রাসূল (সাঃ) এর বদ’দোআঃ
হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এক ব্যক্তি একখানা চিঠি দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন এবং তাকে বলে দিলেন, এ চিঠিখানা বাহরাইনের গর্ভনরের কাছে নিয়ে যাবে।
বাহারাইনের গর্ভনর ঐ চিঠিখানা পারস্যের বাদশা খসরুর নিকট পাঠিয়ে দিলেন। সে ঐ চিঠি পড়ে তা টুকরা টুকরা করে ফেলল। এ ঘটনা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদের উপর বদ’দোআ করলেন, তারাও যেন অনুরূপ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে ভেঙ্গে যায়।
ধর্ম বুঝে ইসলাম গ্রহণ করাঃ
হাদীসঃ হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একবার মসজিদে নববীতে রাসূলেপাক (সাঃ) এর দরবারে উপস্থিত ছিলাম। হঠাৎ এক ব্যক্তি উটের পিঠে আরোহণ করে সেখানে আসলেন। সে উটটিকে মসজিদের পাশে বসালেন, তার পর তার দু’পা বেধে দিলেন।
অতঃপর উপস্থিত লোকদেরকে লক্ষ্য করে বললেন তোমাদের সাথে “মুহাম্মদ” (সাঃ) কে? সে সময় নবী করীম (সাঃ) উপস্থিত সাহাবাদের মধ্যে টেক লাগিয়ে বসা ছিলেন। তখন আমরা উক্ত আগন্তুক ব্যক্তিকে বললাম, আমাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ব্যক্তি যিনি টেক লাগিয়ে বসা আছেন তিনিই সে ব্যক্তি। তখন ঐ ব্যক্তি বললেন। হে ইবনে আবদুল মোত্তালিব।
তখন হজুর (সাঃ) বললেন! আমি তোমার উত্তর দিচ্ছি। তারপর আগন্তুক ব্যক্তি বলল, আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করব, এতে আপনি মনে কষ্ট নিবেন না। উত্তরে রাসূলেপাক (সাঃ) বললেন, তুমি যা জিজ্ঞেস করতে চাও তা জিজ্ঞেস কর। তারপর লোকটি বলল, আমি আপনাকে আপনার এবং আপনার পূর্ববর্তী ব্যক্তিদের প্রভুর নামে জিজ্ঞেস করছি।
মহান আল্লাহ কি আপনাকে সকলের নবী করে পাঠিয়েছেন? হুজুর (সাঃ) বললেন, হ্যাঁ আল্লাহ আমাকে নবী করে পাঠিয়েছেন? তারপর লোকটি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন। আমি আপনাকে আল্লাহর কসম করে বলছি। মহান আল্লাহ কি আপনাকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার আদেশ করেছেন? উত্তরে হুজুর (সাঃ) বললেন হ্যাঁ।
লোকটি আবার মহান আল্লাহর নামে কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করল মাহে রমজানের রোজা রাখার জন্য মহান আল্লাহ আপনাকে আদেশ করেছেন। উত্তরে রাসূলেপাক (সাঃ) বললেন, হ্যাঁ। তিনি আমাকে রমজানের রোজা রাখার আদেশ করেছেন। লোকটি আবার বলল, আমি আপনাকে আল্লাহর নামে কসম দিয়ে বলছি।
আল্লাহ কি আপনাকে আদেশ করেছেন, আমাদের ধনী ব্যক্তিদের থেকে যাকাত গ্রহণ করে গরীবদের মাঝে তা বন্টন করার জন্যে? উত্তরে রাসূলেপাক (সাঃ) বললেন, হ্যাঁ তিনি আমাকে আদেশ করেছেন। অতঃপর লোকটি বললেন, আপনি যা নিয়ে এসেছেন আমি তার প্রতি ঈমান আনলাম। আমি আমার গোত্রের দূত হিসেবে এসেছি। আমার নাম “যিমাম বিন সা লাবাহ” আমি “বনু সা’দ বিন বকর” গোত্রের লোক।
দু’ব্যক্তির মুক্তিঃ
