রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারে প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের পা হারানোর ক্ষতিপূরণ ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ করার নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও পরিশোধ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। আর সেই ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করার বিষয়ে জানতেই প্রতিষ্ঠানটির ম্যানাজারকে হাইকোর্টে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। কোর্টে বলা হয়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করলে প্রয়োজনে গ্রিন লাইন পরিবহনের সব গাড়ির চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে। সব গাড়ি সিজ করে নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা করে রাসেলকে টাকা দেওয়া হবে, আগামী ১১ তারিখের কোন টিকিট অগ্রিম বিক্রি করা যাবে না।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন। একইসঙ্গে আদালতের আদেশ পালন না করায় বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার মধ্যে পরিবহনটির ব্যবস্থাপককে তলব করেছেন আদালত।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা। অন্যদিকে, গ্রিন লাইন পরিবহনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. অজি উল্লাহ।
ওই শুনানির শুরুতে আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা আদালতকে বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের আদেশের পর গ্রিন লাইন পরিবহনের কেউ কোনও যোগাযোগ করেননি, টাকাও দেননি। তাদের মালিককে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।’
এ সময় গ্রিন লাইন পরিবহনের আইনজীবী মো. অজি উল্লাহ আদালতকে বলেন, ‘আমি সব সময় তাদেরকে আদালতের আদেশ জানিয়ে এসেছি।’ আদালত বলেন, ‘এর (গ্রিন লাইনের) মালিক কে?’ জবাবে অজি উল্লাহ বলেন, ‘মো. আলাউদ্দিন। তিনি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে রয়েছেন।’ আদালত জানতে চান, ‘কোথায় আছেন এবং কবে আসবেন?’ জবাবে আইনজীবী অজি উল্লাহ বলেন, ‘আমি জানার চেষ্টা করছি।’
এরপর আদালত বলেন, ‘ব্যবসা তো বন্ধ নেই, ব্যবসা তো চলছে? ম্যানেজারকে ডাকেন। ম্যানেজারের কাছ থেকে পজিটিভ কিছু না পেলে আমরা গ্রিন লাইন পরিবহনের সব বাস সিজ করে নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা করব। আমরা সব স্টপ করে দেব। একটা সীমা থাকা দরকার। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে হয়ে যাননি।’
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাইভেটকারচালকের ওপর দিয়ে বাস চালিয়ে দেন। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকারচালক রাসেল সরকারের (২৩) বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এর আগে গত ১২ মার্চ রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। একইসঙ্গে রাসেলের চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে বহন করতে এবং তার কৃত্রিম পা লাগানোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। পরে এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষ।
এদিকে গত ৩১ মার্চ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে গ্রিন লাইন পরিবহনের করা আবেদন খারিজ করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ জয় রহমান
Leave a Reply