নিজেদের কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীদের চাকরি দেওয়া ও ব্যবসায়ীদের কাছে কম দামে স্বর্ণ বিক্রির কথা বলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছিল রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে র্যাবের হাতে আটক ছয়জনের একটি প্রতারক চক্র।
বুধবার (৩ এপ্রিল) কারওয়ান বাজার র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মিডিয়া সেন্টারে মিরপুর থেকে আটক করা ভুয়া ছয় কাস্টমস কর্মকর্তা ও কর্মচারী সম্পর্কে এমন তথ্য দেন র্যাব-৪ এর অধিনায়ক চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির।
চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির বলেন, ছয় সদস্যের এই প্রতারক চক্রের প্রধান, কাস্টমস সহকারী কমিশনার পরিচয় দেওয়া নুরুল হক (৫৭)। দামি গাড়ি হাঁকিয়ে নিজের এই পরিচয়কে বিশ্বাসযোগ্য করে তুললেন এই প্রতারক। এই চক্রের বাকিরা হলেন-শেখ আলম (৪৩), ফিরোজ আলম (৫৭), মোশারফ (৫৪), মাসুদ রানা (৪৩) ও রেনু মিয়া ওরফে রনি (৩৮)।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, মাঠপর্যায়ে তাদের চক্রের দুই/একজন সদস্য আছেন। যারা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে টার্গেট ভিকটিম ও গ্রাহক চিহ্নিত করে। তারপর মানুষ অনুযায়ী কৌশল নির্ধারণ করে প্রতারণার শিকার করেন।
প্রতারণার কৌশল হিসেবে প্রতারক চক্রটি শিক্ষিত বেকারদের কাস্টমস অফিসার হিসেবে চাকরি দেওয়ার লোভনীয় অফার দেয়। এজন্য মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে চক্রটি।
একপর্যায়ে প্রতারক চক্রের পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক, নিরাপদ স্থানে কাস্টমস র্যাংক, ব্যাচ, ইউনিফর্ম পরে দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি নিয়ে গিয়ে ভিকটিমদের বিশ্বাস অর্জনে সাক্ষাৎ করা হয়। টাকার অংক নির্ধারণ হওয়ার পর নিয়োগপত্র দেওয়ার তারিখ নির্ধারণ করেন তারা। এরপরে সুকৌশলে প্রতারক চক্রটি ভিকটিমের নিয়োগপত্র হস্তান্তর করার তারিখের আগেই মোটা অঙ্কের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য করেন। টাকা হাতিয়ে নিয়ে মোবাইল ফোনে সিম বন্ধ করে আত্মগোপন করেন প্রতারক চক্রের সদস্যরা।
র্যাব-৪ এর অধিনায়ক চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির আরো বলেন, এই প্রতারক চক্র আরেকটি প্রতারণার কৌশল অবলম্বন করে। বিভিন্ন কোম্পানির ডিলারদের টার্গেট করে প্রতারণা করেন তারা।
চক্রটির বরাত দিয়ে এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, কাস্টমসের জব্দকৃত স্বর্ণের বার, বিস্কুট, জাপানিজ যন্ত্রপাতি, বিভিন্ন ধরনের সুতা, স্বর্ণের চেইন, মোবাইল ফোন, টেলিভিশন, ল্যাপটপ ইত্যাদি কম দামে বিক্রির অফার দিত চক্রটি। প্রতারক চক্রের সদস্যরা ব্যবসায়ীদের বলেতেন, মালপত্র সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে আমদানি করার কারণে কাস্টমস এগুলো জব্দ করেছে। লোভনীয় অফারে প্রলুব্ধ হয়ে সেগুলো কিনতে আগ্রহী হন ব্যবসায়ীরা।পরে পণ্য দেওয়ার তারিখ ঠিক করে এবং মূল্যের একটি অংশ অগ্রিম হিসেবে আদায় করে ভুয়া চুক্তিনামা তৈরি করা হতো। এতেই লাখ লাখ আয় হতো তাদের।
র্যাব জানায়, প্রতারক চক্রের নেতা নুরুল হকের নামে এমন প্রতারণার অভিযোগে চট্টগ্রাম ও রাজধানীতে মোট তিনটি মামলা রয়েছে। দীর্ঘ ১৫/১৬ বছর ধরে এমন প্রতারণা করে আসছেন তিনি। মঙ্গলবার (৩ মার্চ) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাবের একটি দল রাজধানীর মিরপুর থেকে তাদের আটক করে।
এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভিজিটিং কার্ড, প্রতারণায় ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয় বলেও জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply