একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘অবিশ্বাস্য’ বিপর্যয়ের পর বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে বিরাজ করছে রাজ্যের হতাশা। এ অবস্থা থেকে দলকে বের করে আনতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। আপাতত দল গোছানোর লক্ষ্যে দ্রুত মূল দল পুনর্গঠন এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের কাউন্সিল করতে চাইছেন তারা। তৃণমূলের সরাসরি ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচনের পক্ষে বিএনপির হাইকমান্ড।
তৃণমূল নেতাকর্মীরা থানা, জেলা ও মহানগর পর্যায়ের নেতাদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। কর্মসূচি দিয়ে নেতারা মাঠে না থাকা, তৃণমূল নেতাকর্মীদের খোঁজখবর না রাখাসহ নানাবিধ কারণে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সর্বত্র। যার চূড়ান্ত পরিণতি এবারের নির্বাচনে দেখা গেছে।
প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের ধরপাকড় ছিল সত্য; কিন্তু এর বিপরীতে বিএনপির মেরুদণ্ডহীন সাংগঠনিক চিত্র ধরা পড়েছে সবার চোখেমুখে। কোথাও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি দলটি।
এমনকি বহু কেন্দ্রে এজেন্টেই দিতে পারেনি দীর্ঘদিন নির্বাচনী রাজনীতির বাইরে থাকা দলটি। সব মিলিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা বিএনপির।
সেই হতাশা কাটিয়ে দলকে সাংগঠনিকভাবে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দি হওয়ায় দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দল গোছানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। আগামী দিনে রাজপথের বিরোধী দল হিসেবে মাঠে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য যা করা দরকার, সেই উদ্যোগ তিনি দূর থেকে নেবেন। সে জন্য সাংগঠনিকভাবে দলকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দলের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির শূন্যপদগুলো পূরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার কারাবন্দি জীবনের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। গত ১১ মাস ধরে তারেক রহমানের নির্দেশনায় দলের স্থায়ী কমিটিই বিএনপিকে পরিচালনা করেছে। এর সমন্বয় করেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপিতে স্থায়ী কমিটি বরাবরই একটি আকর্ষণীয় ও মর্যাদাসম্পন্ন পদ। আজীবন বিএনপির রাজনীতি করা পোড় খাওয়া নেতাদের টার্গেট থাকে শেষ জীবনে হলেও স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া। দু-একটি ব্যতিক্রম বাদে এ ফোরামে সাংগঠনিকভাবে যোগ্য, পরীক্ষিত, ত্যাগী ও দলে তুলনামূলক গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদেরই স্থান হয়। তাই প্রায় সব জ্যেষ্ঠ নেতার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়া।
এ কমিটি নির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত, কর্মসূচি প্রণয়ন থেকে শুরু করে সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাজগুলো করে। স্থায়ী কমিটির সুপারিশের আলোকেই বেশিরভাগ সময় বিএনপির শীর্ষ নেতারা সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন। অন্তত খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে এমনটি হয়েছে।
বিএনপির কাউন্সিলের কথা উঠলেই অনেকে স্থায়ী কমিটির পদ বাগিয়ে নিতে নানা কৌশল ও তদবির শুরু করেন। এবার বিএনপির কাউন্সিল কবে হবে তা নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
কারাবন্দি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছাড়া জাতীয় কাউন্সিল করার কথা ভাবছে না বিএনপি। আগের কমিটি ঠিক রেখে কমিটির শূন্যপদগুলো পূরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাই দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির পাঁচটি শূন্যপদ পূরণের উদ্যোগ নিয়েছে শীর্ষ নেতৃত্ব।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ মোঃ মোস্তফা কামাল
Leave a Reply