হাদীসঃ হযরত আবু ওয়াবেদ লাইসী (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মসজিদে বসা ছিলেন। সাহাবায়ে কেরামগণও তার সাথে বসা ছিলেন। হঠাৎ করে তিন ব্যক্তি আগমন করলেন।
তার মধ্যে দু’ব্যক্তি রাসূলেপাক (সাঃ) এর কাছে আসলেন এবং অপর একব্যক্তি চলে গেলেন। যে দু’ব্যক্তি হুজুর (সাঃ) এর কাছে উপস্থিত হলেন তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি মজলিসের মধ্যে খালী জায়গা দেখতে পেয়ে বসে পড়লেন। আর অপর ব্যক্তি মজলিসের শেষ প্রান্তে বসে পড়লেন। আর তৃতীয় ব্যক্তি ঐ স্থান ত্যাগ করে চলে গেলেন।
অতঃপর রাসূলেপাক (সাঃ) যখন কথাবার্তা থেকে অবসর নিলেন তখন তিনি সাবাহাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, আমি কি তোমাদেরকে ঐ তিন ব্যক্তি সম্পর্কে খবর দিব না? জেনে রাখ, ঐ তিন ব্যক্তির অবস্থা হলো একজন আল্লাহর রাসূলের কাছে বসার জন্য জায়গা চেয়েছে, আল্লাহ পাক তাঁকে বসার জায়গা করে দিয়েছেন।
আর দ্বিতীয় ব্যক্তি আল্লাহর রাসূলের কাছে ভিড়ের মধ্যে আসতে লজ্জা বোধ করেছে, তাই আল্লাহ তা‘য়ালা তার প্রতি রহম করেছেন। আর তৃতীয় ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূল (সাঃ) কে অস্বীকার করেছে তাই আল্লাহ পাকও তার উপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন।
বেশি জ্ঞানী ও হেফাজতকারীঃ
হাদীসঃ হযরত আবু বকর (রা) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বিদায় হজ্জের ঘটনা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন। বিদায় হজ্জের দিন হজুর (সাঃ) উটের উপর বসা ছিলেন। এক ব্যক্তি উটের লাগাম ধরে দাড়িয়ে ছিলেন।
রাসূলেপাক (সাঃ) সাহাবাদেরকে লক্ষ্য করে জিজ্ঞাস করলেন, বলতো আজকের দিনটা কোন দিন? আমরা সবাই চুপ রইলাম, কারণ আমরা মনে করেছিলাম হয়তো হজুর (সাঃ) এদিনটির মূল নাম বাদ দিয়ে অন্য একটি নাম প্রবর্তন করবেন। অতঃপর হজুর পাক (সাঃ) বললেন, আজকে কি আরাফাতের দিন নয় কি?
আমরা সকলে বললাম জী হ্যাঁ? তারপর তিনি আবার বললেন, এটা কোন মাস? আমরা এর উত্তরে এবার ও চুপ রইলাম, কারণ আমাদের ধারণা হয়তো রাসূলেপাক (সাঃ) এ মাসটির নাম পরিবর্তন করে অন্য কোন নাম প্রবর্তন করবেন। তারপর তিনি বললেন, এটা জিলহজ্জ মাস নয় কি? আমরা সকলে বললাম জী হ্যাঁ।
অতঃপর রাসূলেপাক (সাঃ) বলেন, “তোমাদের জান, ধন-সম্পত্তি তোমাদের ইজ্জত আবরু, তোমাদের শরীরের চামড়া পর্যন্ত পরস্পরের জন্য এমনভাবে হারাম করা হয়েছে যেমন আজকের দিনটিকে এ মাসে, এ শহরের মধ্যে হারাম করা হয়েছে। সর্বস্থানে সর্বকালের জন্য হারাম ও সুরক্ষিত হিসেবে গণ্য হবে।”
আমার এ বাণী আজ যারা উপস্থিত আছে তারা যারা উপস্থিত নেই তাদের কাছে পৌছে দেবে। হয়তো এমন হতে পারে যে, উপস্থিত ব্যক্তির তুলনায় যার নিকট পৌছানো হবে সে হয়তো অধিক জ্ঞানী ও হেফাজতকারী।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এম ইউ
Leave a Reply