সুসংবাদ’ বলা হচ্ছে। তাদের জাহেলী কর্মকা- ও মানসিকতার শুধু নিন্দাই করা হয়নি বরং তারা যেটাকে দুঃসংবাদ মনে করছে সেটাকে ব্যক্তই করা হয়েছে ‘সুসংবাদ’ বলে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
খবরটি যদি গুরুত্বপুর্ন মনে হয় তাহলে লাইক, কমেন্টস, শেয়ার করুন
Leave a Reply