‘চল মসজিদে জামায়াতে নামাজ পড়তে’, এই স্লোগানকে সামনে রেখে চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলায় টানা ৪০দিন জামায়াতে নামাজ পড়ায় ১৭ বালককে দেয়া হয়েছে বাইসাইকেল পুরুস্কার। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী স্থানীয় খান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বাইসাইকেল বিতরণ করেন সংগঠনের অন্যতম নেতা মতলবের বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী সুমন খান।
জানা যায়, উপজেলার বাগানবাড়ী ইউনিয়নের গালিম খাঁ গ্রামে ঘোষণা করা হয়েছিল যে, যদি কোনো বালক টানা ৪০ দিন জামায়াতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে পারে, তবে তাদেরকে একটি করে বাইসাইকেল পুরস্কার দেয়া হবে।
এই ঘোষণার পর থেকেই মসজিদে জামায়াতের সাথে অনেক বালক নামাজ পড়তে শুরু করে। প্রথমে অনেক বালক মসজিদে জামায়াতে নামাজ পড়া শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত ১৭ জন বালক টানা ৪০ দিন জামায়াতে নামাজ পড়ে শর্তপূরণ করতে সক্ষম হয়।
এ ধরনের উদ্যোগ খুবই কম দেখা যায়। টানা ৪০ দিন মসজিদে জামায়াতে নামাজ পড়া স্থানীয় এই ১৭ বালককে মঙ্গলবার আয়োজক সুমন খান নিজের বাড়ি সংলগ্ন জামে মসজিদের সামনে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বালকদের হাতে পুরস্কারের সাইকেলগুলো তুলে দেন।
পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে এ সময় উপস্থিত ছিলেন মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন খান সুফল, দুর্গাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আশাদুজ্জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদ আহম্মেদ ইত্তেফাক, আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম খোকন, ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন প্রমূখ।
অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিল মতলব এগ্রো ফিশারজ।
পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে আয়োজক সুমন খান জানান, আমি এই উদ্যোগটি নিয়েছি মূলত নতুন প্রজন্ম যাতে বাজে অভ্যাসে যাতে না গিয়ে নামাজমুখী হয় সে জন্য। আমি আশাকরি আমার এই উদ্যোগ দেখে অন্য ভাইরাও উৎসাহিত হবে। এবং তাদের উদ্যোগেও আরো অনেক বালক নামাজমুখী হবে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টি করেছেন, আলো, বাতাস, পানি দিয়ে লালন-পালন করে যাচ্ছেন- সে কারণে তাঁর বান্দা হিসেবে প্রতিদিন বাধ্যতামূলক ফরজ সালাত আদায় করতে হবে। বান্দা হিসেবে দৈনিক পাঁচবার হাজিরা দেয়ার জন্য ফরজ সালাত পড়তে হবে।
ফরজ সালাতের বাইরে রয়েছে আরো অনেক ধরনের সালাত যেমন- সুন্নাত, ওয়াজিব, মুস্তাহাব, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, সুন্নাতে জায়িদাহ, চাশতের সালাত, ইশরাকের সালাত, সালাতুত তাসবিহ, সালাতুত তাওবা, তাহাজ্জুদের সালাত, ইসতিখারার সালাত ইত্যাদি। এসব সালাতের বিভিন্ন মর্যাদা রয়েছে। তবে এর মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বোৎকৃষ্ট সালাত হচ্ছে তাহাজ্জুদ। তাহাজ্জুদের নামাজ নবী করিম সা:-এর ওপর ফরজ ছিল।
উম্মতের ওপর এটি ফরজ না হলেও সব সুন্নাত নামাজের মধ্যে এটিই উত্তম। তাহাজ্জুদ অর্থ ঘুম থেকে জাগা আর তাহাজ্জুদের সময় হলো ইশার নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে তারপর অর্ধেক রাতের পর নামাজ আদায় করা। সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত থাকে। গভীর রাতে ঘুম থেকে জেগে নামাজ আদায়ে সাওয়াব বেশি।
পবিত্র মক্কা ও মদিনায় হারামাইন শরিফাইনে তাহাজ্জুদের সালাতের জন্য আজান দেয়া হয় এবং অতি গুরুত্বের সাথে আদায় করা হয়। পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে, যারা শেষ রাতে ইবাদত ও প্রার্থনা করেন তাদের প্রশংসাস্বরূপ কিয়ামত দিবসে বলবেন : ‘তারা রাতের সামান্য অংশই নিদ্রায় অতিবাহিত করে এবং রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে। (সূরা) আযযারিয়াত আয়াত (১৭-১৮)।
