বাংলাদেশের শহর থেকে গ্রামে কিছু মানুষ কে দেখা যায় ঝড়ে পড়া বা কাটা চুল কিনতে। বিশেষ করে তারা মেয়ের ঝড়ে পড়া চুল বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিনে থাকে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন গড়ে উঠেছে বিউটি পার্লার,এসব বিউটি পার্লারে গিয়ে অনেক মেয়েই চুল কাটে,সেই সাথে দেশের অলি-গলিতে সেলুন তো রয়েছেই। এ সকল বিউটি পার্লার ও সেলুন গুলোর ফেলনা চুল থেকে আসছে কোটি টাকা।
কাটা চুলে ব্যবসা শুধুমাত্র দেশের ভিতরে হচ্ছে তা নয়,এসব চুল বিদেশে রপ্তানি করে কোটি কোটি বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যূরো জানিয়েছে বিভিন্ন দেশে কাটা চুল রপ্তানি করে গত অর্থ বছরে আয় হয়েছিল ১ কোটি ৯০ লাখ ডলার বা ১৫০ কোটি টাকা।
রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকা ধানমন্ডীর একটি পুরোনো বিউটি পার্লার লি। সেখানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বেলার ১১ টার পর বেশ কয়েক জন নারী লি বিউটি পার্লারে সেবা নিতে আসলেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশ ই চুল কাটালেন। কাস্টমারদের চুল কাটার পর কিছু ক্ষণ পর পর পরিচ্ছন্নতা কর্মী এসে মেঝে ঝাড়ু দিয়ে এসব চুল নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এসব চুল যাচ্ছে কোথায়?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লি বিউটি পার্লারের হিসাব বিভাগের পরিচালক বাদল শিমশাং জানান, “কাটা চুল কিছুদিন আগ পর্যন্ত বস্তায় ভরে কিনে নিয়ে যেত একদল লোক। তবে এখন আর ছোট চুলের চাহিদা নেই। বড় চুল কেউ কাটলে পার্লারের মেয়েরা সেগুলো সংরক্ষণ করেন এবং বিক্রি করেন।”
আগে শুধু গ্রামে বাড়ি বাড়ি থেকে চুল সংগ্রহ করা হতো কিন্তু এখন শহরের অলি গলির বাসা বাড়ি থেকেও সংগ্রহ করা হয়।রাজধানীর কলাবাগান এলাকার এক নারী বলেন, মেয়েদের ঝড়ে পড়া চুল নিয়ে যায় ফেরিওয়ালারা, তার বিনিময়ে মেলে অন্যকিছু।
“ফেরিওয়ালা আইসা চুল চায়। তারপর ক্লিপ, সেফটিপিন, স্টিলের বাটি, চামচ এগুলা দেয়।”
তবে বাদ নেই ছেলেদের সেলুনও। কিন্তু সেখানে খুব একটা বড় চুল পাওয়া যায়না তবু সেখান থেকেও চুল সংগ্রহ করার জন্য ঘোরাফেরা করে ফেরিওয়ালারা, জানান বেশ কয়েকটি সেলুনের নাপিত।
তবে বাংলাদেশে মূলত এই ধরনের চুলের বেশিরভাগ সংগ্রহ করা হয় বিউটি পার্লার থেকে এবং বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে।
রাজধানী ঢাকার খিলগাঁওয়ের রেলগেট সংলগ্ন একটি বাড়িতে হেয়ারি নামে উইগ তৈরির কারখানা রয়েছে।
এই কারখানার উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউর রহমান ২২ বছর আগে শুরু করেছিলেন এই ব্যবসা। এক সময় তিনি দোকানে দোকানে গিয়ে ফ্যাশন ডলের মাথায় উইগ বসানোর জন্য সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতেন। আর এখন তার কাছে প্রতিদিনই কেউ না কেউ আসছেন উইগের খোঁজে।
মতিউর রহমান বলেন, “এখন বিভিন্ন বয়সের মানুষেরা আসছেন নিজেদের মাথার উইগ বা পরচুলা তৈরির জন্য। কেউ চাকরির ইন্টারভিউ দেবেন বা বিয়ের পাত্রী দেখতে যাবেন, আবার কেউ টেলিভিশনে খবর পরবেন এমন অনেকে নিচ্ছেন উইগ। এছাড়া দেশের বাইরে থেকে তাদের কাছে অর্ডার আসছে।”
কাটা চুল কেজি প্রতি তিন-চার কিংবা ৫০০০ টাকাতেও বেচা-কেনা চলছে। তবে চুলের আকার হতে হবে আট ইঞ্চি লম্বা।
বর্তমানে কোনও কোনও কোম্পানি এই চুল আইল্যাশ বা চোখের পাপড়ি তৈরিতে ব্যবহার করছে।
আর বিভিন্ন বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা চুল প্রক্রিয়াজাত করা ছাড়াও চলে যাচ্ছে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে। শত-কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আসছে ফেলনা এসব এসব চুল রপ্তানি করে। ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি এ ধরনের চুল যাচ্ছে ভারতে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply