কামরান আহমেদ রাজীব কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃকুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় গত বছরের ৩০ জুলাই তারিখে খুন হয় অটো রিক্সা চালক আল আমিন। তার মৃত্যুর পর থেকেই মৃত্যুর ঘটনাকে নিয়ে সৃষ্টি হয় ধোঁয়াশা। স্থানীয় সংবাদ কর্মীগণসহ কেউই বলতে পারছেননা এই মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য কি ছিল? নিহতের স্ত্রী স্মৃতি খাতুনের দিকেই ছোটে প্রথম সন্দেহের তীর। মামলায় এজাহার নামীয় আসামী হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। মামলার বাদী আল আমিনের পিতার অভিযোগ তার পুত্রবধূ অন্যান্য অজ্ঞাতদের সহযোগিতায় হত্যা করেছে তার পুত্রকে।
পুলিশ রিমান্ডে স্মৃতি খাতুন হত্যার সাথে তার দায় কোনভাবেই স্বীকার করেনি। স্মৃতি খাতুন জেল হাজতে থাকলেও হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত আটক নেই আর কোন আসামী। এমতাবস্থায় স্মৃতি খাতুনই যে, তার স্বামীকে হত্যা করেছে এই কথা বলতে গেলে তার জন্য লাগবে যথেষ্ট প্রমান। যেহেতু প্রত্যক্ষদর্শী কোন সাক্ষীর উদয় এখনো ঘটেনি তাই রহস্য ঘুরপাক খেতে খেতে তা যেন লাটিমের মতই ঘুরতে শুরু করেছে এখন। এমতাবস্থায়, হত্যাকান্ডের প্রকৃত রহস্য উন্মোচনে যেনতেন প্রকারের অনুসন্ধান রহস্যের ভেদ খুঁজে পেতে কার্যকরী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। নিবিড় ও আন্তরিক অনুসন্ধানে এই প্রতিবেদক চেষ্টা করছেন ঘটনার পরম্পরা বিশ্লেষন করে প্রকৃত হত্যাকারীদের মুখোশ উন্মোচনের। প্রথমেই এখানে যে প্রশ্নটি উঠবে তা হ’ল স্ত্রী স্মৃতি খাতুন কেন ও কি কারনে তার স্বামীকে হত্যা করবে? জগত সংসারে বিবাহিত স্বামী একজন নারীর সবথেকে প্রাণাধিক ব্যক্তিত্ব। তাহলে তার মৃত্যু কামনা করে স্মৃতি খাতুনের কি লাভ? তাহলে কি স্মৃতি খাতুন তার স্বামীকে হত্যা না করেই বিনা দোষে স্বামী হত্যার দায় কাঁধে নিয়ে জেলের ঘানি টানছেন। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে স্মৃতি খাতুনের বক্তব্যই অনুসন্ধানের জন্য সর্বাধিক গুরুত্ব বহন করে। কিন্তু স্মৃতি খাতুন বর্তমানে অন্ধকার কারা প্রকোষ্ঠে থাকায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ আপাততঃ সংবাদ মাধ্যম কেন পুলিশের হাতেও আর নেই।
ইতিমধ্যে রিমান্ডে এনে স্মৃতি খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে পুলিশের তরফ থেকে। কিন্তু তাতে এই মামলার রহস্যভেদ তো হয়ইনি বরং আরো জটিল ও আপাতঃ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই আসুন এবার আমরা স্মৃতি খাতুনের চরিত্র, পারিবারিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট ও ঘটনার পরম্পরা বিশ্লেষন করে কিভাবে আল আমিনকে মারা হয়েছিল সেই রহস্য উন্মোচনের পথে হাটি। স্মৃতি খাতুন আল আমিনের প্রথম স্ত্রী হলেও আল আমিন কিন্তু স্মৃতি খাতুনের প্রথম স্বামী নয়।