রাসূল সা:-কে সম্বোধন করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক আরো বলেন, ‘এবং রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদ পড়তে থাকুন। এ আপনার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, আপনার প্রভু আপনাকে মাকামে মাহমুদে অধিষ্ঠিত করবেন। (সূরা আল ঈসরা আয়াত ৭৯) তানভীরুল মিশকাত গ্রন্থের প্রণেতা ঈমান মহিউস সুন্নাহ বাগবি রা: তিরমিজি শরিফের বরাত দিয়ে উল্লেখ করেন হজরত আবু উমামাহকে সা: ফরমায়েছেন : ‘তোমরা রাত জেগে (তাহাজ্জুদ) নামাজ পড়াকে বাধ্যতামূলক করে লও।’ হাদিস নং ১১৫৭/২।
আল কুরআনের সূরা মুজাম্মিলে এর উল্লেখ করা হয়েছে ‘অবশ্য রাতে ঘুম থেকে উঠা মনকে দমিত করার জন্য খুব বেশি কার্যকর এবং সে সময়ের কুরআন পাঠ বা জিকর একেবারে যথার্থ।’ সূরা আল ফুরকান-এর ৬৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে ‘আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়।’
ইসলামের প্রাথমিক যুগে কুফর সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মুসলমানদের বিজিত হওয়ার পেছনে মূল ভূমিকা ছিল যে, তারা রাতের শেষ ভাগে আল্লাহ তায়ালার মহান দরবারে চোখের পানি ফেলতেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। ‘তারা ছিল কঠিন পরীক্ষায় পরম ধৈর্যশীল, অটল-অবিচল, সত্যের অনুসারী, পরম অনুগত। আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ উৎসর্গকারী এবং রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর কাছে ভুলত্রুটির ক্ষমাপ্রার্থী। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ১৭)
হাদিস শরিফেও তাহাজ্জুদের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মিশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থকার সুনানে আহমদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সা:কে বলতে শুনেছি। আফজালুস সালাতি বাদাল মাফরুদাতি সালাতুল লাইলি’ অর্থাৎ ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। হাদিস নম্বর ১১৬৭/২।
হজরত আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিসে রাসূল সা: ফরমাইয়েছেন, ‘আল্লাহ প্রতি রাতেই নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন যখন রাতের শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে। তিনি তখন বলতে থাকেন- কে আছো যে আমায় ডাকবে, আর আমি তার ডাকে সাড়া দেবো? কে আছো যে আমার কাছে কিছু চাইবে, আর আমি তাকে তা দান করব? কে আছো যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করব? (বুখারি ও মুসলিম)
শহরে সুন্নাহর বরাত দিয়ে মিশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থকার আবু সাঈদ খুদরি রা: বর্ণিত একটি হাদিসের উল্লেখ করেন। বলা হয়েছে, ‘রাসূল সা: ফরমাইয়েছেন তিন ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ খুশি হন (হাসেন) এক. যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের জন্য উঠেন এবং নামাজ পড়েন। দুই. জনতা, যারা নামাজের জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায়। তিন. মুজাহিদ যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায়। (হাদিস নম্বর ১১৬০/২)
উপরিউক্ত কুরআন ও হাদিসের বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, সালাতগুলোর মধ্যে তাহাজ্জুদ অতি মর্যাদাকর সালাত। এই সালাত প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীরই পালন করা উচিত। এই সালাতের মাধ্যমে হয়তো আল্লাহর নৈকট্য লাভ সহজ হবে। সৃষ্টিকর্তার সাথে যখন দূরত্ব কমে যাবে তখন সৃষ্টিকর্তা বান্দার দাবি রক্ষা করতে পারেন।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply