বাজারে আমরা দু-রকমের কুমড়ো দেখতে পাই-লাল বা হলুদ কুমড়ো আর সাদা চাল কুমড়ো। দামে অপেক্ষাকৃত কম হলেও দু ধরনের কুমড়োই গুণের আদার। যদিও বলা হয় ‘কুষ্মান্ডম কোমলম বিষম’ অর্থাৎ কাঁচা কচি কুমড়ো বিষের সমান এবং পুরনো পাকা কুমড়োই ভাল তবুও কাঁচা কুমড়োরও গুণ কিছু কম নেই। আজকাল ডাক্তারি মতে হলুদ রঙের ফল, হলুদ রঙের তরকারি বেশি করে খেতে বলা হয় কারণ এগুলোতেই আছে বেশি মাত্রায় স্বাস্থোর পক্ষে প্রয়োজনীয় ভিটামিন। অন্যান্য তরকারি বা শাক সবজির তুলনায় সস্তা বলে সকলেই অনায়াসে কুমড়ো খেতে পারেন এবং স্বাস্থোর পক্ষে ও উত্তম।
চাল কুমড়ো পুষ্টিকারক। রক্তের দোষ অর্থাৎ রক্তবিকার দূর করে, বায়ুর প্রকোপ কমিয়ে দেয়। কচি কুমড়ো শীতল ও পিত্তনাশক। তবে মাঝারি মাপের কাঁচা কুমড়োকে কফকারক বলা হয়েছে। বড় পাকা কুমড়ো শীতল নয়, তবে যদি একটু সোডা বা নুন মিশিয়ে সেদ্ধ করে খাওয়া যায় তাহলে খিদে বাড়িয়ে তোলে অর্থাৎ জঠরাগ্নি প্রদীপ্ত করে, হজম করা যায় তাড়াতাড়ি, মূত্রাশয় পরিষ্কার করে, মানসিক ব্যাধি সারায় এবং শরীরের আর ও অনেক দোষ দূর করে। পাকা চাল কুমড়োর বীজ জোলাপের কাজ করে।
পাকা লাল কুমড়োর তুলনায় চাল কুমড়োর অনেক বেশি ভেষজ গুণ আছে। চাল কুমড়ো তাড়াতাড়ি হজম হয় অর্থাৎ লঘুপাক, মল ও মূত্র নিঃসারণে সাহায্য করে। কচি চাল কুমড়ো পিত্ত নাশ করে। মাঝারি চাল কুমড়ো অর্থাৎ যা বেশি কচি বা পাকা নয় খেলে কফ দূর হয়। পাকা চাল কুমড়ো খিদে বাড়িয়ে তোলে, কোষ্ঠ পরিষ্কার করে, বীর্যবর্ধক, হার্টের পক্ষে ভাল, মনোবিকার দূর করে, তৃষ্ণা দূর করে, অরুচি নাশ করে, বাত, পিত্ত, কফ দূর করে। চালকুমড়ো বহুমূত্র রোগ বা ডায়বেটিসের এবং অশ্মরী অর্থাৎ পাথরি রোগের মহৌষধ। চাল কুমড়োর বীজ থেকে যে তেল বের করা হয় সেই তেলও পিত্তনাশক, শীতল, চুলের বৃদ্ধির পক্ষে ভাল তবে গুরুপাক ও শ্লেষ্মাকারক। চাল কুমড়োর লতা পাতার ও শর্করা ও পাথরি নাশক গুণ আছে। চালকুমড়োর শাকও রুচি বাড়িয়ে দেয়।
চাল কুমড়ো হল পাণ্ডু রোগ বা জনডিসের সবচেয়ে সস্তা ও সুলভ ওষুধ। চাল কুমড়োর টুকরো রোদ্দুরে শুকিয়ে গুঁড়ো করে খেলে বা টাটকা চাল কুমড়োর তরকারি রান্না করে খেলে জনডিস তাড়াতাড়ি সেরে যায়। এ ছাড়া চাল কুমড়োর মোরব্বা বা পেঠা ও কবিরাজি মতে তৈরি অবলেহ খেলেও উপকার পাওয়া যায়।
সুস্থ থাকতে চালকুমড়োঃ-
১। কুমড়ো বা চাল কুমড়ো খেলে পরিশ্রম করবার ক্ষমতা বেড়ে যায় শরীর পুষ্ট হয়।
২। এই সবজি বলকারক, পুষ্টিকর, ফুসফুস ও ভাল লাগে। চাল কুমড়োর বীজ কৃমি নাশ করে।
