জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট মামলায় খালেদা জিয়া কে দেওয়া হাইকোর্টের জামিন কে স্থগিত থাকছে। সেই সাথে তার জামিনের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের অনুমতি পেয়েছে।
আজ সোমবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন। সেই সাথে সকল পক্ষ কে জামিনের সার সংক্ষেপ জমা দেওয়ার নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে আগামী ৮ মে শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
আইনজীবীরা বলছেন, এ মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত হওয়ায় এবং আরও কিছু মামলায় তাঁর জামিন নেওয়ার প্রয়োজন থাকায় তিনি এখনই কারাগার থেকে বের হতে পারছেন না। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থ দণ্ডাদেশ দিয়ে রায় দেন বিচারিক আদালত। এরপর থেকে খালেদা জিয়া নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। রায়ের পর আপিল করে জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া, যার ওপর শুনানি নিয়ে ১২ মার্চ হাইকোর্ট চারটি দিক বিবেচনায় তাঁকে চার মাসের জামিন দেন।
খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত চেয়ে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ আলাদা আবেদন করে। শুনানি নিয়ে ১৪ মার্চ আপিল বিভাগ জামিন রোববার পর্যন্ত স্থগিত করে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে এই সময়ের মধ্যে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলেন। অন্যদিকে, স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা, যা সেদিন চেম্বার বিচারপতির আদালতে ওঠে। আদালত আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। পরে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক লিভ টু আপিল করে। এসব আবেদন গতকাল রোববার শুনানির জন্য ওঠে।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান শুনানি তে বলেন, আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত আছে, স্বল্প মেয়াদে সাজা হলে দ্রুত আপিল শুনানি করতে হবে। এই নজির তুলে ধরা হলেও হাইকোর্টের আদেশে এর প্রতিফলন হয়নি, যা আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। হাইকোর্টের আদেশে এসেছে উনি (খালেদা জিয়া) জামিনে ছিলেন। কিন্তু তিনি জামিনের অপব্যবহার করেছেন কি না, তা দেখার বিষয়। বিচারিক আদালতের অনুমতি না নিয়ে এবং অবহিত না করেই চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া দেশের বাইরে যান—বিচারিক আদালতের আদেশনামায় এর বিস্তারিত এসেছে। এর থেকে বড় অপব্যবহার কী হতে পারে? আদালতের অনুমতি ছাড়া বিদেশ যাওয়ার চেয়ে বড় অডাসিটি কী হতে পারে?
স্বাস্থ্যগত দিকের যুক্তি বিষয়ে খুরশীদ আলম খান বলেন, এ ক্ষেত্রে চিকিৎসাসংক্রান্ত কাগজ বা সনদও দেওয়া হয়নি। বয়স্ক ও নারী বিবেচনায় বিচারিক আদালত পাঁচ বছরের সাজা দিয়েছেন। একই কারণে দুবার সুবিধা পেতে পারেন না।
পূর্বের বিভিন্ন নজির তুলে ধরে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, আপিল বিচারাধীন থাকাবস্থায় হাইকোর্ট জামিন দিতে পারেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বল্প মেয়াদের সাজায় জামিন হয়েছে। ৪২৬ ধারার বিধান অনুসারে কারণ উল্লেখ করে হাইকোর্ট জামিন দিতে পারেন। এই মামলায় হাইকোর্ট কারণ উল্লেখ করে জামিন দিয়েছেন। খুব ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করতে পারেন, যদি হাইকোর্টের আদেশ ন্যায়ভ্রষ্ট হয়। তিনি বলেন, ৪৯৭ ধারায় আছে, নারী ও শিশুকে জামিন দেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে ৪২৬ ধারা একই। এটি ধারাবাহিকতা। এই আইনজীবী বলেন, স্বল্প মেয়াদে সাজা একটি দিক, আরেকটি দিক হলো আপিল। আপিলে যদি সাজা না থাকে বা কমে যায়, তখন কী হবে? এ ক্ষেত্রে ভারসাম্যের ওপর জোর দিতে হবে।
খালেদার অন্য আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মামলা বলে এর গুরুত্ব। তিনি না হলে আমরাও আসতাম না, সরকারও এত উৎসাহী হতো না। হাইকোর্টের এখতিয়ার আছে জামিন দেওয়ার।’
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply