প্রাচীনকাল থেকেই দুধ মানুষের প্রিয় পানীয়। শাস্ত্রে দুধকে বলা হয়েছে পৃথিবীর অমৃত। দুধ রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়িয়ে দিয়ে শরীরকে রোগ মক্ত রাখে। দুধে ভিটামিন সি ছাড়া শরীরের জন্যে প্রয়োজন আর সব রকমের পোষকতত্ত্বই আছে। সেই জন্যে কিছুদিন আগে পর্যন্ত দুধকে সম্পূর্ণ আহার বলে মনে করা হত। এখন যদিও দুধকে সম্পূর্ণ আহার বলে মনে করা হয় না এবং অতিরিক্ত দুধ খাওয়া শরীরের পক্ষে ভাল বলেও মনে করা হয় না, তবু দুধ যে খুবই পুষ্টিকর এ সম্পর্কে কোনো দ্বিমত নেই।
অসুস্থ লোকেদের পক্ষে এবং শিশুদের পক্ষে টাটকা গরুর দুধ খাওয়া ভাল। মায়ের দুধের পরেই সব রকমের দুধের মধ্যে গরুর দুধই শ্রেষ্ঠ। টাটকা ফোটানো দুধ সকলেই খেতে পারেন। কিন্তু যাঁদের গ্যাস হয় এবং হজমশক্তি ভাল নয় তাঁরা শুঁঠ, এলাচ, পিপুল, দারচিনি প্রভৃতি হজমকারক মশলা মিশিয়ে ফোটানো দুধ খেলে উপকার পাবেন। অসুস্থ লোকেরা যে দুধ খাবেন তা কখনোই ঘন করা উচিত নয়।
নানা রকম রোগ সারাতে ও সুস্থ থাকতে দই, ছানা, মাখন, ঘি, ঘোল ইত্যাদি সব কিছুই খাওয়া হয়। এগুলো সবই দুধ থেকে তৈরি। আমাদের অভিজাত মিষ্টিগুলো যেমন সন্দেশ রসগোল্লা, পান্ত্তয়া অবাঙালিদের কলাকন্দ, গুলাবজামুন সবই তৈরি হয় দুধ দিয়ে বা দুগ্ধজাত পদার্থ দিয়ে।
সুস্থ থাকতে দুধের প্রয়োগ:-
১। দুধ গরম অবস্থায় মন্হনী(ডাল সেদ্ধ করবার কাটা হলেও চলবে) দিয়ে একটু মন্হন করে নিয়ে খেলে হালকা হয়। এই ভাবে মন্হন করা হালকা দুধ মৈথুন শক্তি বাড়িয়ে দেয়, জ্বর সারিয়ে দেয়, বায়ু পিত্ত আর কফ নাশ করে।
২। গোরু বা ছাগলের টাটকা দুধের ফেনা ঝাগ খেলে অনেক সুফল পাওয়া যায়। এই ফেনা খুব উপকারী। অন্যান্য অনেক উপকারিতার সঙ্গে এই ফেনারও আছে মৈথুনশক্তি বাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা। পেটের অসুখ ও খিদে না হওয়া এবং পুরোনো জ্বরে উপকারী।
৩। জ্বাল দেওয়া গোরুর দুধ খেলে হেঁচকি ওঠা বন্ধ হয়।
৪। গোরুর দুধে ঘি, শুঁঠ(শুকনো আদা) কালো আঙুর মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে খেলে পুরোনো জ্বর (জীর্ণজ্বর) সেরে যায়।
৫। গোরুর দুধ গরম তাতে মিশ্রি ও গোলমরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে সর্দির উপশম হয়।
৬। একশো গ্রাম দুধে অর্ধ চামচ শুঁঠের(শুকনো আদা) গুঁড়ো মিশিয়ে আচেঁ বসিয়ে খোয়ার মতো খুব গাঢ় করে নিন। রাত্তিরে শুতে যাওয়ার আগে এর সঙ্গে চিনি মিশিয়ে খেলে পিত্ত বিকার দূর হবে।
৭। গরম দুধে চিনি মিশিয়ে খেলে শরীর পুষ্ট হয়, বল ও বীর্য বৃদ্ধি হয়।
৮। অত্যাধিক পরিশ্রমের ক্লান্তি গরম দুধ খেলে কমে যাবে। যাঁরা বেশি পরিশ্রম করেন তাঁদের জন্যে গরম দুধ হর পরম ওষুধ।
৯। দুধের খোয়ায় চিনি মিশিয়ে খেলে আধকপালে মাথা ব্যথা বা মাথা ধরা সারে।
১০। অল্প একটু গোরুর দুধ নিয়ে, তাতে পাচঁ গুণ জল মিশিয়ে জ্বাল দিন। যতক্ষণ পর্যন্ত না জল শুকিয়ে যাচ্ছে আঁচে বসিয়ে রাখুন। এই দুধ ঠাণ্ডা করে খেলে রক্তপিত্ত সেরে যাবে।
১১। গোরুর দুধে সম-পরিমাণ জল মিশিয়ে জল শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত জ্বাল দিন। এই দুধ খেলে আমাশার উপকার হয়।
১২। গরম গোরুর দুধে ঘি, চিনি বা গুড় মিশিয়ে খেলে মূত্রকৃচ্ছ্রতা(প্রস্রাব কম হওয়া) দূর হয়।
১৩। গোরুর দুধ তুলোয় ভিজিয়ে নিয়ে তার ওপর ফটকিবির গুঁড়ো ছড়িয়ে দিয়ে চোখের বন্ধ পাতার ওপর রাখলে চোখের ব্যথা সারে।
১৪। দুধের মালাই দশ মিনিট ধরে মুখে মালিশ করুন। পরে দশ মিনিট আর মুখ ধোবেন না। তার পরে বেসন দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। মুখের ত্বক উজ্জল হয়ে উঠবে।
১৫। গোরুর টাটকা দোহা দুধে একটু ঘি মিশিয়ে এবং তার সঙ্গে একটু মিশ্রি মিশিয়ে খাওয়ালে বাচ্চাদের হাম, বসন্ত, জলবসন্তর জন্যে যে জ্বর সেই জ্বরে উপকার পাওয়া যায়।
১৬। বলা হয়ে থাকে সকালে খালি পেটে অল্প গরম দুধ ধীরে ধীরে চুমুক দিয়ে খেলে শরীর পুষ্ট হয়, খিদে বাড়ে, শুক্র বৃদ্ধি হয়। দুপুরে এইভাবে দুধ খেলে খিদে বাড়ে, বল বৃদ্ধি হয়, কফ ও পিত্ত নাশ হয়, রাত্তিরেও ঠিক এইভাবেই দুধ খেলে চোখের উপকার হয়।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply