বাংলাদেশের পর্যটক স্থানের মধ্যে শীর্ষেই অবস্থান কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের। রূপ-রস- প্রকৃতির লীলাভূমি এই কক্সবাজার। পাহাড় ও সমুদ্রবেষ্টিত কক্সবাজার যেন শিল্পীর রঙের তুলিতে আঁকা কোনও ক্যানভাস। বিশ্বের অন্যান্য সমুদ্র সৈকতের তুলনায় রূপে ও দৈর্ঘ্যে এগিয়ে কক্সবাজার।
কিন্তু এবার এখানে প্রত্যাশিত বিদেশি পর্যটকের দেখা নেই। তাদের উপযোগী বিনোদনের সুযোগ না থাকাই এর কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পর্যটন মৌসুম ছাড়াও প্রতি বছর ঈদ ও বিভিন্ন উৎসবে কক্সবাজারে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় থাকে।
এবারের ঈদেও বিশ্বের দীর্ঘতম এই সমুদ্র সৈকতে ছিল একই চিত্র। তবে বিদেশি পর্যটক সমাগম হাতেগোনা। অথচ গত কয়েক বছরে কক্সবাজারে গড়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক মানের বেশ কয়েকটি হোটেল ও রিসোর্ট। তবুও বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা দিনে দিনে কমছে।
কক্সবাজারে প্রত্যাশিত বিদেশি পর্যটক না থাকা প্রসঙ্গে পর্যটননির্ভর ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে যেমন উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে, কক্সবাজারে তা নেই। এখানে থাকার জন্য হোটেল-মোটেল সব রয়েছে। কিন্তু বিদেশিদের উপযোগী বিনোদন নেই, যেমন- সাগরপাড়ে সূর্যস্নান ও কোলাহলহীন ঘুরে বেড়ানোর পরিবেশে।
বিদেশি পর্যটকদের জন্য কক্সবাজারে বেড়ানোর কোনও ধরনের গাইড না থাকাও সমস্যা মনে করছেন কক্সবাজার হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম সিকদার। তিনি মনে করেন, বিদেশি পর্যটকরা যেমন বিনোদনে অভ্যস্ত তা এখনও কক্সবাজারে গড়ে ওঠেনি।’
সী-গাল হোটেলের সহকারী ম্যানেজার নূর-এ আলম মিথুন বলেন, ‘বিদেশি পর্যটকরা সূর্যস্নানে অভ্যস্ত। কিন্তু কক্সবাজারে তেমন পরিবেশ না থাকায় তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।’ তার মন্তব্য, কক্সবাজারে বিদেশি পর্যটক বাড়ানোর জন্য সৈকতকে পরিচ্ছন্ন ও হকার মুক্ত রাখার পাশাপাশি সরকারের এক্সক্লুসিভ জোনের প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা উচিত।
বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করতে টেলিভিশন, অনলাইন, ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কক্সবাজার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান। তার কথায়, ‘বিশ্বের অন্যান্য সৈকতের মতো কক্সবাজারের সৌন্দর্য তুলে ধরতে হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।’
এদিকে বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে পর্যটন শিল্প বিকাশে অনেক মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজারে বিদেশি পর্যটক সমাগম বাড়াতে রয়েছে ব্যাপক পরিকল্পনা। টেকনাফের সাবরাং এক্সক্লুসিভ পর্যটন, নাফ ট্যুরিজম, ১২০ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতের মেরিন ড্রাইভ রোডকে ঘিরে ১০টি আলাদা জোন তৈরির কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, এসব প্রকল্পের কাজ শুরু হবে শিগগিরই।
এসব তথ্য জানিয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (পর্যটন ও প্রটোকল) এস এম সরওয়ার কামাল বলেন, ‘বিদেশি পর্যটকদের সুবিধার্থে আলাদা বিনোদন জোন গড়ে উঠলে আমাদের এখানে তাদের আগমন বাড়বে।’
পর্যটক স্থান গুলো আমাদের দেশের সম্পদ। আমাদের উচিৎ এই স্থানগুলো নিজেদের উদ্যোগে এবং সচেতনতার সঙ্গে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। তবেই এতে বিদেশী পর্যটক আকৃষ্ট হবে। পাশাপাশি আমাদের আয় হবে বৈদেশিক মুদ্রাও।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ ও এস
Leave a Reply