গত বৃহস্পতিবার সংগীতাঙ্গনের কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চু সকালে নিজ বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। অসুস্থ হয়ে পড়া অবস্থায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, গান গেয়ে যেই মানুষটি সারা জীবন পার করলেন সেই মানুষটি তার নিজের ছেলেকেই তার পেশায় আসতে দেননি। অনেকেই এটা নিয়ে বেশ কয়েকবার তাকে প্রশ্ন করেছিলেন আর প্রতিবার তিনি জবাবে বলেছিলেন, ‘আমি এই পেশায় যত কষ্ট করে ঘাম ঝড়িয়ে টাকা উপার্জন করেছি, আমি চাই না আমার ছেলে এত কষ্ট করুক।
কেননা আমি বাবা হয়ে তা মেনে নিতে পারব না। তাই তাকে পড়াশোনার জন্য বাইরে পাঠিয়েছি। বলে দিয়েছি গান করবে শখে। যখন তুমি চাকরি করে বিশাল বাংলোয় থাকবে, তোমার বাসায় রুম ভরা গিটার থাকবে, তোমার বন্ধুরা আসবে তোমার গিটার বাজানো শোনার জন্য।’
এতো লম্বা ক্যারিয়ারে তার কোন বদনাম নেই বললেই চলে। ছোটদের যেমন দিয়েছিলেন ভালোবাসা। ঠিক তেমনি বড়দের দিতেন শ্রদ্ধা। বেশিভাগ সময়ে তিনি মজা করে বলতেন দুর্ণাম করলেই দুর্ণাম হবে তাই কিছু না করাটাই ভালো।
নিজেকে কখনোই গিটার বাদক মনে করেননি আইয়ুব বাচ্চু। সব সময় বলতেন আমি গিটার বাদক নই আমি গিটারের সেবক। দীর্ঘ দিনের ক্যারিয়ারে গিটারের সেবক পেয়েছেন কোটি ভক্তের ভালোবাসা।
তারপরও কোথায় যেন ছিল তার এক অপূর্ণতা। বেশ হতাশা নিয়ে তাকে একবার বলতে শোনা গিয়েছিল, সব কিছু থেকে পালিয়ে যেতে চাই অনেক দূরে।
অনেক তো করলাম আর করতে ভালো লাগছে না কিন্তু কেন এই পালিয়ে যাওয়ার ভাবনা জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, ‘হলো তো, সবই করেছি, সবাই বড় হয়েছে, চারপাশের সবাই বড় হয়েছে, এখন সবাই সেটেল। তাই এখন বর্ব মার্লির মতো হয়ে যেতে চাই।’
পরিবারের সবাইকে এক সাথে নিয়ে থাকতে চেয়েছিলাম উল্লেখ করে আইয়ুব বাচ্চু বলে ছিলেন, ‘আমার দাদা-দাদী, চাচা-চাচী সবাই এক সাথেই থাকতো। এক উঠনেই আমারা সবাই থাকতাম।
আমিও তাই চেয়েছিলাম কিন্তু আমার মনে হয় এইটা অযৌক্তিক। এখনও আমি সেকালে রয়ে গেছি। এখন পাশের বাড়িতে মানুষ থাকবে কিন্তু কেউ তার খবর জানবে না।
তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন। তবে অমর হয়ে থাকবেন তাঁর সৃষ্টিতে। কিংবদন্তীর যে মৃত্যু নেই।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ মোঃ মোস্তফা কামাল
Leave a Reply