ভারত শাসিত কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দিত সংবিধানের যে ৩৭০ অনুচ্ছেদ, তা বিলোপের একদিন পরেও ঐ এলাকা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। রাজ্যের টেলিফোন, মোবাইল এবং ইন্টারনেটের সংযোগ রবিবার সন্ধ্যায়ই বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় এবং সেগুলো এখনও ঠিক করা হয়নি। কাশ্মীরের রাস্তায় টহল দেয়ার জন্য নেমেছে ৮ হাজার সেনা।
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা সরিয়ে নেয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু এমন ঘোষণায় সেখানকার মানুষ কী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে – সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি। স্থানীয় নেতাদের এরই মধ্যে আটক করা হয়েছে। ভারত শাসিত কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরের বিবিসি সংবাদদাতা সোমবার (৫ আগস্ট) দিল্লির প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হন। তিনি বলেন, ‘রাজ্যের অন্যান্য অংশে কী হচ্ছে তা কেউ জানে না – আমরা কারো সঙ্গে কথাও বলতে পারছি না। মানুষ ভীষণ চিন্তিত – তারাও জানে না আসলে এখন কী হচ্ছে এবং কী হতে যাচ্ছে।’
ভারতের অন্যান্য স্থানে থাকা কাশ্মীরিরা তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না এবং সে বিষয়ে তাদের শঙ্কার বিষয়ে জানিয়েছেন। দিল্লিতে থাকা এক ছাত্র জানিয়েছেন যে তিনি স্থানীয় পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন – কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। অনেক কাশ্মীরি মনে করেন, সংবিধানের যে ৩৭০ অনুচ্ছেদ কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দিত – সেটিই ছিল রাজ্যটির ভারতের অংশ থাকার পেছনে প্রধান যুক্তি।
অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপের মাধ্যমে দিল্লির সঙ্গে কাশ্মীর অঞ্চলের সম্পর্কের যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপরিবর্তনীয়। অনুচ্ছেদ ৩৭০ কাশ্মীর রাজ্যকে বিশেষ ধরণের স্বায়ত্বশাসন ভোগ করার সুযোগ দিত যার ফলে তারা নিজস্ব সংবিধান, আলাদা পতাকা এবং আইন প্রণয়নের অধিকার রাখতো – যদিও পররাষ্ট্র বিষয়ক সিদ্ধান্ত, প্রতিরক্ষা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। যার ফলে, জম্মু ও কাশ্মীর নাগরিকত্ব, সম্পদের মালিকানা এবং মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত আইন নিজেরা তৈরি করার ক্ষমতা রাখতো। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মানুষকে জম্মু ও কাশ্মীরে জমি কেনা এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করা থেকেও বিরত রাখতে পারতো ঐ অনুচ্ছেদের বদৌলতে।
ভারত এবং পাকিস্তান দুই দেশই সম্পূর্ণ কাশ্মীরের অধিকার দাবি করলেও দুই দেশই রাজ্যটির কিছু নির্দিষ্ট অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ভারতের শাসনের বিরুদ্ধে কাশ্মীরে অনেকদিন ধরেই বিদ্রোহ হয়ে আসছে যার ফলে এখন পর্যন্ত বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
ভারতের সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অনুচ্ছেদ ৩৭০ এর বিলোপের ঘোষণা দেয়ার কয়েকদিন আগে থেকেই কাশ্মীর উপত্যকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সংসদে ঘোষণা দেয়ার কয়েকদিন আগে ঐ অঞ্চলে অতিরিক্ত দশ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়। সেই সপ্তাহের শেষ দিকে মোতায়েন হয় আরো ২৫ হাজার সেনা। পর্যটকদের ঐ এলাকা ছেড়ে যেতে বলা হয়, হিন্দু তীর্থযাত্রীদেরও নির্দেশ দেয়া হয় ঘরে ফিরে যেতে। স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং কোন পরিকল্পনা সম্পর্কে কোন ইঙ্গিতও দেয়া হয়নি।
স্থানীয়রা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে কয়েকমাসের খাবার মজুদ করে রাখেন। সব ধরণের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে ধারণা করে পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য স্যাটেলাইট ফোন বরাদ্দ করা হয়। রোববার (৪ আগস্ট) রাতে দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রীকে গৃহবন্দী করার সময়ই সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। সে সময় থেকে ঐ অঞ্চল কার্যত পুরো বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সেখান থেকে কোনো কিছুরই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ঘোষণার পর অতিরিক্ত সেনাও মোতায়েন করা হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা কখন ঠিক হবে, সেবিষয়ে কোনো ইঙ্গিত দেয়া হয়নি। তবে স্থানীয়ভাবে পাওয়া খবর থেকে জানা যাচ্ছে যে সাধারণ মানুষকে ঐ অঞ্চলে প্রবেশ করতে বাধা দেয়া হচ্ছে না।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply