ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে গত মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর)। এতে ২৬.২১ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। পরীক্ষায় ঢাকায় চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়িকা শবনম বুবলীর একমাত্র ছোট ভাই জাহিদ হাসান আকাশ সমাজ বিজ্ঞান অনুষদে ভর্তির জন্য ঘ ইউনিটে পরীক্ষা দেন। সেখানে ব্যবসায় শাখা বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। অথচ ব্যবসায় শিক্ষা শাখার এই শিক্ষার্থী বাণিজ্য অনুষদে ভর্তির জন্য দেওয়া গ ইউনিটের পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন।
গত ১২ অক্টোবর ঘ ইউনিটের পরীক্ষা নেয়া হয়। ওইদিন থেকেই এই ইউনিটের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। পরীক্ষার ১০০টি প্রশ্নের মধ্যে ৭২টি হাতে লেখা প্রশ্নের হুবহু মিল খুঁজে পেয়েছে গণমাধ্যম। বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও মিলেছে সত্যতা। এর মধ্যেই মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিক অনুষদভুক্ত ‘ঘ” ইউনিটের আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করেন উপাচার্য। পরে প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি স্বীকারও করেছে ঢাবি প্রশাসন, তবে একটু কৌশলে। তারা এটাকে প্রশ্নফাঁসের পরিবর্তে ডিজিটাল জালিয়াতি বলছেন।
মূলত, ঘ ইউনিটের ফলাফল প্রকাশের পর গ ইউনিটে পরীক্ষা দেয়া কিছু শিক্ষার্থীর দুই ইউনিটের ফলাফলের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য দেখা যায়।
দেখা গেছে, ঘ ইউনিটে সর্বোচ্চ মেধাতালিকায় থাকা একাধিক ভর্তিচ্ছু তাদের নিজের ইউনিটের পরীক্ষায় পাসই করতে পারেননি। ঘ ইউনিটে মেধাতালিকায় ১০০ ক্রমের মধ্যে থাকা ৭০ জনের বেশি শিক্ষার্থী তাদের নিজ নিজ অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হননি। অথচ কয়েক দিনের ব্যবধানে আরেক ইউনিটের পরীক্ষায় রীতিমতো ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছেন।
বুবলীর ভাই জাহিদ হাসান আকাশ গত ১৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ঢাবির গ ইউনিটের পরীক্ষায় তিনি বাংলায় পেয়েছিলেন ১০.৮ ইংরেজিতে পেয়েছিলেন ২.৪০। অথচ এই শিক্ষার্থী ঘ ইউনিটের পরীক্ষায় বাংলায় ৩০ এর মধ্যে ৩০, ইংরেজিতে ৩০ এর মধ্যে ২৭.৩০ পেয়েছেন।
ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে আসা এই শিক্ষার্থী ঢাবির গ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় সর্বমোট ১২০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছিলেন ৩৪.৩২। অথচ মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ঘ ইউনিটের পরীক্ষায় মোট ১২০ নম্বরের মধ্যে তিনি ১১৪.৩০ পেয়ে সম্মিলিত মেধাতালিকার বাণিজ্য শাখায় প্রথম স্থান অধিকার করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, গত ২০ বছরে ১২০ এর মধ্যে ১১৪.৩০ কেউ পায়নি। এছাড়া ঘ ইউনিটে বাণিজ্য শাখায় যিনি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন ১২০ এর মধ্যে তিনি পেয়েছেন ৯৮.৪০। মেধাক্রম প্রথম থেকে দ্বিতীয় এর ব্যবধানও নজিরবিহীন।
কিছুদিন আগে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বুবলী জানিয়েছিলেন, তার একমাত্র ছোটভাই জাহিদ হাসান আকাশ এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের অধীন রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের বাণিজ্য বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে ‘জিপি ৫’ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমার ছোটভাই রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে (এইচএসসি)-তে ‘জিপিএ ৫’ পেয়েছে। তোমার জন্য গর্বিত ভাইয়া। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।’
জাহিদ হাসান আকাশের ফলাফলের মতো এমন চিত্র দেখা গেছে আরো বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে।
এদিকে প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছেন প্রোক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী। আর অনতিবিলম্বে পরীক্ষা বাতিলের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের।
পরীক্ষাকালীন অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করেছে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ । আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করে ব্যাপকহারে লাভবান হওয়ার করার প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞাপন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, আমরা বলতে পারি প্রশ্নপত্র জালিয়াতি হয়েছে, ফাঁস হলে তো আমরা তা আগের দিন রাতেই বলতে পারতাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, ব্যাপকভাবে কেউ লাভবান হয়েছে তেমন কোনো প্রমাণ এখনও তদন্ত কমিটি পায়নি। কেউ অসদুপায় অবলম্বন করলে এবং তার প্রমাণ পাওয়া গেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
প্রতিকারে মঙ্গলবার বিকেল থেকে পরীক্ষা বাতিলসহ ৩ দফা দাবিতে আমরণ অনশনে বসেন ঢাবি শিক্ষার্থী আখতার হোসেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সবখানেই উঠে আসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ। ‘ঘ” ইউনিটের রেকর্ড নাম্বার পেয়ে প্রথম হওয়া ছাত্রটি পাসই করতে পারল না ‘গ” ইউনিটে। স্পষ্ট হয়ে ওঠে পরীক্ষাকালীন অনিয়ম।
আখতার হোসেন বলেন, এটা মেধাবীদের প্রতি একটা অবিচার এবং দুর্নীতিবাজ ও জালিয়াত যারা আছে তাদের স্বীকৃতি দেয়ার নামান্তর। আমি মনে করি ডিজিটাল জালিয়াতি ও প্রশ্নফাঁস শব্দ দুটি লাউ ও কদুর মতো।
বৃহস্পতিবারের মধ্যেই পরীক্ষা বাতিল না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply