সামরিক স্বৈরাচারী এরশাদ এখন বড় একা। রাজধানীর বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে বড় নিঃসঙ্গ দিন কাটছে তার। আপনজন বলতে তার সঙ্গে রয়েছে পুত্র এরিক। এই এরিকই এখন এরশাদের দিনরাত্রির সঙ্গী। এরিক ছাড়াও কয়েকজন কেয়ারটেকার রয়েছে তার দেখভালের জন্য।
বারিধারার পাশেই গুলশানের একটি বাড়িতে রওশন এরশাদের বসবাস। তবুও তিনি এরশাদকে এক নজর দেখতে যাননি। এরশাদের এই অন্তিমলগ্নেও মান ভাঙেনি রওশনের। এখনও তিনি অভিমানের খেয়ায় পাল তুলে দূরে দূরেই থাকছেন। আর বিদিশা বলছেন, এরশাদের এই চরম নিঃসঙ্গতায়ও সঙ্গী হওয়ার কোনও সুযোগ তার নেই। দূর থেকে দেখা এবং নিদারুণ কষ্ট অনুভব করা ছাড়া তার নাকি আর কিছুই করার নেই।
দলের নেতা-কর্মীরাও এখন এরশাদের খুব একটা খোঁজ-খবর রাখেন বা নেন না। এরশাদের আনুকূল্যে যারা এক সময় এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন তারাও এখন বৈরি আচরণ করেছেন। মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তার দিক থেকে। রাষ্ট্র, সমাজ, দল এবং পরিবার সবার কাছেই যেনো এরশাদের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে।
কিছুদিন আগেও সবার কাছে কতই না প্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ছিল এরশাদ। এই তো সেদিনও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে তার কাছে ধরনা দিয়েছিলেন অনেকেই। আর যখন এরশাদ সরকার প্রধান ছিলেন তখনকার কথা তো বলাই বাহুল্য। তার একক সিদ্ধান্তে দীর্ঘ ৯টি বছর পরিচালিত হয়েছে দেশ। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের আগে এরশাদ ছিলেন সেনাপ্রধান। অর্থাৎ জীবনের বেশিরভাগ সময় তার কেটেছে ক্ষমতার খুব কাছাকাছি। ছিলেন ভোগ, বিলাস, আরাম এবং আয়েশের মধ্যে।
গণঅভ্যুত্থানে পতনের পর কিছুদিন বৈরি সময় কাটালেও খুব একটা দীর্ঘ হয়নি। অল্প-সময়ের মধ্যেই তিনি ফিরে পেয়েছিলেন স্বাভাবিক জীবন ধারায়। ভোর পৌনে ৫টায় ঘুম থেকে জাগতেন। এরপর নিজ হাতেই এক কাপ চা বানিয়ে খেতেন। তারপর যেতেন জিমে।জিম শেষে নামাজ পড়তেন। তারপর নাশতা। নাশতা খেয়ে দেখতেন সিনেমা। বড়ই সমঝদার ও ভোগবিলাসি মানুষ ছিলেন তিনি। ছিলেন প্রেমিক পুরুষও। সব সময় তার চারপাশে ছিল সুন্দরী-রূপসীদের আনাগোনা। অথচ সেই এরশাদের ডানে-বায়ে এখন কোথাও কেউ নেই। এমনকি নিজের কবরের জায়গার চিন্তাও এখন তাকেই করতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে একান্ত আলাপচারিতায় দৈনিক জাগরণকে এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা বলেন, উনার (এরশাদ) শরীর খুবই খারাপ। উনার শরীর এতই খারাপ যে উনি এখন কিছুই বোঝেন না। দিন নাকি রাত— এটাই উনি বোঝেন না। অর্থাৎ উনার জীবন থেকে এখন দিন-রাত এবং ভালো-মন্দের ব্যবধান ঘুঁচে গেছে। এখন তিনি কিছুই বোঝেন না। এরিককে নিয়ে এখন তার কাটে বেলা। এরিকও বাবা ছাড়া আর কিছু বোঝে না।
এরশাদের এই নিঃসঙ্গতা বিষয়ে বিদিশা বলেন, এটা আমার জন্য ভীষণ কষ্টের। কেননা আমি উনার সঙ্গে সংসার করেছি। উনি আমার সন্তানের পিতা। আর এখন অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, দূর থেকে তার এই দূরাবস্থা দেখে আমার কষ্ট পাওয়া ছাড়া তো আর কিছু করার নেই। আমি তো মানুষ। আমি তো অন্য কোনো প্রাণী নই। ফলে মানুষ হিসেবে আমার খারাপ লাগবে এটাই স্বাভাবিক। তবে উনার কাছে থেকে যারা বিভিন্ন সময়ে নানারকম সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন- তাদের এখন উচিত এরশাদের পাশে থাকা।
বিদিশা বলেন, একজন মানুষ নিজের কবরের জায়গা নিজেই খুঁজে বেড়াচ্ছেন এটা কেন হবে। উনার কবরের জন্য তো জমির অভাব হওয়ার কথা না। তবু এটা হয়েছে— এটা বড়ই দুঃখের।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
খবরটি যদি গুরুত্বপুর্ন মনে হয় তাহলে লাইক, কমেন্টস, শেয়ার করুন
Leave a Reply