বুঝতেই পারছেন স্মৃতি খাতুনের পূর্বে একজন স্বামী ছিল। শুধৃ স্বামীই নয় সেই ঘরে তার এক সন্তানও আছে। পূর্বের স্বামীকে ছেড়ে সে আল আমিনের প্রেমে পড়ে অতঃপর তার হাত ধরে ভেড়ামারা কাচারীপাড়া নিবাসী স্বামী আবিরকে ছেড়ে আসে সে। কন্যা আফিয়া (৬) হয়ে পড়ে মাতৃ স্নেহহীন। এখানে একটি প্রশ্ন সামনে আসে তা হলো, সন্তানের জন্য যে মায়ের মমতা প্রশ্নবিদ্ধ সেই নারী আচরণগত দিক দিয়ে কেমন বৈশিষ্টের ধারক হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। হত্যা মামলার আসামী স্মৃতি খাতুন এখন পর্যন্ত যে সমস্ত ভাষ্য দিয়েছেন তা বিশ্লেষন করলে স্ববিরোধিতা ও একটি বক্তব্যের সাথে আরেকটি বক্তব্যের সাংঘর্ষিকতা সৃষ্টি করে। যেমন স্মৃতি খাতুন বলেছেন তার স্বামী বাথরুমের ঝরনার সাথে ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আবার এও বলেছেন ষ্ট্রোক করে মারা গেছে। যার কোনটিই ময়নাতদন্ত পরবর্তী ভিসেরা রিপোর্ট সমর্থন করেনি। হত্যাকান্ড পরবর্তীকালে স্মৃতি খাতুন বললেন, তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া চলছিল। কিন্ত ঝগড়াটি আসলে কোন বিষয়টিকে কেন্দ্র করে হচ্ছিল তা অজানা থেকে গেছে।
মৃত্যুর কারন নির্ণায়ক ডাক্তারী পরীক্ষায় শ্বাসরোধ করে হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন এসেছে। এখন প্রশ্ন হলো কিভাবে আল আমিনের শ্বাসরোধ করা হয়েছিল। গলায় দড়ি বা অন্য কোন কিছু দিয়ে শ্বাস রোধ করার মত কোন আলামত খালি চোখে পাওয়া যায়নি। তাহলে কিভাবে আল আমিনকে শ্বাস রোধ করা হয়েছিল? শ্বাস রোধ করে হত্যা করার পদ্ধতি অনুসরনের কারনেই আল আমিন বাঁচার জন্য চিৎকার করতে পারেনি। আর তাই তার গোঙানির শব্দ ঘরের চার দেয়ালের বাইরে যায়নি। আর্ত চিৎকারও কেউ শুনতে পায়নি। হত্যাকান্ডে অংশ নেয়া লোকজন দীর্ঘ দিনের পরিকল্পনা মাফিক যে এই হত্যান্ডটি ঘটিয়েছে তার প্রমান হত্যার আলামত গোপন করার চেষ্টা এবং হত্যার পরে এটিকে হত্যা নয় মৃত্যু বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা লক্ষ্যনীয়। এমতাবস্থায়, ময়না তদন্ত রিপোর্টই অনুসন্ধানের একমাত্র দিশারি হতে পারে।
যাতে জখমের কলামে ঘাড়ের অভ্যন্তরভাগে চারটি স্মল ব্রুজ পাওয়া গেছে বলে স্পষ্টত উল্লেখ আছে। ব্রুজ ইংরেজি শব্দ এর অর্থ চূর্ণ, থ্যাতলানো বা ছিদ্র জাতীয় ক্ষত। তাহলে এখানে এই সিদ্ধান্তে আসার একটি সুযোগ পাওয়া যায়, আর তা হলো আল আমিনের ঘাড়, শ্বাস যন্ত্র এ চামড়ার অভ্যন্তরে জখমের চিন্হ পেয়েছিলেন ময়না তদন্তকারী ডাক্তার। যা বাইরে থেকে দৃশ্যতঃ অনুধাবন করা যায় নি।
লাশ ব্যবচ্ছেদের সময় আল আমিনের কন্ঠনালী আটকানো ছিল মর্মে ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে লক্ষ্য করা যায়। আর এই প্রকারেই আল আমিনকে হত্যা করা হয়েছে। আর ঘটনার সময় স্মৃতি খাতুন ঘটনাস্থলে ছিল এটা দিবালোকের মত স্পষ্ট। এখন প্রশ্ন স্মৃতি খাতুন নিজেই তার স্বামীকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নাকি নিয়োজিত খুনীদের কাজে সহযোগিতা করেছিলেন? জানতে চোখ রাখুন প্রতিবেদকের পরবর্তী প্রতিবেদনে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ জয় রহমান
Leave a Reply