৩। দু-চার চা চামচ চাল কুমড়োর রস বের করে নিয়ে তাতে চিনি মিশিয়ে খেলে অম্বল বা অজীর্ণ রোগ সারে।
৪। মৃগী ও উন্মাদ রোগের পক্ষে ও এটি উপকারী।
৫। চাল কুমড়োর রস একটু চিনি ও জাফরানের সঙ্গে পিষে খেলে এই সব রোগে উপকার পাওয়া যায়।
৬। কোনো কোনো চিকিৎসকের মতে যক্ষ্মা, অর্শ গ্রহনী একটানা পেটের অসুখ প্রভৃতি অসুখেও চালকুমড়ো খেলে উপকার হয়।
৭। ডায়বেটিসে চালকুমড়োর রস খাওয়া অতি হিতকর। চাল কুমড়োর মোরব্বা, হালুয়া, অবলেহ ও চা কুমড়োর বীজের লাড্ডু অনেক রোগ সারিয়ে তোলে।
৮। চালকুমড়োর মোরব্বা নিয়মিত খেলে মাথা গরম হওয়া কমে, মাথা ঘোরা সেরে যায়, উন্মাদ রোগ সারে এবং খুব ভাল ঘুম হয়।
৯। চালকুমড়োর অবলেহ তিন মাস ধরে নিয়মিত খেলে মুখমণ্ডলে একটা তেজস্বী ভাব আসে, হজম শক্তি বাড়ে। এ ছাড়া ও এই অবলেহ খেলে পিত্তজ্বর, তৃষ্ণা, শরীর জ্বালা করা, দুর্বলতা, গা বমি করা বা বমি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, হার্টের গোলমাল, ক্ষয়রোগ, গলা ভেঙে যাওয়া, স্ত্রীরোগ সারে।এই অবলেহ খুব পুষ্টিকর। নিয়মিত খেলে শরীরে বল হয়। বিশেষ করে শিশুদের ও বৃদ্ধদের পক্ষে শীতকালে তিন মাস ধরে এটি খাওয়া খুবই ভাল। এতে হার্ট ও ফুসফুস ভাল থাকে। মেধারও পুষ্টি হয়। সকালে ও সন্ধ্যেবেলায় এক টেবিল চামচ করে খেলেই উপকার হবে।
১০। কুমড়োর পাকা বীজের শাঁস পিষে নিয়ে ঘিয়ে ভেজে চিনিতে পাক করে লাড্ডু তৈরি করে প্রতিদিন নিয়মিত খেলে এনার্জি বাড়ে এবং অত্যাধিক পরিশ্রম করবার জন্যে যে দুর্বলতা আসে তাও দূর হয়। এখানে চাল কুমড়োর মোরব্বা ও অবলেহ কী ভাবে বাড়িতে তৈরি করা যায় তা বলা হল।
চাল কুমড়োর মোরব্বা :-
একটা পাকা পুরনো শাঁসালো চালকুমড়ো নিন। ছাল ছাড়িয়ে ও বীজ ফেলে দিয়ে ভেতরের নরম অংশ ছোট ছোট টুকরো করে কাটুন। প্রতিটি টুকরো কাঁটা দিয়ে ভাল করে বিঁধে নিন। ফুটন্ত জলে সেদ্ধ করে নিন। সেদ্ধ হয়ে গেলে জল ঝরিয়ে কাপড়ের ওপর পেতে রাখুন-যাতে আর একটুও জল না লেগে থাকে। তার পরে কাপড় দিয়ে প্রতিটি টুকরো মুছে নিন।
অল্প জলে চালকুমড়োর টুকরোর ওজনের দু গুণ চিনি দিন। রস তৈরি করে ঘন করে নিন। চালকুমড়োর টুকরো ওই রসে ফুটিয়ে নিন। এলাচের গুঁড়ো দিয়ে নামিয়ে নিন। ঠাণ্ডা হলে কাচের বোয়ামে ভরে রাখুন। প্রতিদিন সকালে নিয়মিত একটি বা দুটি টুকরো করে খান-অন্যান্য ব্যাধির সঙ্গে যদি আপনার প্রস্রাব কম হওয়া থাকে তাও সেরে যাবে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply