চলতি বছরের ডিসেম্বরেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এমন প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনা সামনে রেখে কাজ শুরু করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে ‘টেকনিক্যাল’ কোনো কারণে ডিসেম্বরে এ নির্বাচন করা না গেলে নির্বাচন হবে আগামী বছরের ১৭ মার্চের আগে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ঘোষিত ‘মুজিববর্ষ’ পালনের সুবিধার্থে এমন চিন্তা-ভাবনা করছে ইসি। ইসির নির্বাচন শাখা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল একসঙ্গে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটির ভোটগ্রহণ হয়েছিলো। এরপর ঢাকা উত্তর সিটিতে প্রথম সভা হয় ওই বছর ১৪ মে, দক্ষিণ সিটিতে ১৭ মে ও চট্টগ্রাম সিটিতে প্রথম সভা হয় ওই বছরের ৬ আগস্ট। সে হিসেবে ঢাকা উত্তরের ক্ষেত্রে এ মেয়াদ হবে ২০২০ সালের ১৩ মে পর্যন্ত, দক্ষিণে ওই বছরের ১৬ মে পর্যন্ত। চট্টগ্রাম সিটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের জুলাইয়ে। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুযায়ী, পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিন আগে যে কোনো সময় ভোট করতে হবে। এ হিসেবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে আসছে ডিসেম্বরেই ভোট অনুষ্ঠান করা সম্ভব।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার এক কর্মকর্তা জানান, ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকার দুই সিটির ভোট করতে না পারলে ইসিকে সেক্ষেত্রে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি বাদ দিয়ে মার্চে যেতে হবে। কারণ, জানুয়ারির ১ তারিখে নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে, যা চূড়ান্ত হবে ৩১ জানুয়ারি। ফলে এ সময়ে ভোট করতে গেলে নতুন ভোটারদের ভোট দেয়া না দেয়ার প্রশ্নে আইনি জটিলতার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে, ফেব্রুয়ারিতে রয়েছে এসএসসি পরীক্ষা। ফলে ডিসেম্বরে কোনো কারণে ঢাকার দুই সিটির ভোট না হলে তা মধ্য-মার্চের (১৭ মার্চ) আগে সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেবে ইসি।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. আলমগীর দৈনিক জাগরণকে বলেন, যেসব সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষের দিকে সেগুলোর বিষয়ে আমরা ফিল্ডের রিপোর্ট নিচ্ছি। এগুলোর সব রিপোর্ট পেলেই কমিশন বসবে। কমিশন সিদ্ধান্ত দিলে আমরা তা বাস্তবায়ন করব। তবে এখনও চূড়ান্ত কোনো তারিখ নির্ধারণ হয়নি।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে সিটি নির্বাচন ইভিএমে আয়োজন করার লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের আনুষ্ঠানিক পত্র পাঠানোর বিষয়টি কমিশনে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সীমানা, ওয়ার্ড বিন্যাস ও অন্যান্য বিষয়ে কোনো জটিলতা রয়েছে কি না বা তিন সিটি (ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম) নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত কি না সে বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে পত্র পাঠাতে সুপারিশ করা হয়েছে।
এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দৈনিক জাগরণকে জানান, ‘ডিসেম্বরের মধ্যেই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ভোটগ্রহণ করা যেতে পারে- এমন একটি প্রস্তাব ইসিতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।’ তবে কবে নাগাদ চিঠি পাঠানো হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সময় হলেই সবকিছু জানতে পারবেন।’
প্রসঙ্গত, ঢাকাবাসীর সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর ঢাকা সিটি করপোরেশনকে উত্তর-দক্ষিণ দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এর প্রায় ৪ বছর পর দুই সিটিতে নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই মেয়র আনিসুল হক ও মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বিজয়ী হয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।পরে ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আনিসুল হক।এর ফলে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটির উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে বিজয়ী হন ব্যবসায়ী নেতা মো. আতিকুল ইসলাম।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply