জাতীয় নির্বাচনী বছর এটি। সিটি কর্পোরেশনও তাই যেন জাতীয় নির্বাচন এরই প্রতিনিধিত্ব করলো।
গতকাল খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জয় হয়েছে। ভোটের আগে উত্তাপ ছড়ালেও মোটামুটি গোলযোগহীনভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই নির্বাচন।
২৮৬ কেন্দ্রের ঘোষিত ফল অনুযায়ী, মেয়র পদে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক পেয়েছেন ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৯১ ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ১ লাখ ৯ হাজার ২৫১ ভোট।
ভোর রাতে সোনাডাঙ্গা এলাকার বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে স্থাপিত নির্বাচনী ফলাফল সংগ্রহ ও ঘোষণা কেন্দ্রে সর্বশেষ প্রাপ্ত ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউনুচ আলী। প্রায় ৫ লাখ ভোটারের এই সিটি করপোরেশনে মোট কেন্দ্র ছিল ২৮৯টি; অনিয়মের কারণে তিনটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হয়। এই তিনটি কেন্দ্রে সর্বমোট ভোট ৫ হাজারের কিছু বেশি।
দুই মেয়র প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান (৬৫ হাজার ৬৪০) ওই তিনটি কেন্দ্রের মোট ভোটের চেয়ে বেশি হলেও তালুকদার খালেককে বিজয়ী ঘোষণা করেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউনুচ আলী। তিনি বলেন, “তিনটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হওয়ায় আমরা কাউকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করতে পারছি না। এই ফলাফলই ঘোষিত হবে, তবে নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে।”
ভোটের হার ৬১ দশমিক ১৯ শতাংশ বলে জানান তিনি। এর মধ্য দিয়ে পাঁচ বছর পর খুলনা নগরীর মেয়রের পদে ফিরলেন বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা তালুকদার খালেক। কয়েকবারের সংসদ সদস্য ও একবারের প্রতিমন্ত্রী খালেক ২০০৮ সালে খুলনার মেয়র নির্বাচিত হয়ে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তবে ২০১৩ সালে পরের নির্বাচনে হেরে যান বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান মনির কাছে।
এবার মনিকে বাদ দিয়ে বিএনপি সাবেক সংসদ সদস্য মঞ্জুকে প্রার্থী করলেও আওয়ামী লীগ আস্থা রাখে পুরনো খালেকের উপরই। ভোটে জয়ী খালেক প্রতিদ্বন্দ্বী মঞ্জুকে নিয়ে খুলনার উন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে মঞ্জু ‘ভোট ডাকাতি’র অভিযোগ তুলে বলেছেন, এই ফল মেনে নিচ্ছেন না তিনি।
জাতীয় নির্বাচনের বছর খুলনার এই নির্বাচন ঘিরে প্রধান দুই রাজনৈতিক শিবিরেই ছিল কথার লড়াই। ফলে দলীয় প্রতীকের এই স্থানীয় নির্বাচন অনেকটা জাতীয় নির্বাচনের রূপ নিয়েছিল। ভোট শেষে বিএনপি প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, এটি ‘প্রহসনের নির্বাচন’ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো পর্যায়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভবপর নয়। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিও তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির অভিযোগকে ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি সেই সঙ্গে বিএনপিকে খুলনার ভোট থেকে ‘শিক্ষা’ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কাদের বলেছেন, “বিএনপির জন্য সামনে আরও বড় বড় হার অপেক্ষা করছে। খুলনা থেকে তাদের শিক্ষা নিতে হবে।”
নির্বাচন কমিশন বলছে, দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশে। ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদের ভাষায়, “চমৎকার, সুন্দর এবং উৎসবমুখর পরিবেশে খুলনায় নির্বাচন হয়েছে।”
বিএনপির অভিযোগ ‘সুনির্দিষ্ট নয়’ উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেছেন, “দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সুষ্ঠুভাবেই ভোট হয়েছে। কয়েকটি কেন্দ্র বন্ধ হয়েছে, সেগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা।”
ভোটকেন্দ্রগুলোতে ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের থাকতে দেওয়া হয়নি। সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে নৌকায় নির্বিচারে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তির অভিযোগও তুলেছে বিএনপি। ভোটের হার ৬০ শতাংশ নিয়ে সন্দেহও প্রকাশ করেন ফখরুল।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাশাপাশি সংসদ নির্বাচনের আগে এই ভোট কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসির জন্যও ছিল চ্যালেঞ্জের। খুলনার মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের বার্তা দিতে চাইছিল ইসিও। তবে যে প্রতিশ্রুতি ইসি দিয়েছিল, বাস্তবতায় তার কিছুটা ঘাটতি দেখছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা। তবে বিএনপি যতটা অভিযোগ করেছে, ততটা ঘটেনি বলে তাদের ভাষ্য।
ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান বলেন, তাদের পর্যবেক্ষকরা ৮০টি কেন্দ্র দেখেছেন। সেখানে ‘৩-৪টি’ কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্ট পাননি তারা। অনিয়ম হয়েছে ‘দুই-এক জায়গায়’, সেখানে ভোট স্থগিতও হয়েছে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply